জুলাই সনদ এবং নির্বাচন

দেশ রূপান্তর রাজেকুজ্জামান রতন প্রকাশিত: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৫

রাজনীতির বাইরে কেউ নেই, রাজনীতির বাইরে কেউ থাকতে পারে না। যেমন প্রকৃতির মধ্যে থেকে বাতাসকে অস্বীকার করা যায় না, তেমনি সমাজে থেকে রাজনীতিকেও অস্বীকার করা যায় না। গ্রিকরা বলতেন, যারা রাজনীতি করে না, তারা বর্বর। এক্ষেত্রে ‘বর্বর’ বলতে যা আমাদের বোঝানো হয়েছে তা নয়। বর্বর যুগ হলো মানব ইতিহাসের একটা পর্ব। যখন সমাজ গঠনের পর্যায়ে কৃষি কাজের স্তরে প্রবেশ করছে, মাটির পাত্র নির্মাণ থেকে ধাতব দ্রব্য তৈরি, পশু শিকার থেকে পশু পালনের যুগে মানুষ প্রবেশ করেছে। এই যুগের পরেই মানুষ এসেছে সভ্যতার স্তরে। প্রকৃতির সম্পদকে শ্রমশক্তি ব্যবহার করে নিজের আয়ত্বে আনার দক্ষতা অর্জন করায় মানুষ শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চায় আগের চেয়ে সময় দিতে পেরেছে, ফলে সমাজ ও তার রীতিনীতি প্রণয়নের দিকে মনোযোগী হয়েছে। ফলে সমাজের রীতিনীতি নিয়ে না ভাবাকে বর্বর যুগের বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হতো। রাজনীতি হলো, সমাজের পরিচালিকা শক্তি। কিন্তু এই কথাটা ভুলিয়ে দেওয়ার আয়োজন চলে প্রতিনিয়ত। যে চর্চা চলছে এবং যেসব উদাহরণ তৈরি করা হয়েছে তার ফলে সাধারণ মানুষের ধারণা, রাজনীতি সম্পর্কে একদম নেতিবাচক। সাধারণভাবে জিজ্ঞেস করলে গবেষক, শিক্ষক যাদেরকে আমরা বুদ্ধিজীবী বলে থাকি তারা ছাড়া প্রায় সব মানুষই বলবেন, রাজনীতি হলো ক্ষমতায় যাওয়ার পথ। আর ক্ষমতা মানেই মনে করা হয় দুর্নীতি ও লুটপাট করা, দমন-পীড়ন চালানো, অন্যায় করা আর নিয়ম না মানার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা দেখানোর রাজনীতি থেকে মুক্তি চায় মানুষ। সে কারণেই সেনা অভ্যুত্থান নয়, গণঅভ্যুত্থানে জনতা অংশ নেয়। গণঅভ্যুত্থানে গণমানুষের আকাক্সক্ষা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল বৈষম্য থেকে মুক্তির আকুতিতে। এক বছর পর তারা চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ যেমন করছে তেমনি রাষ্ট্রক্ষমতা কীভাবে হস্তান্তরিত হবে, কার হাতে যাবে সেই প্রক্রিয়া চালুর অপেক্ষায় আছে দেশের জনগণ। 


আগামী বছরের (২০২৬ সাল) ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ,  জুলাই সনদ ঘোষণা, জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যার বিচার, সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা, নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।’ গতকাল শুক্রবার জানা গেল, চলতি বছর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হবে। আসলে নির্বাচন ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের আর কোনো সেরা বিকল্প নেই, সেটা সবাই মানেন। বেশ কিছুদিন থেকে বলা হচ্ছে, এবারের নির্বাচন হবে সেরা নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা আবারও উল্লেখ করেছেন,  এবারের নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসবের দিক থেকে, শান্তি-শৃঙ্খলার দিক থেকে, ভোটার উপস্থিতির দিক থেকে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে, সে জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করতে  সবার মানসিক প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করা হবে। নির্বাচনকে শুধু সুষ্ঠু করার জন্য প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা যেমন দরকার তেমনি দরকার টাকার খেলা, দলীয় পেশিশক্তির ব্যবহার আর ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা। ইতোমধ্যে টাকাওয়ালাদের, আগ্রহ ও তৎপরতা শুরু হয়েছে এবং এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি প্রদর্শন শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কীভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ নেবে,  তা দেখার বিষয়। নির্বাচনের প্রচারণা, নির্বাচনের দিন ভোট প্রদান, ভোট গণনা এবং ফল প্রকাশ আর নির্বাচনের পর হেরে যাওয়াদের নিরাপত্তা প্রদান করা সব মিলিয়েই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ। এসব নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। 


এবার আরও একটি বিষয় খুব উল্লেখযোগ্য তা হলো, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। করোনাকালে, বিশ্ব অর্থনীতির বিপর্যয়ের মধ্যে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলাকালে নীরবে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করেছেন যারা, সেই প্রবাসীরা ভোটে যেন অংশ নিতে পারেন সেই দাবি দীর্ঘদিনের। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই উদ্যোগ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। দেশের জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী। শ্রমশক্তির বিরাট অংশ নারী যারা ঘরে-বাইরে এমনকি দেশের বাইরেও কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত। তাদের বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার শেষ নেই। মজুরি আন্দোলন থেকে শুরু করে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সব আন্দোলনে তাই নারীরা এগিয়ে আসেন প্রাণের তাগিদে। এবারের গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সাহস জাগানিয়া। নির্বাচনে যেন তারা আড়ালে চলে না যান। বলা হয়েছে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাতে নারী ভোটারদের ঢল নামে, সেই লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে যে যুবশক্তি দেশের বর্তমান নির্মাণ করে, ভবিষ্যৎ রচনা করে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে থাকলে দেশে গণতন্ত্র চর্চা হবে কেমন করে? গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার কারণে যাদের বয়স ৩০-এর মধ্যে, তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল। এবারের নির্বাচনে সেই যুবশক্তিসহ নতুন ভোটাররা যেন স্বাভাবিকভাবে ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা একটি অন্যতম দায়িত্ব। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বলে, দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার সব কটির নেপথ্যের কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। তবে এর পাল্টা শিক্ষাও আছে। প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণকে প্রতারিত করে গায়ের জোরে যারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে এবং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে তার চূড়ান্ত পরিণতি কী হতে পারে, তা জুলাই অভ্যুত্থান দেখিয়ে দিয়েছে। ইতিহাসের বেদনাময় পুনরাবৃত্তি যেমন কেউ চায় না, তেমনি আবার ক্ষমতার মোহে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতেও কেউ চায় না। ফলে নির্বাচন হলেই যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, তা বলা যাবে না। তারপরও অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে, নির্বাচিত সরকার ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো জবাবদিহি করে এমন সরকার এবং জবাবদিহিতে বাধ্য করা যায় এমন ব্যবস্থা। ক্ষমতায় থাকলে আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা না গেলে, সংসদ আইন প্রণয়নের সংস্থার চাইতে ভাগ-বাটোয়ারার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া বন্ধ করা যাবে না। সংসদে প্রতি মিনিটে দুই লাখ টাকা খরচ করে মাত্র ১২ শতাংশ সময় কাজে লাগানো হয়, আইন নিয়ে আলোচনায়। তারপরও যে আইন প্রণয়ন করা হয়, তা যায় জনগণের বিপক্ষে। সরকারপ্রধানের প্রশংসা আর বিরোধী দলের নিন্দার খরচও দেয় জনগণ। এই খরচ শতকোটি টাকার বেশি। এসব বন্ধ হবে না জবাবদিহির ব্যবস্থা ছাড়া।.

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও