‘আমি স্বেচ্ছাচারী’
গঙ্গার জলে শব ভাসিয়া যাইতেছে। এক নহে, অনেক। এক দিন নহে, একাধিক দিন। সেই মৃতদেহ কাহাদের, বুঝিবার উপায় নাই— দীর্ঘ সময় জলে থাকায় দেহগুলিতে এমনই পচন ধরিয়াছে যে, শনাক্ত করা অসম্ভব। অনুমান, দেহগুলি কোভিডে মৃত ব্যক্তিদের। বিহার প্রশাসন দাবি করিতেছে, লাশগুলি সেই রাজ্যের নহে, উত্তরপ্রদেশ হইতে ভাসিয়া আসিয়াছে। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনও স্বভাবতই সেই বেওয়ারিশ, শনাক্তকরণের অযোগ্য লাশের মালিকানা দাবি করে নাই— এমনকি, সেই রাজ্যে বহু লাশ মিলিবার পরেও। ফলে, ‘অনুমান’ই সার। কেহ বলিতেছেন, অ্যাম্বুল্যান্সে মৃতদেহ আনিয়া সেতুর উপর হইতে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হইতেছে— সম্ভবত রাজ্যে ‘মৃতের সংখ্যা’ কমাইয়া দেখাইবার জন্য। কাহারও অনুমান, চিকিৎসার ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় মৃতদের নদীতে ফেলিয়া জীবিতরা নিজেদের বাঁচাইতে চেষ্টা করিতেছেন। কোন কারণটি সত্য, সেই জল্পনা অপ্রয়োজনীয়। নদীতে ভাসিয়া আসা মৃতদেহ বলিতেছে, দেশে যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়িয়া তোলা প্রয়োজন ছিল, ভারত তাহাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়াছে। যে দেশ মাত্র দেড় বৎসর পূর্বেও বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চরিত্র হইয়া উঠিবার খোয়াব দেখিত, সকল নাগরিককে চিকিৎসা দিবার সাধ্য তাহার এখনও হয় নাই। অথচ, সেই দেশে যে অর্থাভাব, তাহাও বুঝিবার উপায় নাই। সেই দেশে অতিমারি হানা দিবার পূর্বে কেন্দ্রীয় সরকার ৩,০০০ কোটি টাকা খরচ করিয়া মূর্তি বানাইত; অতিমারির মধ্যে ২০,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’ গড়িতেছে। নদীতে ভাসিয়া আসা পচাগলা লাশ হইতেও সরকারের এই নিষ্করুণ অবহেলার ছবিটি শনাক্ত করা যাইতেছে।