কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

৫০ বছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি

দৈনিক আমাদের সময় জাকারিয়া স্বপন প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২১, ০৮:২৩

দেখতে দেখতে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্ণ করল। তবে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির বয়স ৫০ বছর হয়নি। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে মোট ৩টি দশকে ভাগ করে দেখা যেতে পারে। তাহলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় আমাদের অবস্থান বুঝতে সহজ হবে।


নব্বইয়ের দশক : বাংলাদেশ মূলত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রবেশ করে নব্বইয়ের দশকে। এই দশকে এসে বাংলাদেশ প্রথম তার কমপিউটার গ্র্যাজুয়েট বের করতে শুরু করে। বুয়েট থেকে তখন কমপিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক বের করতে শুরু হয়। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যুক্ত হয়। সারা পৃথিবীতেও তখন পারসোনাল কমপিউটারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। বাংলাদেশেও তার ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। ৮০-এর দশকে বাংলাদেশে কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) গঠিত হলেও এর কাজে কিছুটা গতি আসে ৯০-এর দশকে এসে। তখন তারাই মূলত বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে চালিত করত। এই সময়ে বাংলাদেশে দুটি বিষয় ঘটল ক). ভি-স্যাটের মাধ্যমে অনলাইন ইন্টারনেট প্রবর্তন খ). মিলেনিয়াম পরিবর্তন (১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি)। তখন খুব স্বল্প মাত্রায় বাংলাদেশের মানুষ চড়া দামে অনলাইন ইন্টারনেট পেতে শুরু করল। পাশাপাশি পুরো পৃথিবীতে ডাটা এন্ট্রি করার বিশাল একটি বাজার তৈরি হলো, যা ভারত নিয়ে নিল। বাংলাদেশ ওই বাজারে প্রবেশ করতে পারল না। বিলিয়ন ডলারের পুরো ব্যবসাটাই চলে যায় ভারতে।


ওই দশকে বাংলাদেশ বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, যা তখন সরকার নেয়নি। তারা মনে করেছিল, সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হলে সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। আমরা যে এভাবে ভাবতে পেরেছিলাম, সেটাই একটা জাতির অনেক কিছু বলে দেয়। এতে দেশের মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝা যায়। এই মনস্তত্ত্ব নিয়ে এই দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে ভালো করবে, সেটা বোধ করি সম্ভব নয়। তথ্যপ্রযুক্তিতে যে দেশগুলো ভালো করেছে, তাদের মনস্তত্ত্ব ভিন্ন। তার সাথে আমাদের ফারাক অনেক। এতটাই ফারাক যে, আমরা সেটা বুঝতেই পারব না। বাংলাদেশে তখনো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাঁটতে শেখেনি।


একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক


এই দশকে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার কিছুটা বেড়েছিল। পুরো বিশ্বেই তখন ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। এবং ইন্টারনেটের উত্থান ওই সময়টাতেই। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৪ -এর সাথে যুক্ত হয়। তখন থেকেই মূলত বাংলাদেশ দ্রুতগতির ইন্টারনেটে পেতে শুরু করে।


এই দশকের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি ছিল ভয়েস অভার আইপি (ভিওআইপি)। পুরো বিশ্ব যখন এই প্রযুক্তিকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশ এই প্রযুক্তিকে নিষিদ্ধ করে দিল। এবং এখনো নিষিদ্ধ হয়ে আছে।


ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই প্রযুক্তিকে কাছে টেনে নিল, তখন এই প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ যুক্ত হলো না। দেশের মানুষকেও যুক্ত করল না। ইউরোপের একটি ছোট দেশ এস্টোনিয়ার ৪ জন প্রোগ্রামার তৈরি করে ফেলল স্কাইপ। এই উদাহরণটুকু এই জন্য দিলাম যে, প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত রাখলে মানুষ কতটা ক্রিয়েটিভ হতে পারে, মানুষ কতটা জ্ঞানের দিক থেকে এগিয়ে যেতে পারে সেটা বুঝানোর জন্য।


সেই স্কাইপ আমরা এখনো ব্যবহার করছি। স্কাইপ হলো একটি উদাহরণ মাত্র। কিন্তু স্কাইপের মতো এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল, যেগুলো পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশাল অবদান রেখেছে। আমরা এখন যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো, ম্যাসেঞ্জার, সিগন্যাল ইত্যাদি কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম দেখি তার গোড়াপত্তন হয়েছিল এই দশকে ভিওআইপি প্রযুক্তির মাধ্যমে। একটি প্রযুক্তিকে আটকে দিলে কী হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো এটি।


বিশ্বের অনেক দেশ তার জনসংখ্যাকে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে যুক্ত করে ফেলেছিল, যার সুবিধা তারা এখনো পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা পারেনি। সে আটকে গিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তিকে বাধা দিতে। বাংলাদেশ সেই ভিশন দেখাতে পারেনি।


একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক


খুব নির্মোহভাবে যদি বলি, তাহলে গত দশক থেকেই আসলে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির সাথে যুক্ত হতে শুরু করেছে। সরকার তার অনেক সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি এ খাতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।


গত দশকের শুরুতে ইন্টারনেটের ব্যবহার যতটা ছিল, সেটা অনেকাংশে বেড়েছে দশকটির শেষ ভাগে এসে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৫-এর সাথে যুক্ত হয়।


এই দশকে বাংলাদেশের মানুষ প্রাইভেট সেক্টরেও সেবা পেতে শুরু করেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা, ডিজিটাল পেমেন্ট, ই-কমার্সগুলো আসতে শুরু করেÑ যেগুলো পৃথিবীর অনেক দেশ আরও ২০ বছর আগেই করে ফেলেছে। অর্থাৎ আমরা অন্তত ২০ বছরে পিছিয়ে থাকলাম।


আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা নিজেদের চেষ্টায় ফ্রি-ল্যান্সিং কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলাদেশে বসে বিশ্বের উন্নত দেশের কাজ করতে শুরু করে। তবে বিদেশ থেকে টাকা আনা নিয়ে হাজারো ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল, যেগুলো এখন অনেকটাই ঠিক হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে বেশ ভালো একটি জায়গা করে নিয়েছে। এই কাজটিতে বাংলাদেশ আরও ভালো করতে পারত যদি সে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের ভালো গতি পৌঁছে দিতে পারত এবং ডিজিটাল পেমেন্টটাকে সহজতর করতে পারত।


এই দশকেও বাংলাদেশ তার ইন্টারনেটের গতি ঠিক করতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ দুই উপায়ে ইন্টারনেট পেয়ে থাকে। একটি হলো ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড, আরেকটি হলো মোবাইল ইন্টারনেট। বাংলাদেশে পরিকল্পিত উপায়ে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেনি। সারাদেশে মাত্র ১০ লাখ মানুষ ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করে। পাশাপাশি ঢাকার চেয়ে জেলা শহরগুলোতে ইন্টারনেটের গতি কম এবং মূল্য বেশি। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক।


আর মোবাইল ইন্টারনেটের অবস্থা যে ভয়াবহ খারাপ সেটা তো আমরা সবাই জানি। ঢাকা শহরের মানুষ কিছুটা গতি পেলেও, ঢাকার বাইরের অবস্থা খুবই নাজুক। এটা মূলত হয়েছে মোবাইল অপারেটররা ঢাকার বাইরে তেমন বিনিয়োগ করেনি, যা তাদের লাইসেন্সের আওতায় করার কথা। ভারতের একটি অজপাড়াগাঁয়ে বসে মানুষ যেভাবে লাইভ করতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ সেটা জেলা শহরেই পারে না।


তথ্যপ্রযুক্তি খাত প্রাইভেট সেক্টরে প্রসারিত হওয়ার জন্য যেই ইনফ্রাস্ট্রাকচারের প্রয়োজন ছিল, তা তৈরি হয়নি। ফলে দেশে বড় কোনো সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।


সারাংশ


বাংলাদেশ এখনো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাঁটি হাঁটি করছে। আমাদের কোটি কোটি মোবাইল গ্রাহক আছে বটে। কিন্তু তারা মূলত ভয়েস কল করার জন্যই এটাকে ব্যবহার করে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এমন একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি, যেখানে ২০ জন আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আছে। এই সামান্য একটি তথ্যই অনেক কিছু বলে দেয়।


তথ্যপ্রযুক্তি হলো এমন একটি খাত যেখানে বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। এর জন্য চাই প্রকৃত বুদ্ধিমান মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশ এখন বড় ধরনের ব্রেইন-ড্রেইনের ভেতর পড়ে গেছে। পৃথিবীর বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ভালো লোকগুলোকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সেবা তৈরি করার মতো মানুষ এই দেশে থাকছে না। আমরা মূলত কনজ্যুমার হচ্ছি। আমাদের যদি প্রস্তুতকারকের ভূমিকায় আসতে হয়, তাহলে আরও ব্রেইন লাগবে। এই শিল্পে মেধার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রমাগত মেধাহীন হচ্ছে। এটাই বাস্তবতা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও