এক দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিবেটি কাঁকন হেনইঞ্চিতা
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধারা যেমন যুদ্ধ করেছেন, তেমনিভাবে দাপিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ করেছেন নারী মুক্তিযোদ্ধারাও। নারী মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেমন রসদ, গোলাবারুদ, অস্ত্র পৌঁছে দিয়েছেন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে, ঠিক তেমনিভাবে অস্ত্র হাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হয়েছেন সম্মুখ সমরে।
তেমনই এক দুঃসাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন হেনইঞ্চিতা।
মাতৃপ্রধান খাসিয়া পরিবারে জন্ম কাঁকন হেনইঞ্চিতার। গর্ভে থাকা অবস্থাতেই তার বাবা মারা যান। মাত্র দেড় বছর বয়সে মাকেও হারান কাঁকন। তারপর থেকেছেন নানীর কাছে। কিছুদিন বাদে নানীও মারা যান। তারপর বড় বোন লালন পালন করেন তাকে। কাঁকনের নয় মাস বয়সে বড় বোন পালিয়ে বিয়ে করেন খুশি কমান্ডার নামে ব্রিটিশ বাহিনীর প্রাক্তন এক মুসলমান সীমান্ত রক্ষীকে। খাসিয়ারা মূলত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকেন। কাঁকন হেনইঞ্চিতাও ছিলেন তাই। বোনের অনুরোধেই পরে ইসলাম গ্রহণ করেন কাঁকন হেনইঞ্চিতা। তার নতুন নাম রাখা হয় ‘নুরজাহান’। কাতলবাড়ীতে বড় বোনের স্বামীর বাড়িতে কাটে তার শৈশব আর কৈশোর। বোনের স্বামী খুশি কমান্ডার ছিলেন উদার প্রকৃতির। সেখানে ভালোই দিন কাটছিল তার। এর মধ্যে কাঁকনের বিয়ে ঠিক হয় শহীদ উদ্দিন নামের এক তরুণের সঙ্গে।
বিয়ের পর তাদের এক সন্তানও হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত সেই সন্তান বেশি দিন বাঁচেনি। তার জীবনে যেন দুর্ভাগ্য আর পিছু ছাড়ছিল না। জন্মের পরই একে একে পাঁচটি ছেলে সন্তান মারা যায় তার। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের মুখে বহু অপমান সইতে হয় তাকে। একসময় তার মেয়ে গর্ভে আসে একমাত্র মেয়ে সখিনা। অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থাতেই স্বামী তালাক দিয়ে দেন কাঁকনকে। তালাকের পর বোনের বাড়িতে উঠতে হয়। বোনের শ্বশুরবাড়ির কাছেই ছিল পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষীদের ক্যাম্প। সেখানে সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আব্দুল মজিদ খান। খুশি কমান্ডারের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। তাদের বাড়িতেও আসতেন মজিদ খান।