খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বিদায়ের মর্মব্যথা
আমাদের সমবয়সী, সহকর্মী ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ চলে গেলেন। এ দেশের শহর, বন্দর, গ্রামে আনাচে-কানাচে বহু প্রগতিবাদী দেশপ্রেমিক ‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’ পথচলাকে আর তার লেখা বা বয়ানে শুনতে পাবেন না। সমাজসংস্কারের অন্যতম সাহসী যোদ্ধাকে হারিয়ে দৈন্য বেড়ে গেল।
১৯৯৬ সালে জনগণের গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান জনবন্ধু শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন খুবই শক্তিমান হয়ে ওঠে। আমার সঙ্গে তখন তিনজন বড় মাপের ব্যক্তিত্ব ও জ্ঞানী সোহরাব উদ্দিন, ইব্রাহিম খালেদ ও রুহুল আমিন ডেপুটি গভর্নর। ফারুকউদ্দিন আহমদ, আল্লাহ মালেক কাজেমী, জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, নজরুল হুদা, মুর্শিদ কুলী খান, আব্দুল মজিদ ও মোহাম্মদ আলী—এই সাতজন দক্ষ নির্বাহী পরিচালক। আর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক প্রফেসর মইনুল ইসলাম। অর্থাৎ একটি অসাধারণ টিম মিলে ব্যাংকিং সেবা সততা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। জোরজবরদস্তি-জেলজুলুমের পরিবর্তে যুক্তিতর্ক ও দেশের স্বার্থ সম্পর্কে আইনি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বিশেষ করে খেলাপি ঋণের কবল থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মুক্ত করার কৃতসংকল্প পথচলা সমাজে সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইব্রাহিম খালেদ সাহেব তফসিলি ব্যাংকের আদি-অন্ত জানা একজন বড় মাপের ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশের দশ শীর্ষ ঋণখেলাপির গোপন তালিকা প্রস্তুতে বিশেষভাবে সহায়তা করেন। খেলাপিদের কেউ কেউ প্রথম দিকে খুব উচ্চকণ্ঠ থাকলেও আপিল বিভাগে হেরে গিয়ে চুপসে যান। অবশ্য সরকারি হারের পারিশ্রমিকে কোনো ভালো আইনজ্ঞ পাওয়া যায়নি বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি বন্ধুত্ব ও পরিচিতির সুযোগে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের সহায়তা-ধন্য হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আইনের মাধ্যমে জেলজুলুমে না গিয়ে ঋণখেলাপের দুষ্ট ব্যাধি থেকে অর্থনীতি ও সমাজজীবনকে মুক্ত করতে সক্ষম হই। তবে পরবর্তী সময়ে ঋণখেলাপিদের বিভিন্ন ছলচাতুরি ও কর্তৃপক্ষের ক্ষমার কারণে তাদের উদ্ধত ফণা সেই যে বিস্তৃত করে, আজ তা আরো শক্তিমান।