মেধা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে
ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ভেঙে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। অথচ যুদ্ধটা শুরুই হয়েছিল গোটা দুনিয়া নতুন করে ভাগ-বাটোয়ারা করার অভিপ্রায়ে। বিশ্বজুড়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন ইত্যাদি বড় উপনিবেশবাদী শক্তির উপনিবেশগুলোতে ভাগ বসাতে উন্মাদ হয়ে উঠেছিল জার্মানি। দুই-দুটি বিশ্বযুদ্ধ বাধায় তারা। এ জন্য তাদের ছুতোর অভাব হয়নি। ছুতো যাই থাক, আসল কারণ ছিল সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবার জার্মানির উদগ্র আকাঙ্ক্ষা। সেটি তারা পূরণ করতে পারেনি। তবে তাদের এই প্রাণান্ত লড়াই বিশ্ব উপনিবেশবাদকে কবরে পাঠায়।
জাতীয়তাবাদী শক্তির বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে মাত্র দুই দশকেই স্বাধীনতা অর্জন করে প্রায় গোটা দুনিয়া। তাই বলে সাম্রাজ্যবাদ হাল ছাড়েনি। নয়া উপনিবেশবাদী অর্থনৈতিক শোষণে তারা বেঁধে ফেলে গোটা দুনিয়াকেই। কিন্তু তখনও পর্যন্ত নিজেদের মাটিতে পরাধীন জাতির লোকদের প্রবেশাধিকার মানতে পারেনি। সেটা ছিল সাদা চামড়ার অহংকার। এই বর্ণবাদী চরিত্র তারা আরও দশক দেড়েক জারি রেখেছিল প্রবলভাবে। কিন্তু ১৯৭০ দশকে পেট্রোডলারের দাপটে সেটি ভেঙে পড়তে শুরু করে হুড়মুড় করে। দশকের শেষ দিকে সুইডেন এক নতুন তত্ত্ব হাজির করে। যদিও ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে তার ভূমিকা ছিল না। তবে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বল্প জনসংখ্যার দেশ সুইডেন একটি সত্য উপলব্ধি করে। আর তা হলো শুধু বস্তুই সম্পদ নয়, আসল সম্পদ হলো কর্মীর হাত। সেটিই তাদের সবচেয়ে অভাব। মাথাপিছু রোজগারে তখন সুইডেন সবার শীর্ষে। কাজেই টাকার অভাব নেই। আছে কর্মীর অভাব। সে কর্মী শুধু কারখানার শ্রমিক নয়। অভাব উচ্চশিক্ষিত, উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মী, পেশাজীবীর। তারা হিসাব কষে দেখল, নিজের টাকায় শিক্ষিত কর্মী ও পেশাজীবী তৈরি করায় অনেক হ্যাপা। বিনিয়োগ যেমন বেশি, তেমনি রাতারাতি তা তৈরিও করা যায় না। তার চেয়ে সহজ বিদেশ থেকে মেধা ভাড়া করা, কিনে নেওয়া।