৬ মাসেও তদন্ত নেই, দায়মুক্তি উপভোগ করছে পুলিশ: অ্যামনেস্টি
গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় জড়িত ও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল পুলিশ বাহিনী। সেসব সহিংসতায় খুন হন ৫৩ জন মানুষ। তাদের বেশিরভাগই মুসলিম। গতকাল এক বিবৃতিতে এমনটা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া। মানবাধিকার সংগঠনটি বিবৃতিতে বলেছে, দিল্লি পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত ও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল। কিন্তু গত ছয় মাসে ওই দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি তদন্তও চালু হয়নি। আল জাজিরা জানিয়েছে, ভারত সরকারের কাছে পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চালুর আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। বলেছে, দিল্লির কয়েক দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ধর্মীয় সহিংসতা ছিল ফেব্রুয়ারির দাঙ্গা।বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক অভিনাশ কুমার বলেন, দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। তা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত দিল্লি পুলিশকে জবাবদিহিতার আওতায় আনেনি। এটা হতবাক করা ব্যাপার।প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকারের বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘট করেন দিল্লির উত্তর-পূর্বাংশের মুসলিমরা। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দুর্বৃত্তরা ধর্মঘটকারীদের ওপর হামলা চালালে তা ঘিরে শুরু হয় সহিংসতা। তাতে মারা যান ৫১ জন। আহত পাঁচ শতাধিক মানুষ। দাঙ্গায় পুলিশের বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সাহায্য করার অভিযোগ ওঠে। তাদের সামনে মুসলিমদের মারা হলেও তা না দেখে এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দায়মুক্তি হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সাহায্য করার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশি হেফাজতে নিয়ে বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন, বিক্ষোভস্থলে ভাঙচুর চালানোসহ অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে অ্যামনেস্টির এক তদন্তে। যদিও ভারত সরকার ও পুলিশ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। অভিনাশ কুমার বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলমান এই দায়মুক্তি এমন বার্তা পাঠায় যে, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা গর্হিত মানবাধিকার লঙ্ঘন করেও পার পেয়ে যাবেন। তারা নিজেরাই এখন আইন। অ্যামনেস্টি তাদের তদন্তের অংশ হিসাবে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া পায়নি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষপাতদুষ্টতার আচরণ নিয়ে ঘটনার সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। অ্যামনেস্টির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেসব প্রতিবেদনের কথাও। দিল্লির দাঙ্গায় পুলিশের নৃশংসতার অভিযোগের সময়রেখা দাঁড় করাতে অনুসন্ধান চালু করেছে অ্যামনেস্টি। সে সময় যেসব রাজনৈতিক নেতারা সহিংসতা উস্কে দিতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়েছিল তাদের ভূমিকাও বিশ্লেষণ করছে মানবাধিকার সংগঠনটি। ফেব্রুয়ারির ২৩-২৯ তারিখের মধ্যে সহিংসতায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই মুসলিম। মারা যাওয়া হিন্দুদের সংখ্যা এক ডজনেরও কম। বেশিরভাগ নিহতই গুলির আঘাতে মারা গেছেন বলে জানা যায়। রাস্তায় দাঙ্গার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ওই দাঙ্গায়। অ্যামনেস্টি জানায়, গত চার দশকে দিল্লিতে দু’টি বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। একটি সংঘটিত হয় ১৯৮৪ সালে। সে সময় শিখদের গণহারে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয়টি হয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। উভয় দাঙ্গার মধ্যে একটি সাদৃশ্য হচ্ছে, দু’টিতেই দিল্লি পুলিশ গর্হিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।