দেশের দীর্ঘতম এই বাঁশের সাঁকোটি নজর কেড়েছে সবার
বর্ষার পানিতে ডুবে থাকা খালের এক প্রান্তে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে রেলপথের মতো এঁকেবেঁকে গেছে বাঁশের তৈরি দীর্ঘ এক সাঁকো। সাঁকোটি পার হতে গেলে বোঝা যায় দৈর্ঘের বিস্তৃতি। সাঁকোর একটা বাঁক শেষ হতেই শুরু হয় সাঁকোর আরেকটি নতুন বাঁক। সাঁকোর ওপরে চলা কোনো পথচারীর পথচলা যেন আর শেষ হতে চায় না। ছল ছল শব্দে প্রবাহমান পানির ওপরে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত এই সাঁকোর দৈর্ঘ্য ১০৩৩ ফুট। সাঁকো নির্মাণের সাথে জড়িতদের দাবি, বাঁশের তৈরি এই সাঁকোটি জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের যেকোনো বাঁশের তৈরি সাঁকোর চাইতে দীর্ঘ।
তাদের মতে, বেলকুচি উপজেলার প্রত্যন্ত রানিপুরা গ্রামের এই বাঁশের তৈরি সাঁকোর দৈর্ঘ্য হতে পারে দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই ডুবে যায় বেলকুচি উপজেলার যমুনা নদী পরিবেষ্টিত রানিপুরা, মনতলারচর, চর আগুরিয়া, মুলকান্দি, বেলির চর সহ এই অঞ্চলের অন্তত ১০টি গ্রাম। যমুনা নদীর পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিবন্দি মানুষদের তখন যোগাযোগের একমাত্র ভরসা কলাগাছের ভেলা আর গুটিকয়েক নৌকা। স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে করোনার কারণে বাড়িতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আনিসুর রহমানকে। তার এই ভাবনাকে সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসে গ্রামের উদ্যমী যুবক নূর আলম শেখ, বাবুরাজ, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ ও আব্দুল শেখ। তাদের এই উদ্যোগের সাথে সহমত পুরো গ্রামবাসী।
গ্রামবাসীর মতামত নিয়ে এপ্রিল মাসের শুরুতেই কাজ শুরু করা হয়। ছিন্নমূল আর অভাবি চরাঞ্চলের এই গ্রামগুলো থেকে বেছে বেছে চিহ্নিত করা হয় অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল পরিবারগুলোকে। ৭০টি পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩০০ টাকা করে চাঁদা। স্থানীয় একজন ইউপি সদস্য ২ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। বাকি টাকা আর দীর্ঘ পরিশ্রম করেছেন উদ্যমী এই ৬ যুবক আর গ্রামবাসী মিলে। রানিপুরা গ্রামের সন্তান ঢাকা ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আনিসুর রহমান জানান, অভাব আর প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই তিনি বড় হয়েছেন।