ঈদের আগে কী খুলবে সিনেমা হল?
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ রয়েছে। গেল ১৮ মার্চ থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, প্রদর্শক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকল সমিতি মিলে হল বন্ধের ঘোষণা দেয়। প্রথমে ২ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা আসলেও পরবর্তীতে করোনো পরিস্থিতি খারাপ এখন পর্যন্ত হল বন্ধ রয়েছে। হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গেল রোজা ঈদে কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। যার ফলে কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পের। একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আসন্ন কোরবানি ঈদকে ঘিরেও। ক্রমান্বয়ে করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছে দেশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ থাকলেও সারা দেশেই প্রায় সবকিছুই এখন স্বাভাবিক রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে অফিস-ব্যবসা। খুলছে শপিং মলগুলো।
কিন্তু এখনো বন্ধ সিনেমা হল। সিনেমাপাড়ায় অনেকেই দাবি করছেন, ‘দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থেকে মানুষ ক্লান্ত, বিষণ্ন, অবসাদগ্রস্ত। এমন সময় সবার জন্য প্রয়োজন মানসিক প্রশান্তি। যা আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যমে আসতে পারে। এই মুহূর্তে কেন সিনেমা হলগুলো খুলে দেয়া হচ্ছে না। যেখানে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খানিক বিনোদন খুঁজে পেতে পারতো! তবে কবে খুলবে হল? কোরবানি ঈদের আগে কী এ ব্যপারে কোনো ঘোষণা আসবে? মুক্তি পাবে কী ঈদের সিনেমাগুলো। প্রশ্নের উত্তর জানা গেল, খুব শিগগিরই খুলে দেয়া হবে সিনেমা হল। তথ্য মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে এই প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নেতারা নির্দিষ্ট বিধি নিষেধ বহাল রেখে সীমিত পরিসরে হল খুলে দেয়ার পক্ষে।
হল মালিকরাও তাদের হলগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। করোনায় মোকাবিলায় প্রস্তুত করছেন। দর্শক যেন নিরাপদে থাকেন সেই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা হল খুলে দেয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। আভাস পেয়েছি সরকার হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন খুব দ্রুতই। কিন্তু এ ব্যাপারে হল মালিকদের ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি না। এরমধ্যে দুইবার আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত আকারে হল খোলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু হল মালিকদের প্রশাসকের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া আসেনি।’ এই প্রযোজক নেতা আরও বলেন, ‘সিনেমার অবস্থা এমনিতেই খুব খারাপ। বছরে কিছুটা সময় সিনেমার জন্য ভালো যায় দুই ঈদে। একটি ঈদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেল। এখন পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে তখন কেন কোরবানি ঈদটিকে মাটি করা হবে। আমরা চাই যেভাবে সম্ভব ছোট পরিসরে হলেও হলগুলো খুলে দেয়া হোক।’ সেক্ষেত্রে কীভাবে হল চালু রাখা যেতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘অনেকের অনেক আইডিয়া থাকতে পারে।
এটা নিয়ে সম্মিলিতভাবে আলোচনায় বসলেই সমাধান আসবে বলে মনে করি আমি। আমার মতে একজন দর্শকের সামনে পেছনে চারদিকে চারটি সিট খালি থাকবে। আর হলে এসি না থাকলে অবশ্যই ফ্যান নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভেতরের বাতাস বাইরে যেতে পারে এবং বাইরের বাতাস ভেতরে আসতে পারে।’ চারটি সিট খালি রেখে একজন দর্শক বসলে হলে দর্শক হবে খুবই কম। সেই শো চালিয়ে হল মালিক কী লাভের মুখ দেখতে পারবেন? খসরুর উত্তর, ‘পারবেন। এভাবে বসলেও অনেক দর্শক বসতে পারবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট হারে টিকিট মূল্য বাড়ানো যেতে পারে। আসলে এসবই আলোচনার বিষয়। সবাইকে একসঙ্গে বসে ঠিক করতে হবে যে কী করা উচিত। হয়তো দেশের ছোট হলগুলো এই মুহূর্তে খোলা যাবে না। যেগুলো পারা যায় সেগুলোই চালু রাখতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ঈদের আগে হল খুলবে কী না তা বলা মুশকিল।
পরিস্থিতি দেখে বিবেচনা করতে হবে। সরকার কী ভাবছে সেটাও মূল্যায়ণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সেইসঙ্গে এটাও ভেবে দেখতে হবে যে হল চালু করলে সিনেমা পাওয়া যাবে কী না। সেগুলো চালিয়ে হল মালিকরা মুনাফা পাবেন কী না।’ এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হল কোরবানি ঈদের আগে সিনেমা হল চালু হলেও সিনেমা মুক্তি নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ-উচ্ছ্বাস নেই প্রযোজক-পরিচালকদের মধ্যে। তাদের মতে, করোনা পুরোপুরি বিদায় নিতে আরও অনেক সময় লাগবে।