ভারতবর্ষ সাময়িকীতে ১৯৩৪-৩৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’। প্রকাশের ৯০ বছর পর সেই উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে সিনেমা। আজ পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাবে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’; পর্দায় কুসুম, শশী, কুমুদ, যাদব আর সেনদিদি হয়ে আসছেন জয়া আহসান, আবীর চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায়।
অনেক দিন ধরেই সিনেমাটি নিয়ে কাজ করছিলেন সুমন মুখোপাধ্যায়। এক ফেসবুক পোস্টে এ প্রসঙ্গে নির্মাতা লিখেছেন, ‘এই ছবি বানানোর প্রথম চেষ্টা করেছিলাম ২০০৮ সালে। কিন্তু নানা কারণে আটকে গেছে। যখন ১৪ বছরেও বানাতে পারিনি, তখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু নবারুণ (ভট্টাচার্য)–দার যুদ্ধ পরিস্থিতি উপন্যাসের একটা লাইন আমাকে আবার তাতিয়ে তুলল...“হতাশ আর ভগ্নোদ্যম সেসব মানুষ পুতুলের যান্ত্রিক জীবনের অপরূপ কাহিনি “পুতুলনাচের ইতিকথা”।” মনে হলো এ তো আমাদের সময়ের কথা। আবার উঠেপড়ে লাগলাম। ২০২২-এ শুটিং শেষ করলেও তিন বছরের বেশি সময় লেগে গেল এই ছবি শেষ করতে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে।’
উপন্যাস থেকে বেশ কিছু বদল করেছেন নির্মাতা। তাঁর ভাষ্যে, ‘ভারতের স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়কে ফ্রেমবন্দী করেছি। মূল উপন্যাসে সময়টা আরও পেছনে ছিল, আমি খানিকটা এগিয়ে এনেছি। তা ছাড়া উপন্যাসের সবকিছু ছবির চালচিত্রে ধরানো সম্ভব নয়। দুটো মাধ্যমের চলন আলাদা। আমি চারিত্রিক রসায়নের ওপরে বেশি জোর দিয়েছি।’গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া সিনেমার ট্রেলারের শুরুতেই দেখা যায়, ধোপদুরস্ত শহুরে জীবনের হাতছানি এড়িয়ে গ্রামে ডাক্তারি করার আক্ষেপ কুরে কুরে খায় শশীকে (আবীর)। শুধু তাই নয়, তার মনের মধ্যে রয়েছে গ্রামের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করার ইচ্ছা। কিন্তু সব ইচ্ছাই সে মনের মধ্যে জমিয়ে রেখেছে। ইচ্ছাপূরণ আর হচ্ছে না। গ্রামের ঘেরাটোপে জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে চায় শশী। এরপর তার জীবনে আসে কুসম (জয়া)। নির্মাতা সিনেমাটি নিয়ে আরও বলেন, ‘উপন্যাস নিয়ে কথা অনেকেই বলেছেন। অনেক লেখালিখিও হয়েছে। “শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?” এই সংলাপ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এই সংলাপ কি শশীর, নাকি মানিকের নিজের, তা কিন্তু উপন্যাসে স্পষ্টভাবে উঠে আসে না। কিন্তু চিত্রনাট্যে সেটা স্পষ্ট।’
কুসুম চরিত্রটি নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকাকে জয়া বলেন, ‘বরাবর নারীকেই কামনা ও বাসনার বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কুসুমেরও নিজের কামনা–বাসনা রয়েছে, যা সে লুকোয় না। কুসুম একটা খোলা বইয়ের মতো। কুসুমের মন, শরীর ও আত্মা সব এক রকম। এখানেই শশীর সঙ্গে তার পার্থক্য। কুসুম কিন্তু শশীর চরিত্রকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। সে এতটাই খোলা মনের, সতেজ একটি চরিত্র।’