স্বাস্থ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে দেশে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধীরে ধীরে এগুলো বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিছু বাড়ানো হয়। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম।
এর মধ্যে গত ৩০ জুন সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনাকালে স্বাস্থ্য খাতের নানা অসামঞ্জস্যতার বিষয় তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অপসারণ দাবি তোলা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে যে আমাদের ভেন্টিলেটর লাগবে। এটা নিয়ে বিরাট হইচই। কিন্তু, দেখা গেল ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেশনে যারা গেছেন, প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের চার শ ভেন্টিলেটর রয়েছে। তার মধ্যে ৫০টাও ব্যবহার হয়নি। ৩৫০টিই খালি পড়ে আছে। কারণ, লোকে (এটা) জানত না তখন।’
‘ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই’— স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকের মনে দেখা দিয়েছে নতুন প্রশ্নও। করোনার চিকিৎসায় ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন কি না, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।
করোনার চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন আছে কি না?— জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর— এই দুটোরই প্রয়োজন আছে। কারণ, কিছু রোগী অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম এবং নিউমোনিয়াতে চলে যেতে পারেন। পাশাপাশি কো-মরবিডিটিও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগী এমন একটা পর্যায়ে যেতে পারে, যখন তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপ্লাই দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে। সুতরাং এটার কোনো বিকল্প নেই। একটা সময় রোগী সিরিয়াস পর্যায়ে গেলে তাকে আইসিইউতে নিতে হবে এবং ভেন্টিলেশনে রাখতে হবে।’
ভেন্টিলেটর নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটা বৈজ্ঞানিক নয়। তার এ ধরনের মন্তব্য করা সঠিক হয়নি।’
দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘তিনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। মন্ত্রণালয় থেকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা আসেনি। যে কারণে আজকে আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে, এখনো সময় আছে, সঠিক কৌশল ঠিক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন নেই— এই কথাটি ঠিক না। তিনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) এই কথাটি কীভাবে বলেছেন জানি না। ভেন্টিলেটর কম প্রয়োজন হয় এবং যারা ভেন্টিলেটরে পৌঁছে যায়, সেখান থেকে হয়তো তারা আর ফিরে আসে না। কিন্তু, ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন নেই— এই কথাটি ঠিক না। এই কথাটা কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’
দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বয়হীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আগাগোড়ায় সমন্বয়হীনতা রয়েছে। প্রথমে আমাদের সক্ষমতা কম ছিল। পরে তা যেমন বেড়েছে, তেমনি সমন্বয়ের চাহিদাও বেড়েছে। আমরা যে হারে সুবিধা বাড়িয়েছি, সমন্বয় সেই হারে বাড়েনি।’
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- মার্স করোনা ভাইরাস
- ভেন্টিলেটর
- করোনা চিকিৎসা
- করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
- বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
- ডা. নজরুল ইসলাম
- জাহিদ মালেক
- ডা. মুশতাক হোসেন
- ডা. মোজাহেরুল হক
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
- রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)
- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
- ঢাকা