বাচ্চা লাচাইতে দে নইলে বিপদে পড়বি!
বাচ্চা লাচাইতে (নাচাতে) দে, নইলে তোরা বিপদে পড়বি! বাচ্চা পানিতে পড়বো, করোনায় মরবো। এমন সব ভয়ঙ্কর অভিসাপ দিয়ে নবজাতকের পরিবারে ভীতির সৃষ্টি করে হাজার হাজার টাকা, কাপড়চোপড়, চাল-ডালসহ বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে হিজড়ার দল। গত এক মাস ধরে করোনার এই দুর্যোগের মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলার গ্রামাঞ্চলে তান্ডব চালাচ্ছে এই নপুংসক জাতি। এ পর্যন্ত ৫০বাড়িতে হানা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চাহিদা পূরণ না করলে বাচ্চা ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাতে-পায়ে ধরে এমনকি বাচ্চা লুকিয়ে রেখেও রেহাই পাচ্ছে না সন্তানের মা-বাবারা। কমিশনে রাখা খোঁজারুরা কোনো বাড়ি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে তার সন্ধান দিয়ে দিচ্ছে হিজড়াদের। করোনায় কর্মহীন, দিনমজুর ও অসহায় অনেক পরিবারকে হিজড়াদের অনৈতিক দাবি মেটাতে গিয়ে পড়েছে চরম সংকটে। তাদের অত্যাচারে গ্রামের মানুষ ও নবজাতকের পরিবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
আগে হিজড়ারা শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারের দোকানদারদের কাছ থেকে তোলা ওঠাতো। পাশাপাশি বাচ্চাদের নাচিয়েও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিত। কিন্তু বর্তমানে করোনার কারণে তাদেরকে আর হাটবাজারে দেখা যায় না। এখন তারা গ্রামেগঞ্জে ঘুরে নবজাতকের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর ভোলার পাড় গ্রামের ভ্যানচালক আলামিন হাওলাদার জানান, তার একমাত্র মেয়ে মরিয়মের বয়স দুই মাস। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দুপুরে তিন হিজড়া তার বাড়িতে হাজির হয়ে তিন হাজার টাকা দাবি করে। একদিন ভ্যানের চাকা না ঘুরলে যার সংসারের চাকাও অচল হয়ে পড়ে, তার কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। পরে হাতে-পায়ে ধরে এক হাজার টাকা দিয়ে কোনোমতে রক্ষা পান আলামিন।
ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক মো. জাকারিয়া আকন জানান, এক সপ্তাহ আগে হিজড়ার দল বাড়িতে ঢুকে তার এক মাস বয়সের ছেলে জারিফকে জোর করে তুলে নিয়ে ঝাকিয়ে নৃত্য শুরু করে। এতে তার বাচ্চা ভয়ে চিল্লাতে থাকে। তারা পাঁচ হাজার টাকা দাবি করলে দুই হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে রেহাই পান।