সিটিজেনশিপ কেড়ে নেয়ার মিশনে ট্রাম্পের বিশেষ টিম
পার্টির মনোনয়ন লাভের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিকে ১ লাখ ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে ধরাশায়ী করে পেনসিলভেনিয়া স্টেট অডিটর জেনারেল পদে নিজের বিজয়ের পথ সুগমকারি বাংলাদেশি আমেরিকান ড. নীনা আহমেদ বললেন, ‘আমরা যেমন একাত্তরে ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে সক্ষম হয়েছি, ঠিক একইভাবে এই আমেরিকায় আমাদের অধিকারের বিষয়গুলো অর্জিত হয়েছে আফ্রিকান-আমেরিকানদের রক্তের বিনিময়ে। এজন্যে কালো মানুষ বলে ওদেরকে অবজ্ঞা-অবহেলা করা উচিত হবে না। ওদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে চলমান আন্দোলনের সাথে আমাদেরকেও একাকার থাকতে হবে।’
এনআরবি কানেক্ট টিভির ‘ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামের ভার্চুয়াল টক-শোতে (২২ জুন সোমবার রাতে) অংশ নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশি তথা অশ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনরত ড. নীনা আরো বলেছেন, ‘সামনের ৩ নভেম্বরের গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন খুব কমই ছিল। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস-ঐতিহ্য-মূলবোধকে বিশ্বের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত একজন মানুষকে হোয়াইট হাউজ থেকে সরিয়ে দিতে না পারলে কেউই আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারবো না।’
ড. নীনা বলেন, ‘অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠা এই আমেরিকা থেকে আমাদের মত কঠোর পরিশ্রমী ও মেধাবিদের তাড়িয়ে দেয়ার গভীর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি গোপনে একটি টিম গঠন করেছেন যারা সিটিজেনশিপের আবেদনগুলো পর্যালোচনা করছে। সামান্য একটু অসামঞ্জস্য মনে হলেই সংশ্লিষ্ট (আমাদের মত বাদামী ও মুসলমান)দের সিটিজেনশিপ কেড়ে নিয়ে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হবে। এজন্যেই ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে সকলকে ভোট দিয়ে যো বাইডেনকে জয়ী করতে হবে। যারা এখনও ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হননি, তারা যেন অবিলম্বে তালিকাভুক্ত হন।’
সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর উপস্থাপনায় এ অনুষ্ঠানে ড. নীনা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘করোনাভাইরাসকে পরাস্থ করার পথ একটাই, আর তা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকায় কেউ যেন হতাশায় আক্রান্ত না হন-এজন্যে প্রিয় পরিচিতজনদের সক্রিয় থাকতে হবে। টেলিফোন-ই-মেইল. ফেসটাইমে কথা বললে অনেকাংশেই স্বস্তি ফিরে আসে। আর যদি কেউ অর্থ সংকটে থাকেন বা গ্রোসারি ক্রয়ে সক্ষম না হন তাহলে যেন পরিচিতজন অথবা প্রতিবেশীরা সে সমস্যা দূর করতে সচেষ্ট হন। একজন আরেকজনের পাশে থাকলে একাকীত্ব ঘুচে যায় এবং করোনা মহামারিকেও দমানো সহজ হয়।’
৩৫ বছরের অধিক সময় যাবত কমিউনিটির সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কর্মরত ড. নীনা বলেন, ‘পেনসিলভেনিয়ার মত বিরাট একটি স্টেটের সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের অকুন্ঠ সমর্থনের নেপথ্যে কাজ করেছে সততা ও নিষ্ঠার পাশাপাশি সকলকে শ্রদ্ধা জানানো। আমি কাউকে কখনো খাটো করে দেখতে শিখি নাই। এটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আর এটাও আমার অভিজ্ঞতায় রয়েছে যে, বাঙালিরা কষ্টের সিড়ি বেয়ে সম্মুখে এগুতে জানে। আমি সেভাবেই মাঠে রয়েছি। এই ধারা যাতে শেষদিন পর্যন্ত অটুট রাখতে পারি এজন্যে সকলের দোয়া চাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় ৩ নভেম্বরের পেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালটে স্টেট অডিটর জেনারেল হিসেবে তার নামও থাকবে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন একজন রিপাবলিকান। পেনসিলভেনিয়া স্টেটে রেজিস্টার্ড ভোাটারর ৮০% হলেন ডেমক্র্যাট। সে সুবাদে ঐ নির্বাচনে তিনি জয়ী হবেন-এতে সামান্য দ্বিধা নেই। তবুও বিজয়ের মালা পরতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেই হবে। সে অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে। ড. নীনা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকল প্রবাসীকে প্রেসিডেন্ট পদে যো বাইডেনকে ভোট দিতে অনুরোধ করেছেন। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে এ কাজটি করতেই হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।