‘বাবার মানিব্যাগ থেকে নিয়মিত টাকা সরাতাম!’
প্রতি জুন মাসের তৃতীয় রবিবার, বিশ্ব বাবা দিবস। সঙ্গে আগে থেকেই চূড়ান্ত, ২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবস। দুটো বিশেষ দিবস এক হলো এবার। ফলে বাংলা ট্রিবিউন বিনোদন বিভাগ চিন্তা করেছে একইরূপ। খুঁজে নিয়েছে তারকা বাবার এমন সন্তান, যিনি ক্যারিয়ার গড়ছেন সংগীতে।তেমনই একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। দেশের স্বনামধন্য নায়ক-প্রযোজক-পরিচালক আলমগীর-এর যোগ্য উত্তরসূরি তিনি। কথা বলেছেন নির্দিষ্ট ছয়টি প্রসঙ্গে।এক.আমি বাবার মানিব্যাগ থেকে নিয়মিত টাকা সরাতাম! এটা এখন বিশ্বাস করবে না অনেকেই।
অথচ এটা ছিল আমার শৈশবের অন্যতম অ্যাডভেঞ্চার। অনেক টাকা না, একশ থেকে পাঁচশ টাকার নোট। এটা তখন আমাদের জন্য অনেক টাকা। প্রাথমিক স্কুলে পড়ি তখন। সেই টাকা চুরি করে আসলে খরচ করারও সুযোগ ছিলো না। চুড়ি কিনে, চটপটি খেয়ে আর কতো খরচ করা যায়! তো কলেজে ওঠার পর পর আব্বু কথায় কথায় একদিন লজ্জা দিয়ে দিলেন।
বললেন, ‘তোমরা (তিন ভাই-বোন) যে আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা সরাতা, ভেবেছো আমি কিছু বুঝতাম না তখন? সবই বুঝতাম। কিন্তু তোমাদের কিছু বলিনি।’আব্বুর এই কথাটা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আবার মনে হলো, তিনি যদি এই সুযোগটা না দিতেন তাহলে ছোটবেলায় মানিব্যাগ থেকে টাকা সরানোর মজাটাই আর পেতাম না!দুই.সত্যি বলতে জন্মের পর থেকেই তো শুটিংয়ে যাই। তবে আমার স্মৃতিতে থাকা প্রথম শুটিং হলো ‘ঝুমকা’। এটি আব্বু প্রযোজিত প্রথম ছবি ছিল। সম্ভবত শুটিং হচ্ছিলো বেঙ্গল স্টুডিওতে। কতো সালের কথা এখন মনেও নেই। তবে আমার মনে পড়ছে সেটাই আমার স্মরণে থাকা প্রথম শুটিং।তিন.একটা বিষয় আমি লক্ষ করে দেখলাম, বাবা লেখাটি পড়লে, কেউ বাবা শব্দটি উচ্চারণ করলে- সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় ভেসে ওঠে আব্বুর মুখটা।
এটা অদ্ভুত একটা অনুভূতি। অন্যদের হয় কি না জানি না। এটা আমার হবেই।এর বাইরে বাবা মানেই আমার কাছে- শক্তি, সাহস, আশ্রয় আর বন্ধু। বাবা ব্যাপারটাই অনেক বিশাল আমার কাছে।চার.ক্যারিয়ারে বাবার প্রভাবের চেয়ে আমি বলবো গান শেখার বিষয়ে বাবার প্রভাব অনেক বেশি। আমি গান শিখেছি বাবাকে শোনানোর জন্য।
বাবা যেদিন ফ্রি থাকতেন, ‘যাও আম্মু হারমোনিয়াম নিয়ে আসো।’ এর পর প্রায় দেড় দুই ঘণ্টা আমি গাইতাম। বাবা মন দিয়ে শুনতেন। প্রচণ্ড গানপাগল মানুষ তিনি। কিন্তু সেই গান শেখা যে আমার জীবনের অংশ হয়ে যাবে, তখন বুঝিনি।অনেকেই বলেন তারকা বাবা বা মায়ের জন্য ঐ সন্তানের ক্যারিয়ার দাঁড়ালো। আবার অনেকেই বলে এতো বড় তারকা, অথচ তার সন্তান কিছুই করতে পারেনি!
এসব মতামতের বিপরীতে আমি এটুকু বলবো, বাবা-মা মিডিয়ার হলে বা বড় কেউ হলে তার এন্ট্রিটা সহজ হয়। এটা সত্যি। কিন্তু শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা, জনপ্রিয়তা তৈরি করে সেটি ধরে রাখার পুরোটাই নির্ভর করে নিজ যোগ্যতার ওপর।পাঁচ.বাবাকে নিয়ে অনেক গল্প মানুষের কাছে শুনেছি। যেমন বাবা নীরবে মানুষের পাশে দাঁড়ান। যেটা পরে অন্যের কাছে শুনতে পাই।
সন্তান হিসেবে খুব গর্ব হয় তখন। চেষ্টা করি নিজেও বাবার মতো হতে।বাবা বেশ খেতে পছন্দ করেন। তাদের খাবার গল্প অনেক শুনেছি মানুষের মুখে। এমনও শুনেছি, সারাদিন শুটিং করে গভীর রাতে নিজে ড্রাইভ করে আরিচা ঘাটে গিয়ে দোকান খুলিয়ে ইলিশ মাছ রান্না করিয়ে ভাত খেয়ে বাসায় ফিরেছেন আব্বু!
আব্বুও এসব মজার গল্প এখন মাঝে মাঝে করেন আমাদের পারিবারিক আড্ডায়। শুনতে খুব ভালোলাগে।ছয়.আজ খুব মজার একটি দিন। বাবা দিবস আবার সংগীত দিবস।