খসড়া আইনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত অবাস্তব
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে কঠোর শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমান আইনে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ করতে পারলেই কোনও রাজনৈতিক দল নিবন্ধনযোগ্য বিবেচিত হয়। কিন্তু নতুন আইনে দলগুলোকে তিনটি শর্তের মধ্যে দুটি পূরণ করতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, যা নিবন্ধন প্রত্যাশী কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের শর্তকে অবাস্তব বলেও আখ্যায়িত করছেন তারা। এছাড়াও নতুন আইনের খসড়ায় এমন সব শর্তারোপ করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক দলের পক্ষে পূরণ করা কঠিন হবে।
কঠোর শর্ত রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন-২০২০ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (১৭ জুন) এই খসড়া আইনটি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে সরবরাহ করা হয়েছে। দলগুলোকে প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে মতামত দিতে বলেছে কমিশন। আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ইমেইলের মাধ্যমে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বিধান অসাংবিধানিক। এটা মানুষের রাজনীতি করার অধিকার খর্বের শামিল। তারা এ ধরনের অবাস্তব শর্তারোপ না করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী শর্ত দিয়ে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটি একটি খসড়া আইন। এর ওপর সবার মতামত চাওয়া হয়েছে। কোনও সমস্যা থাকলে তা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে খসড়া আইনে নিবন্ধিত দলগুলোর শর্ত পূরণ না হওয়া সাপেক্ষে নিবন্ধন বাতিল করার যে বিধান যুক্ত করা হচ্ছে, তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা এ ধরনের বিধানের পক্ষে মত দিয়েও আইনটির অপব্যবহার যাতে না হয়, সেই ধরনের সেফগার্ড আইনের থাকা জরুরি বলে উল্লেখ করেন।
বর্তমানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর অধীনে (ধারা ৯০ এ-৯০১) নির্ধারিত কিছু ধারার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আরপিও’র মধ্যে না রেখে নিবন্ধনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাদ দিয়ে নতুন করে পৃথক গণপ্রতিনিধিত্ব আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য প্রণীত খসড়া আইনে ১৬টি ধারা রয়েছে। এতে নিবন্ধন পেতে আরপিও’র বিদ্যমান শর্তগুলোর বেশিরভাগই ঠিক রাখা হয়েছে। তবে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু কড়কড়ি শর্ত।
বিদ্যমান বিধান মতে, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ করতে পারলেই রাজনৈতিক দল নিবন্ধনযোগ্য বিবেচিত হয়। কিন্তু নতুন আইনে দলগুলোকে তিনটি শর্তের মধ্যে দুটি পূরণ করতে হবে বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়, যা বর্তমানে অনিবন্ধিত কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে পূরণ করা কার্যত অসম্ভব।
বিদ্যমান আইনে নিবন্ধনের জন্য যে তিনটি শর্ত রয়েছে, তার একটি হচ্ছে— নিবন্ধনে আবেদিত রাজনৈতিক দলকে স্বাধীনতার পর থেকে যেকোনও একটি সাধারণ নির্বাচনে নিজস্ব দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে অন্তত একটি আসনে জয়লাভ করতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে এ শর্তটিতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে বলা হয়েছে— নিবন্ধন পেতে আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ হতে পূর্ববর্তী দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে অন্তত একটি আসনে জয়লাভ করতে হবে।
নতুন আইনে এ শর্তটি কার্যত অবাস্তব। ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর তিনটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর কোনোটিতেই অনিবন্ধিত কোনও দলের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ ছিল না। ফলে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচনে অনিবন্ধিত কোনও দলের দলীয় প্রতীক নিয়ে একটি আসনে বিজয়ী হওয়ার শর্ত পূরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।