হটস্পট নারায়ণগঞ্জে চালু হয়নি আইসিইউ, দুই এমপি’র ক্ষোভ
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১৩ই এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালকে ৫০ শয্যার করোনা হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়।
সেখানে ৪০টি আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ শয্যার একটি আইসিইউ ওয়ার্ড থাকার কথা। করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালুর ২ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আইসিইউ ইউনিট চালু না হওয়ায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ জন করোনা রোগী শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন।
সর্বশেষ গত ১০ই জুন নগরের উত্তর চাষাঢ়া এলাকার খলিলুর রহমান হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন এবং আইসিইউ না থাকায় মারা যান।
এদিকে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে জেলার ৫০ লাখ অধিবাসীর জন্য জেলার একটি মাত্র বেসরকারি হাসপাতালে ৪টি আইসিইউ বেড রয়েছে। যা জনসংখ্যার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৪ হাজার ১৮৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৯৭ জন।
আক্রান্তদের অনেককেই জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় বাধ্য হয়ে রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ করোনা হাসপাতালে আইসিইউ কবে চালু হবে সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর দীর্ঘ সময়েও আইসিইউ চালু না হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। একই সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডে বেসরকারি ২৫০ শয্যার প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি না করায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
গত ৮ই এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালটিকে করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হাসপাতালটিতে ৪০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ১০ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৩ই এপ্রিল থেকে হাসপাতালটিতে শুরু হয় করোনা রোগী ভর্তি কার্যক্রম। কিন্ত দীর্ঘ এই সময়ে চালু হয়নি আইসিইউ।
ওইদিন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সামসুদ্দোহা সঞ্চয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের ৪০ বেডের আইসোলেশন তৈরি। সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসাও হচ্ছে। কিন্তু ১০ বেডের আইসিইউ এখনো প্রস্তুত হয়নি।
তিনি বলেন, আইসিইউ’র জন্য বিশেষ ধরনের বেডের প্রয়োজন। সেগুলো দেশের বাইরে থেকে আমদানি করার কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বেড গুলো না পাওয়ায় আইসিইউ ওয়ার্ডটি চালু করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আমি রীতিমত ক্লান্ত হয়ে গেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফোন করতে করতে। কমপক্ষে অর্ধ শতাধিকবার আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছি। আমাকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল আগামী ১লা জুনের মধ্যে আইসিইউ চালু করা হবে। যদিও গত ১৭ই মে চালু করার চূড়ান্ত নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখন জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার কিছু বলার নাই।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, যদিও ৩০০ শয্যা হাসপাতাল আমার নির্বাচনী এলাকায়। কিন্ত আমার দায়িত্ব হাসপাতাল দেখা শোনা করা না। এটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ। কিন্তু তারপরও অসুস্থ শরীর নিয়ে বারবার হাসপাতাল ভিজিট করেছি। ডাক্তারদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করেছি। ৪টি অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছি। মোটকথা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অন্তত মানুষ যাতে চিকিৎসা সেবাটা পায়। কিন্তু আইসিইউ চালু হয়নি এখনো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলার পরও অস্বাভাবিক বিলম্ব হচ্ছে। এটা দুঃখজনক।