নোয়াখালী জিলা স্কুলের গল্প
বৃহত্তর নোয়াখালীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে এখনো বেশ পরিচিত নোয়াখালী জিলা স্কুল। ১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে ২০২০ সালে এসে পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠার ১৭০ তম বছর। এই ১৭০ বছরের মধ্যে লুকিয়ে আছে কত শত গল্প! জিলা স্কুলের ইতিহাসও বেশ চমকপ্রদ। নোয়াখালীর গত ২০০ বছরের ইতিহাস হচ্ছে ভাঙাগড়ার ইতিহাস। সেই সঙ্গে নোয়াখালী জিলা স্কুলের ইতিহাসও ভাঙাগড়ার ইতিহাস বলা যায়। ১৯৪৮ সালের আগ পর্যন্ত বহুবার মেঘনার অতলে ঠাঁই নিয়েছে জিলা স্কুল। ১৮৫০ সালে বেসরকারি উদ্যোগে আয়ারল্যান্ডের সরকারি কর্মচারী নি. জোনস নোয়াখালী জেলার পুরোনো শহরে (সুধারাম) জিলা স্কুল নির্মাণ করেন। প্রথম তিন বছর বেসরকারিভাবে স্কুলের কার্যক্রম চলতে থাকে।
১৮৫৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার স্কুলটিকে সরকারি করে নেয়। ১৮ শতকে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের বেশ কিছু জেলায় সরকারিভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬টি ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১১টি জিলা স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালী জিলা স্কুল অন্যতম। সময়ের চাকায় চড়ে ঠিক ১০০ বছর আগে একটু ঘুরে আসা যাক। জেলার সর্বদক্ষিণের রেলস্টেশন সোনাপুরের মাইলখানেক দক্ষিণে ছিল তখনকার নোয়াখালী জেলা সদর সুধারাম। সেখানেই অবস্থিত ছিল নোয়াখালী জিলা স্কুল।১৯২০ সালে নদীভাঙানের ফলে নোয়াখালীর পুরোনো শহর সুধারামের সঙ্গে নোয়াখালী জিলা স্কুলও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জেলা সদর সুধারামের মতো তখনকার জিলা স্কুলও ছিল ঐতিহ্যের, ইতিহাসের এবং সর্বোপরি গর্বেরও। এখন তা ঠাঁই নিয়েছে স্মৃতির পাতায়।নদীভাঙনের ফলে জেলার মতো জিলা স্কুলও বারবার স্থান বদলিয়েছে, যার ফলে নোয়াখালী জিলা স্কুলের প্রথম ১০০ বছরের নথিগুলো মিশে আছে মেঘনার বুকে। নোয়াখালী জিলা স্কুলের শত ইতিহাস এখনো নিজের গর্ভে রেখে দিয়েছে রাক্ষুসি মেঘনা।
১৯২১ সালে সোনাপুরের দক্ষিণে মহব্বতপুর গ্রামের পূর্ব প্রান্তে মন্তিয়ার ঘোনায় নোয়াখালী জিলা স্কুল স্থানান্তরিত করা হয়। নতুন জায়গায় এবার দুই বছরের বেশি টিকতে পারেনি। সেই নদীভাঙনের ফলে আবারও জিলা স্কুল নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। এরপর ১৯২৩ সালের ১ জানুয়ারি জিলা স্কুলকে আরকে জুবলী স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়। আরকে জুবলী স্কুলের মজার একটি ইতিহাস রয়েছে। রায় রাজকুমার দত্ত বাহাদুর স্কুলটি ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন স্কুলের ছাউনি ছিল টিনের তৈরি। স্কুলে দুই ছাত্র বজ্রাঘাতে মারা গেলে তিনি স্কুলটি পাকা দালান করে দেন। ১৯২৩ সালে জিলা স্কুল এখানে স্থানান্তরিত হলে নতুন স্কুলের নামকরণ করা হয় আর কে জিলা স্কুল। প্রায় আট বছর জিলা স্কুল এভাবে চলার পর আবারও নদীভাঙনের শিকার হয়। এরপর ১৯৩১ সালে জিলা স্কুল চলে আসে আহম্মদিয়া মাদ্রাসার প্রভাতি শাখায়। আহম্মদিয়া মাদ্রাসার প্রভাতি শাখায় চলাকালীন আবারও নদীভাঙনের কারণে জিলা স্কুলকে বঙ্গবিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়।