গণমাধ্যম, বিনোদনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষকে কাঁদিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান, বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর মোস্তফা কামাল সৈয়দ চলে গেলেন না ফেরার দেশে।রোববার দুপুর দেড়টায় মোস্তফা কামাল সৈয়দ রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ খবর প্রকাশের পর বিভিন্ন অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোক নামে এনটিভি পরিবারে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। কর্মচঞ্চল এ মানুষটির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ।
স্বনামধন্য টিভি প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও পরিচালক হিসেবেও পরিচিতি ছিল মোস্তফা কামাল সৈয়দের। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) উপমহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহেনা।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুর খবরে এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জীবন-মৃত্যু মহান আল্লাহ তায়ালার হাতে। তবুও আমরা তাঁর সুস্থতা ও সুচিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। পাশাপাশি আল্লাহর করুণা লাভের আশায় ১৮টি মসজিদে কোরআন খতম করিয়েছিলাম।’
এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আলফ্রেড খোকন বলেন, ‘প্রধান মোস্তফা কামালের মৃত্যুতে আমরা ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছি। এ খবর মেনে নেওয়ার মতো নয়। এনটিভি পরিবার মৃতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।’
আলফ্রেড খোকন জানান, গত ১১ মে মোস্তফা কামাল সৈয়দ অসুস্থ হলে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। আজ দুপুরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পর্দার পেছনের মানুষ হলেও মিডিয়া জগতে সজ্জন ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ বাংলাদেশের দর্শকের কাছে খুব চেনা। আশি দশকের শুরুতে বিটিভির নাটকের শুরুতে সূচনা সংগীতের পাশাপাশি ভূমিকা কিংবা পুরো নাটকের সারমর্ম সূচনাপর্বে নেপথ্য কণ্ঠে ভেসে আসত। অনেক সময় নাটকের শেষে নেপথ্যে থেকে কিছু না বলা কথা প্রচার হতো। সে সময়ের বেশির ভাগ নাটকের ভূমিকায় কিংবা উপসংহারে শোনা যেত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় বেশ কিছু নাটক দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সত্তর দশকের শেষের দিকে তাঁর প্রযোজনায় মমতাজউদদীন আহমদ লেখা ‘প্রজাপতি মন’, আশি দশকের শুরুতে আন্তন চেখবের গল্প অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘স্বপ্ন বিলাস’ ছাড়াও ‘নিলয় না জানি’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘কুল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি সফল নাটকের সফল প্রযোজক ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। আজ দুপুর সাড়ের ৩টার দিকে ডিরেক্টরস গিল্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়। শোকবার্তায় লেখা হয়, ‘টেলিভিশন নাটকের দর্শকরুচি তৈরিতে তাঁর অসামান্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিটিভির সেই সময়ে তাঁর প্রযোজিত নাটক দারুণ সাড়া ফেলেছিল। কুল নাই, কিনার নাই তার মধ্যে অগ্রগণ্য। এনটিভির দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের নাটক জনপ্রিয় করার নেপথ্য নায়ক ছিলেন তিনি। গল্প ভাবনা, নির্মাণ কৌশল সম্পর্কে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে নবীন-প্রবীণ সবার সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি করে জনপ্রিয় সব নাটক উপহার দেন। সে কারণে এনটিভির নাটক দর্শকহৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে নেয়। তাঁর নির্মোহ দূরদৃষ্টি সমাজ এবং পরিবারের প্রতি ইতিবাচক ভাবনার সার্থক প্রয়োগ ঘটান এনটিভির নাটকে।’
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
We use cookies to ensure you get the best experience on our website.