স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারি খাত নির্ভর হওয়ার খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ
বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের কোন কমতি নেই।
সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনার মান যখন দিনকে দিন অবনতির দিকে গেছে, তখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের আধিপত্য বেড়েছে।
কিন্তু কোভিড১৯ মহামারির এই সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তখন একমাত্র ভরসার জায়গা হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলো।
বেসরকারি খাতের আধিপত্য বেড়েছে কেন?
ঢাকার বাসিন্দা ফেরদৌস আরা রুমি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ছোট-খাটো শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিকিসকের শরণাপন্ন হন।
কোথায় চিকিৎসা করাবেন? এমন ভাবনার শুরুতে মনে আসে বেসরকারি হাসপাতালের কথা। তিনি বলেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই বেসরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভর করতে হয়।
"বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, ডাক্তাররা চেম্বার করেন বেসরকারি হসপিটালে। সরকারি হাসপাতালে লম্বা লাইন ধরতে হয়। সব মিলিয়ে বেসরকারি হসপিটাল প্রেফার করি," বলছিলেন ফেরদৌস আরা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে তিনি 'মন্দের ভালো' হিসেবে বর্ণনা করেন।
বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলো অতি দরিদ্রদের হাসপাতাল হিসেবেই পরিচিত।
যাদের আর্থিক সামর্থ্য কিছুটা হলেও ভালো, তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে মোটেও ইচ্ছুক নন।
যারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান তাদের অধিকাংশকে শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে।
অর্থাৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের দাপট এখন বেশ জোরালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১৯৯০ এর গোড়া থেকে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিভিন্ন খাতে যেভাবে বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার ঢেউ লেগেছে স্বাস্থ্য খাতেও।
বেসরকারি খাতের উপর অতি নির্ভরশীলতা যে ভালো নয় সেটি প্রমাণ হয়েছে এবার কোভিড-১৯ মহামারির সময়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইড-এর আঞ্চলিক পরিচালক ডা. খায়রুল ইসলাম বলছেন, "স্বাস্থ্য খাতের এই দুরাবস্থার একটা বড় কারণ হচ্ছে যখন থেকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তা দুর্বল হতে শুরু করলো এবং বিশ্বব্যাংক টোটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা শুরু করল। প্রাইভেট সেক্টরকে অতি বাড়তে দেবার কুফল এখন আমরা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি।"
বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই
কোভিড-১৯ কিংবা অন্যান্য রোগের চিকিৎসা নিতে মানুষ যখন বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটোছুটি করছে, ঠিক সেই সময়ে বহু বেসরকারি হাসপাতাল মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুধু করোনাভাইরাস নয়, গত দুইমাস যাবত বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল অন্য রোগীদের চিকিৎসা দেবার ক্ষেত্রে টালবাহানা করছে।
ডা. ইয়াসমিন হেমায়েত উদ্দিন ১৫ বছর যাবত মেরি স্টোপস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের উপর সরকারের যে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই সেটি বেশ পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে মহামারির এই সময়ে।
তিনি বলেন, "প্রাইভেট সেক্টরে কী হচ্ছে? কীভাবে এটাকে আরো শক্তিশালী করা যায়? এ কর্তৃত্বটা সরকার কখনো প্রাইভেট সেক্টরের উপর করতে পারেনি। প্রাইভেট সেক্টরটাকে আমরা কখনো আমাদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনতে পারিনি,"