
মাতৃত্বের বন্ধনে 'ছেদ' তবুও সেবার ব্রত
মায়ের ওড়না বুঝিয়ে দেবে বলে হাতে নিয়ে বসে আছে জোয়ার। সেই অপেক্ষা কাটে এক মাস পর। খুশি হয় ১৩ মাস বয়সী জোয়ার। তবে জোয়ারের মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু। প্রায় এক মাস পর সন্তানকে ছুঁয়ে দেখার সেই অনুভূতি থেকেই আনন্দের এ কান্না।
জোয়ারের মা সৈয়দা নেয়ামত ই ফেরদৌসী করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক। করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন ১০ দিন। এরপর আবার ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন। সৈয়দা নেয়ামতের ঘরে রয়েছে পাঁচ বছর বয়সী চন্দ্র নামে আরেক সন্তান।
জানালেন, বৃহস্পতিবার থেকে আবার করোনা রোগীদের সেবায় তিনি নিয়োজিত হয়েছেন। আবারও একই কারণে সন্তানদের থেকে প্রায় এক মাস দূরে থাকতে হবে। মাতৃত্বের বন্ধনে 'ছেদ' পড়লেও সেবার ব্রত নিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে চান বলে জানালেন।
সৈয়দা নেয়ামতের মতো আরো বেশ কয়েকজন নারী করোনাযোদ্ধা রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। করোনা আক্রান্ত রোগীদেরকে তাঁরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদেরই কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে, মাতৃত্বের বন্ধনের সেই ছেদের কথা জানান তাঁরা। অনেকের কণ্ঠই তখন ভার হয়ে আসে। তবে সেবা দিতে এতটুকু পিছপা হবেন না বলেই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
অনেক প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নারী চিকিৎসকদের সেবার প্রশংসা করেছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ। বৃহস্পতিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়োগে নারী চিকিৎসকদের প্রাধান্যই বেশি। করোনা আক্রান্তদের সেবায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তুলনামূলকভাবে বেশি নারী চিকিৎসক রয়েছেন। নতুন আরো ৯ জন চিকিৎসক এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আমরা চেষ্টা করছি যারা খুব সহজে কাজ করতে পারবেন বিশেষ করে যাদের ছোট্ট বাচ্চা নেই কিংবা গর্ভবতী নন তাঁদেরকে আইসোলেশনে সেবার দায়িত্ব দেওয়ার।
কথা হয় চিকিৎসক জিনান রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি। ৯ বছর বয়সী মেয়েটাকে একটু দূরে দূরে রাখার চেষ্টা করি। স্বামীও চিকিৎসক হওয়ায় বাবা-মা (নানা-নানি) ভরসা। কিন্তু তাঁদের অসুস্থতাও ভাবাচ্ছিল। তারপরও যেতে হয়ে দায়িত্বের খাতিরে।