সৈয়দ হাসানুর রহমান

মানুষের একটা ভুল ধারণা যে গান থেকে দূরে সরে গিয়েছি আমি: হাসান

সুমাইয়া মারিয়া বিনতে শহীদ
লেখক
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:১৪
আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:১৪

সৈয়দ হাসানুর রহমান। ছবি: নূর, প্রিয়,কম। 

(প্রিয়.কম) পুরো নাম সৈয়দ হাসানুর রহমান। তবে হাসান নামেই তিনি অধিক পরিচিত তার ভক্তকুলে। নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পীর গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। তিনি ১৯৯৬ সালে ব্যান্ড ‘আর্ক’ এ ভোকালিস্ট হিসাবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ‘আর্ক’ ছেড়ে নতুন ব্যান্ড ‘স্বাধীনতা’ গঠন করেন। ২০১০ সালের শেষের দিকে তিনি আবার আর্কে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে ‘আর্ক’ এ থাকাকালীন ‘তাজমহল’ নামে আর্কের একটি অ্যালবাম প্রকাশ হয়। এই অ্যালবামে তার গাওয়া গানগুলো ছিল তার নিজের লেখা এবং সুর করা। দুই বছর পর ১৯৯৮ সালে তার ব্যান্ড ‘আর্ক’ ‘জন্মভূমি’ নামে আরেকটি অ্যালবাম বের করে। ঐ সময়ে অ্যালবামের গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। হাসান ও তার সঙ্গীত জীবন নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন প্রিয়.কমের সঙ্গে।  

প্রিয়.কম: তুমুল জনপ্রিয় হাসান হঠাৎ করেই গানের পাড়া থেকে উধাও...

হাসান: আসলে আমার একটা সময় ছিল। একটা স্টাইল বা ধারা নিয়ে কাজ করেছি। যেটা আর্ক ব্যান্ডের মাধ্যমে হয়েছিল। এখনকার যুগে শ্রোতা চাহিদা অনেক পরিবর্তন। মিউজিক বিশ্বও এখন অনেক এগিয়ে গেছে, সুতরাং গানও কিন্তু সেভাবে তাল মিলিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবার কথা আমাদের দেশে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে  ৯০ দশকের সেই  ব্যান্ড সঙ্গীতের ধারাটা আমরা আর ফিরিয়ে আনতে পারিনি। আমি ৯৬ সাল যেহেতু গান করেছি এখন আবার অনুভব করি যে, কিছু একটা করা উচিৎ। কিছু একটা রেখে যাওয়া উচিৎ যা দর্শকদের আবার আনন্দ দেবে নতুন প্রজন্মকে সব কিছু মিলিয়ে অনুপ্রেরণা দেবে, উপকৃত করবে। সে জন্য অনেকদিন ধরে কাজ করেছি। মানুষের একটা ভুল ধারণা যে গান থেকে দূরে সরে গিয়েছি আমি। যারা গান করেন তারা গান থেকে আসলে দূরে সরে যান না, যেতে পারেন না। সে জন্য আমিও যেতে পারিনি। যখন আমি মনে করব যে দর্শকদেরকে শ্রোতাদেরকে আনন্দ দেবার মতন আবার কিছু করতে পেরেছি, তখনই আমি আসলে আত্মপ্রকাশটা করতে চাই। সে জন্য অনেকদিন সময় নিচ্ছি। গান নিয়ে গানের আন্ডারগ্রাউন্ডে অনেক কাজ করছি। শিখছি নতুন কিছু।

প্রিয়.কম: ছোট হাসান কিভাবে গানে আসলো?

হাসান: অনেকের ধারণা আমি হয়তো ছোটবেলা থেকে গান করি। একজন শিল্পীর হয়তো সব কিছু শুরু হয় ছোটবেলা থেকে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে উল্টা হয়েছে। আমি অনেক দেরিতে গান শুরু করি। কিন্তু হ্যাঁ, ছোট বেলায় আমি গান শুনতাম অনেক ধরনের। গানের কালেকশনও ছিল অনেক। সেগুলো আমাকে আলোড়িত করত। কিন্তু গান যে কোন দিন গাব এরকম চিন্তাও করিনি কোনো দিন। আমি সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অঙ্গনের সাথে জড়িত ছিলাম। সাংস্কৃতিক অঙ্গন বলতে অভিনয় করতাম, আবৃত্তি করতাম, রণসংগীত করতাম, নিজে কবিতা লিখতাম। একজন শিশু কবি হিসেবে যতটুকু লিখতে পারে। ঐ ধরনের একটা চর্চার মধ্যে ছিলাম। তো আমার এক স্কুল বন্ধু ছিল ও বলতো যে আমার কণ্ঠে একটা সুর আছে, যে আওয়াজটা আছে সেটা গানের জন্য খুব ভালো। এটা ক্লাস টেনের দিকের কথা। এইভাবেই আমার গান গাওয়ার প্রতি প্রথম ইচ্ছা হল। তবে গাইবো যখন শুদ্ধ বাংলা গান গাওয়ার ইচ্ছা ছিল। এই জন্য আমি পল্লীগীতির উপর একটা ডিপ্লোমা কোর্স করেছি। বাংলা ঠিকঠাক উচ্চারণ এবং বাংলা গানের সাথে অভ্যস্ত হবার জন্য। পাশাপাশি বিভিন্ন ইংরেজি গান কভার করতাম। পরবর্তীতে আসলে এটাই আমার কাজে দেয়।

প্রিয়.কম: পরিবারের অনুপ্রেরণা কেমন ছিল?

হাসান: অবশ্যই পরিবারের অনুপ্রেরণাটা আসল। আমার বাসায় এই সব ব্যাপারে একদম উৎসাহ ছিল না। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। যার জন্য আসলে গানে দেরিতে আসা। তবে হ্যাঁ, আমি বড় হয়েছি একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে। আমার শ্রদ্ধেয় বড় বোন হুসেন আফরোজ, যাকে বুবু বলে ডাকি। উনি একজন অভিনেত্রী ছিলেন এবং আরো অনেক কিছু করতেন যেমন আবৃত্তি করতেন, রেডিওতে যে নাটকগুলো ছিল ওগুলাতে রেগুলার শিল্পী ছিলেন তিনি। আর আমি যেহেতু আমার জমজ ভাইদের একজন ছিলাম তাই আমাকে আমার বুবুই পালতেন। তো ওনার কোলে কোলে ঘুরে বেড়ানোর কারণে ওনার যে কালচারাল এক্টিভিটিস ছিল সেগুলা আমি সব সময় দেখতে পেতাম কাছ থেকে। নাটকের স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করতেন আমার সামনে। আমার অবুঝ কানে আওয়াজগুলো আসতো। আমার ভালো লাগতো।

প্রিয়.কম: প্রতিবন্ধকতা কী কী ছিল?

হাসান: পরবর্তীতে যখন গান করতে যাই তখন সব প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হই। আমার পরিবার কোনোভাবেই সাপোর্ট করতো না যে আমি গান করি। কেও পছন্দ করেনি। সে অনেক অনেক লম্বা কাহিনি। যাই হোক, আমি লুকিয়ে হোক যেভাবেই হোক গান করেছি। আমি আমার গানের দুই লাইন বলি...  

‘কেও জানতো না কত যতন করে

গড়েছি সঙ্গীত এই জীবনটা তোমাদের তরে।’

এমন আরো অনেক কথা আছে এই গানটার মধ্যে। এখন ঠিক মনে পড়ছে না। তো একদম টিভিতে আসার পরই সবাই দেখেছে যে আমি গান করি। তখন বাসার সবার একটাই প্রশ্ন ‘কিরে তুই আবার গান গাস কেমন করে? পরবর্তীতে ‘গান করে কি হবে? ছেড়ে দাও’ এই ধরনের কথা সব সময় আমাকে ফেস করতে হতো। 

প্রিয়.কম: এই বড় চুল রাখার গল্প জানতে চাই। 

হাসান: গানের শুরুতে কিন্তু চুল এতো বড় ছিল না। আমি গান শুরু করি ১৯৯৩ সাল থেকে। পরে চুল বড় করি ৯৬ সালের দিকে। তো এইটাতে কিন্তু আসলে অনেক কষ্ট আছে। কারণ লম্বা চুল রেখে তা সেপে রাখা অনেক কঠিন। দেড় দুই বছর লেগেছিলো। 

(একটু হেসেই) তখন ভাগ্যক্রমে আমার বাবা ছিলেন না বাংলাদেশে। তিনি থাকলে হয়তো করতে দিতেন না। উনি আমেরিকায় ছিলেন, ঐ সময়টাকেই কাজে লাগাই পুরোপুরি। এর ভিতর চুল নিয়ে অনেক যুদ্ধ। তাও রাখতে পেরেছি। তো অনেক সংখ্যক মানুষের কাছে যখন পরিচিতি পেয়ে যাই চুল নিয়ে, তখন আর তেমন কিছু বলত না।

প্রিয়.কম: আমরা জেনেছি যে ২০০২ এ আপনি আর্ক ছেড়ে ২০০৪ সালে একটি ব্যান্ড তৈরি করেন ‘স্বাধীনতা’ নামে। তারপর সেটা ছেড়ে ‘জন্মভূমি’ তৈরি করেন। এতো পরিবর্তনের কারণ কী?

হাসান: নাহ, এটা একদম ভুল ইনফরমেশন। উইকিপিডিয়াতেও দেখেছি। এগুলো না জেনেই ভুল ইনফরমেশন দিয়ে রেখেছে। আমি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি, ২০০১ এর শেষের দিকে আমাদের আর্ক ব্যান্ডের লাইন আপের একটা সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা আশিকুজ্জামান টুলু বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান। আমি অনেক একা হয়ে গিয়েছিলাম। তো বিভিন্ন কারণে একটা গ্যাপ হয়ে গিয়েছিলো। ঐ সময় আমরা ‘স্বাধীনতা’ নামে একটা ব্যান্ড দুই বছরের জন্য করেছিলাম। কিন্তু ঐটা দুই বছরই। তারপর আবার আমি আর্কে চলে আসি। মাঝে জন্মভূমি নামে কোনো ব্যান্ড আমরা তৈরি করিনি। 

প্রিয়.কম: এক একটা জনপ্রিয় গানের তো কোন গল্প থাকে, এমন কোন গানের গল্প জানতে চাই।

হাসান: আমার গানগুলা সব আমার জীবনের গল্প থেকে করা। সব সত্য ঘটনা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েই এক একটা গান তৈরি। যেমন ‘সুইটি তুমি আর কেঁদো না’ গানের সুইটি অবশ্যই ছিল। এটা একটা চরিত্র। প্রতিটা পুরুষের মনেই একজন নারীর অস্তিত্ব থাকে, সেই হল সুইটি। তো আমার বেলায়ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তো সেই চরিত্র নিয়েই গানের সৃষ্টি হল সুইটি। আবার ‘একাকী’ গানটায় প্রিয়জনের কথা ভেবে ঘুম না আসা, কিছু অভিমানের কথা এই সব তো আমাদের জীবনেই আছে, তাই গানে গানে বর্ণনা করা।

প্রিয়.কম: খ্যাতির বিড়ম্বনা বা মজার কোনো ঘটনা?

হাসান: মজার ঘটনাই আসলে বেশি। সে সময় দেখা যেত আমার চুল অনেকে ধরে দেখতে চাইতো, আবার বেশির ভাগ মেয়েরা এসে জিজ্ঞেস করতো কীভাবে চুলের যত্ন নেই, কি শ্যাম্পু ব্যবহার করি? আমার চুল আলোচিত একটা বিষয় ছিল। যেখানেই যেতাম এই ব্যাপারটা থাকতোই। আর গল্প তো অসংখ্য। এখন যেটা মনে পড়ছে, যেমন একবার আমিরা যাচ্ছি ফরিদপুরে। রাতে ফেরিতে সবাই। তো তখন দেখি ১২টার দিকে একটা কেক আসলো লেখা ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু হাসান’। আমার তখন খেয়াল হলো যে ১২ টা বেজে গেছে আর ১৯ এপ্রিল। তো আমি কিছুই জানতাম না। পুরো ফেরির লোক জড়ো হয়েছিল। এটা একটা। আর একটা স্মৃতি রাজেন্দ্রপুর কলেজে একটা কনসার্টের মাঠে প্রায় ৩০ হাজার এর মতো দর্শক ছিল। রাতে গান করছিলাম। তো তারা ১২টার সময় দেখি চিৎকার করে বলছে ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু হাসান’। তখন কেক কাটি। এ ঘটনাগুলো আমার জন্য খুব আনন্দের একটা ব্যাপার। মানুষের ভালোবাসা এভাবে পাওয়া, এভাবে লাইভ কেক কাটা। এটা স্বরণীয় সময় আর কি।

জনপ্রিয় গান নিয়ে ফিরতে চান। ছবি: নূর, প্রিয়.কম। 

প্রিয়.কম: তখনকার মতো এখনকার ব্যান্ডগুলো সেভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না...

হাসান: ডেডিকেশনটা খুব দরকার, আগে যে ব্যাপারটা ছিল আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা ক্রিয়েটিভ ব্যাপার ছিল। প্র্যাকটিসেরও একটা প্রবণতা ছিল। সবার মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল যেটা এখন কম, এটা একটা কারণ হতে পারে। এখন জেনারেশন অনেক অ্যাডভান্স, মিউজিক অনেক অ্যাডভান্স, সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি আগের থেকে। এখন তো আরও ভালো হওয়া উচিৎ এবং হচ্ছেও হয়তো। অনেকে ভালো করছে আমি মনে করি যে ডেডিকেশন থাকলে সব সময়ের জন্যই এটা সমান। সেটা ৫০ সালের কথা চিন্তা করি তখনও গান তৈরি হয়েছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ৭০ দশকেও তাই, আবার ৯০ দশকেও হয়েছে, এখনো হবে, আরো ভালো হবে। 

প্রিয়.কম: এখনকার কোনো পছন্দের ব্যান্ড ?

হাসান: এখনকার অনেক ব্যান্ড ভালো করছে। সব নতুন নতুন মিউজিক আসছে। কিন্তু ঐ যে, যাকে বলে কালজয়ী গান আর কি, তা হয়তো আসছে না। এইটুকুই খালি কমতি আছে। এছাড়া সবাই ভালো করছে।

প্রিয়.কম: পরিবারের গল্প...

হাসান: পরিবারে আমার মা বেঁচে আছেন। আব্বা মারা গেছেন ২০০২ সালে। ৪ ভাই ৩ বোন। আমি বলতে গেলে সবার ছোট। কিন্তু আমার তো জমজ আছে এই যে (সামনে বসে থাকা জমজ ভাই হুসেন কে দেখিয়ে)। আর বিবাহিত জীবনে একটা ছেলে একটা মেয়ে আছে। ছেলের নাম হাসিন, মেয়ে নূরজাহান। ছেলে বড় হয়ে গেছে। 

প্রিয়.কম: ছেলে কি গানে আসবে?

হাসান: না, ও গানে আসবে কিনা জানি না। আমি আসলে কখনোই ওকে জোর করি না বা চাপিয়ে দেই না আমাকে ফলো করার জন্য। আমার প্রফেশনে আসার জন্য। ক্রিয়েটিভ মানুষ যারা তারা যেকোনো বিষয়কে মেলে ধরতে পারে। তো যার যেদিকে যেতে ইচ্ছা করে তাকে সেদিকেই যেতে দেয়া উচিৎ। 

প্রিয়.কম: অবসর সময় কী করা হয় ?

হাসান: অবসর সময় বলতে গেলে আমার মেয়ের সাথে সময় কাটাই আর গান শোনা। 

প্রিয়.কম: দেশের বাইরে শো করতে গেলে কেমন সাড়া পান?

হাসান: একই রকম, দেশের মতোই। যখন বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন থাকে সবাই জড়ো হন, তখন দেশের মতোই লাগে।

প্রিয়.কম: ঘুরে বেড়াতে কোথায় ভালো লাগে?

হাসান: প্রিয় জায়গা? বিলাশ ভ্রমণ যদি বলি তো থাইল্যান্ড, ব্যংকক। আর দেশের মধ্যেই আসলে ঘুরার মতো অনেক জায়গা আছে। কিন্তু আমি আসলে সেভাবে দেখিনি। আমি যখনই কোনো কাজে গিয়েছি তখনই সেই জায়গাটা ঘুরার চেষ্টা করেছি।

প্রিয়.কম: একটা সময় অনেক ব্যস্ততা ছিল, এখন তো কমে গেছে। সেই ব্যাপারটা কেমন লাগে ? 

হাসান: আগের ব্যস্ততা বলতে আগে একটা অ্যালবাম বের করার আগে অডিও, ভিডিও, ফটোসেশন যাকে বলি ওগুলো এখন সত্যি অনেক কম। তবে আবার নতুন কাজে হাত দিলে সেই ব্যস্ততাগুলো চলে আসবে।

সংগীত নিয়ে রয়েছে নিজস্ব চিন্তা। ছবি: নূর, প্রিয়.কম। 

প্রিয়.কম: গানের আইডল কে আপনার?

হাসান: মাইকেল জ্যাকসন। মানুষের কণ্ঠ এতো মধুর হতে পারে বা এতো সুন্দর করে কীভাবে গায় এটাই তাড়িয়ে বেড়াতো। 

প্রিয়.কম: প্রিয় রঙ?

হাসান: কালো, নীল।

প্রিয়.কম: কী খেতে পছন্দ?

হাসান: স্যুপ। আমি খুব সিম্পল খেতে পছন্দ করি। যত নরমাল হয়।

প্রিয়.কম: প্রিয় ব্যক্তিত্ব?

হাসান: চির ঋণী ব্যক্তিত্ব বলব আমার বড় বোন, মানে বুবু যার কথা আগেই বললাম। আর ভক্তির জায়গা থেকে আমার বাবা। উনি যেমন দায়িত্ব পালন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তেমনি যেন আমিও আমার জীবনে পারি। 

প্রিয়.কম: আপাতত জীবনে অপ্রাপ্তি?

হাসান: এতো চাই তবুও কেন পাই না

এতো চাইনি যতটা পাওয়ার নয়

আমি আজ বেদনাহত

অতোটা পাইনি যতটা চাওয়ার নয়

যদি তা চাইতাম তবে ফিরে যেতাম সেই অতীত জীবনের ভূমিকায়

দূর বহুদূরে সুরে সুরে কত অতৃপ্তির বাসনাই 

নতুন করে সুধরে নিতাম চাওয়া পাওয়ার হিসাবটুকু।

এর মানে হচ্ছে যে আমার প্রাপ্তি অনেক আছে। আমি তো অতোটা চাইনি আল্লাহ যতটা পাওয়ার নয়, যতটা পাওয়া সম্ভব নয় অতোটা তো চাইনা। খুব সিম্পল জিনিস অনেকে অনেক কিছু চেয়ে পায় না। যদি অপ্রাপ্তি বলি তবে আমি আমার সেই পিছন ফিরে যেতে চাই যেখানে অনেক অপ্রাপ্তি ছিল সেগুলাকে নতুন করে সুধরে নিতাম। যদি আর একবার সুযোগ পেতাম পিছনের সব ভুল ভ্রান্তি সুধরে আসতাম। 

প্রিয়.কম: আর্কের বর্তমান অবস্থা কী?

হাসান: আর্কের বর্তমান অবস্থা ভালো। খুব শিগগিরই আমরা আবার শ্রোতাদের মাঝে আসব, তখন সেটা ভালো করে বোঝা যাবে। এমনি আমরা রেগুলার শো করে যাচ্ছি। আর হচ্ছে ভালো গান ভালো কাজের জন্য কাজ করে যাওয়া। সেদিকেই মনটা বেশি।

প্রিয়.কম: হাসানের প্রথম ইনকাম?

হাসান: আমি ৯৩ সালে ‘কপিয়ার’ বলে একটা অ্যালবাম করেছিলাম। ঐটাই কিন্তু প্রথমবার মাইক্রো ফোনের সামনে গান গেয়েছিলাম। তো যার জন্য একদম আনকোরা ছিলাম। গান যে গাচ্ছি এটাই অনেক বড় ব্যাপার তখন। ইনকামের ব্যাপারটি আসেইনি। আমি তেমন একটা অনুভুতিতেই ছিলাম। তখন আশিকুজ্জাম টুলু ভাইয়া বললেন তুমি কি চাও? তখন একটা একোস্টিক গিটার হলেই আমি খুশি। তো আমি সেটাই চাই। কিন্তু পরে তিনি আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দেন। তো আমি ভেবেছিলাম ১৮০০টাকা হলে একটা গিটার হয়ে যাবে এমন কিছুই আছে। তো আমি গুণে দেখি ৮০০০টাকা! তখন আমি অবাক হলাম এই ভেবে যে আমি কে? আমি কি গাইলাম তার আবার পেমেন্ট, তাও কিনা চারগুণ! এই যে সারপ্রাইজটা এটা আসলে স্বপ্নের মতো ছিল। এরপর জীবনে অনেক পেয়েছি। একটি সোলো অ্যালবামে সব্বোর্চ অ্যামাউন্ট আমি বাংলাদেশের মধ্যে পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই অনুভুতিটার মতো না।

প্রিয়.কম: নিজের লেখা গানের সংখ্যা কত?

হাসান: প্রায় ২০০ এর উপরে।

প্রিয়.কম: গিটার শেখা কার কাছে?

হাসান: কারো কাছে না। একাই দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করতাম। শিখে গেলাম।

প্রিয়.কম: নিজের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ চিন্তা...

হাসান: আমি যেন ভালো কাজ করে যেতে পারি। নিজের অপূর্ণ অসমাপ্ত কাজ যেন শেষ করে যেতে পারি। অপ্রাপ্তির হিসাব নিকেশগুলো যেন আমি ঠিক ভাবে মিলিয়ে নিতে পারি। মানুষের জন্য কিছু দিয়ে যেতে পারি। এগুলো করতে পারাই হচ্ছে আমার জন্য সবচেয়ে পাওয়া। আমার ভবিষ্যৎ এর মাঝেই। 

গানেই ধ্যান-জ্ঞান তার। ছবি: নূর, প্রিয়.কম। 

সম্পাদনা: গোরা