ছবি সংগৃহীত

প্রিয় গন্তব্য: সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির

খন্দকার ইশতিয়াক মাহমুদ
লেখক
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৬:০৩
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৬:০৩

 হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। ছবি: পর্যটন লিপি।
 
(প্রিয়.কম): সিরাজগঞ্জ এলাকাটি প্রাচীন প্রত্ন-সম্পদে বেশ সমৃদ্ধ। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির তার একটা প্রমাণ। গঠন স্থাপত্যের দিক থেকে এই মন্দিরের সাথে কান্তজীউ মন্দিরের অনেক মিল আছে। দুটো মন্দিরই অপরূপ নকশার টেরাকোটায় সজ্জিত।
 
কোথায়: নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত বলে একে হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির নামেও ডাকা হয়। তবে স্থানীয়ভাবে এটি দোলমঞ্চ নামেও পরিচিত।
 
মন্দিরের করিডোর। ছবি: পর্যটন লিপি।
 
কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়কপথে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে পশ্চিম সংযোগ সড়কের সিরাজগঞ্জ সড়কের চৌরাস্তায় নামতে হবে। সেখান থেকে সিরাজগঞ্জ সড়ক। রিকশা বা ভ্যানে ২ কিলোমিটার উত্তরে হাটিকুমরুল। এরপর যেতে হবে মেঠো-পথে। এক কিলোমিটার গেলেই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। গাবতলি ও মহাখালী থেকে অনেক বাস পাবেন যাবার জন্য। আংশিক পথ ট্রেনেও যাওয়া সম্ভব। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৮.৩০ মিনিটে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্লাপাড়া স্টেশন হয়ে যায়। সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশাতে সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত আসতে হবে।
 
ভিন্ন দিক থেকে নবরত্ন মন্দির। ছবি: পর্যটন লিপি।
 
স্থাপত্য: তিনতলা মন্দিরের মূল চূড়া নয়টি। মন্দিরের প্রবেশ পথ পূর্ব দিকে, কুঠুরির উত্তরে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। ভিতর থেকে মূল ভবনের ওপরের ছাদ গোলাকার গম্বুজে আচ্ছাদিত। মন্দিরের কেন্দ্রীয় কক্ষ বা উপাসনা কক্ষের ঠিক উপরে একই আকৃতির আরও একটি কক্ষ রয়েছে এবং এই কক্ষের চারিদিকে বারান্দা রয়েছে। এটা আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং ওপরে গম্বুজ আকৃতির আরও একটি ছাদ রয়েছে। মন্দিরের পাশেই একটি পুকুর। এই পুকুরটিকে ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। কেউ বলেন, ‘এখানে দেব-দেবীর আস্তানা রয়েছে।’ আবার কেউ বলেন, ‘জমিদারের গুপ্তধন লুকানো রয়েছে। পোড়ামাটি দিয়ে লতাপাতা ফলমূল এবং দেবদেবীর চিত্রফলক খচিত এই ৯ চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরের নামকরণ করা হয় নবরত্ন মন্দির। বর্গাকার এই মন্দিরের আয়তন ১৫ দশমিক ৪ মিটার। অর্থাৎ চারদিকে ইট-সুরকির গাঁথুনির পুরু দেয়াল। মন্দিরের মূল স্তম্ভের উপরে পোড়ামাটির সুশোভিত চিত্রফলক। ফুল, ফল, লতা-পাতা আর দেব-দেবীর মূর্তি খচিত এই ফলক মধ্যযুগীয় শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ। শুধু ফলক নয় পাতলা ইটের সুরকির গাঁথুনির দেয়ালে মধ্যযুগীয় শিল্পের ছোঁয়া স্পষ্ট। নবরত্ন মন্দিরের ৫০ মিটার দূরে আরও একটি সুশোভিত কারুকাজ খচিত শিবমন্দির এবং পূজা অর্চনার জন্য অপর একটি মন্দির রয়েছে।
 
ইতিহাস: মন্দিরের উৎস নিশ্চিতভাবে জানা যায় না, তবে কিছু পুঁথি থেকে জানা যায় যে, নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে রামনাথ ভাদুড়ী নামে জনৈক তহসিলদার খ্রি. ১৭০৪-১৭২৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এটি নির্মাণ করেছিলেন। শোনা যায় যে এটা দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়।
 
আবার অন্যরকম গল্পও শোনা যায়। দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথের কাছের মানুষ ছিলেন জমিদার রামনাথ ভাদুড়ী। প্রাণনাথ দিনাজপুরে ঐতিহাসিক কান্তজীউ মন্দির নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েন। ফলে সে বছরের রাজস্ব পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন বন্ধু রামনাথ ভাদুড়ী। নিজ কোষাগারের টাকা দিয়ে রাজা প্রাণনাথের খাজনার বকেয়া শোধ করে দেন তিনি। তবে এই অর্থ ফেরতের শর্ত হিসেবে দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দিরের মত করে হাটিকুমরুলে একটি মন্দির নির্মাণের অনুরোধ জানান তিনি। পরের বছরগুলোতে রাজা প্রাণনাথ তার কথা অনুসারে কান্তজীউ এর নকশায় এই মন্দিরটি তৈরি করে দেন।
 
কী দেখবেন: আপনি চাইলে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে কোন টিকেটের ব্যবস্থা নেই। মন্দিরের দেখাশোনার দায়িত্বে একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োজিত আছেন। তার কাছে অনুমতি নিয়ে মন্দিরের দোতালায় উঠতে পারেন। এই মন্দিরের আশেপাশে যে আরও দুটি ছোট মন্দির রয়েছে সেগুলোর গায়েও অনেক টেরাকোটার কারুকাজ দেখা যায়।
 
সম্পাদনা: ড. জিনিয়া রহমান।
 
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।