
ছবি সংগৃহীত
প্রিয় গন্তব্য: পুরানো ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য লালবাগ কেল্লা
প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৭
আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৭
আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৭
সবুজ আর লালে মিশে আছে এই প্রাচীন স্থাপনাটি। ছবি: সংগৃহীত।
(প্রিয়.কম): মুঘল আমলের যে কটা স্থাপত্য বাংলাদেশে টিকে আছে তার মাঝে অন্যতম হল লাল কেল্লা। বিশাল এলাকা নিয়ে এখনও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন এই নিদর্শনটি।
কোথায়: পুরাতন ঢাকার লালবাগ এলাকায় এই কেল্লাটি অবস্থিত।
কীভাবে যাবেন: নিউমার্কেট, শাহবাগ, হাইকোর্ট সহ ঢাকার আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে রিকশা-যোগে আপনি লালবাগে যেতে পারবেন। গুলিস্তান গোলাপ শাহ এর মাজার থেকে টেম্পুযোগে যাওয়া যাবে লালবাগ কেল্লায়। ইসলামবাগ ও কিল্লার মোড়-গামী দু’ধরনের টেম্পো দিয়ে দিন রাত সব সময় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়।
নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে বাংলার সুবাদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন। ১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) মৃত্যু ঘটে। কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর শায়েস্তা খান এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। লালবাগের কেল্লার তিনটি প্রধান স্থাপনার একটি হল পরী বিবির সমাধি। শায়েস্তা খাঁর ঢাকা ত্যাগ করার পর এটি এর জনপ্রিয়তা হারায়। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল, এটিই ছিল প্রধান কারণ। রাজকীয় মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ সালে এলাকাটি "আওরঙ্গবাদ " নাম বদলে "লালবাগ" নাম পায় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে । অনেকে মনে করেন এ এলাকায় লাল গোলাপের বাগান ছিল। সেই থেকে এলাকার নাম এবং এলাকার নামে কেল্লার নামকরণ হয়।

লালবাগ কেল্লা। ছবি: শাহাদাত হোসাইন।
কী দেখবেন: মোগল আমলে নির্মিত মনোরম ও আকর্ষণীয় কেল্লার প্রাসাদ ছাড়াও এখানে রয়েছে পরীবিবির মাজার, যা বাংলাদেশের একটি দুর্লভ স্থাপত্য কীর্তি। মাজারের চারদিকে তিনটি করে দরজা রয়েছে। মাজারটি নির্মাণে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মীয় স্থাপত্যের এক অপরূপ সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। মাজারটির জন্য উত্তর ভারতের রাজমহল থেকে কালো-পাথর, চুনার থেকে বেলেপাথর ও জয়পুর থেকে সাদা মার্বেল পাথর সংগৃহীত হয়েছিল। পাথরের প্রান্তগুলো খোদাই করা ফুল-পাতায় অলংকৃত।
দীর্ঘ সময় যাবত এটি ধারনা করা হত যে , লালকেল্লা হচ্ছে তিনটি ভবন স্থাপনার সমন্বয় (মসজিদ,পরী বিবির সমাধি ও দেওয়ান-ই-আম), সাথে দুটি বিশাল তোরণ ও আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত মজবুত দুর্গ প্রাচীর। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক খননে অন্যান্য অবকাঠামোর অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে ।
দক্ষিণে অবস্থিত দুর্গ প্রাচীরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি বিরাট বুরুজ ছিল। দক্ষিণের দুর্গ প্রাচীরের উত্তরে ছিল কয়েকটি ভবন, আস্তাবল, প্রশাসনিক ভবন, এবং পশ্চিম অংশে জলাধার ও ফোয়ারা সহ একটি সুন্দর ছাদ-বাগানের ব্যবস্থা ছিল। আবাসিক অংশটি ছিল দুর্গ প্রাচীরের পশ্চিম-পূর্বে, প্রধানত মসজিদটির দক্ষিণ-পশ্চিমে।
দক্ষিণের দুর্গ প্রাচীরে নির্দিষ্ট ব্যবধানে ৫টি বুরুজ ছিল উচ্চতায় দুই তালার সমান, এবং পশ্চিমের দুর্গ প্রাচীরে ছিল ২ টি বুরুজ যার সবচেয়ে বড়টি ছিল দক্ষিণস্থ প্রধান প্রবেশদ্বারে।
বুরুজ গুলোর ছিল একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ। কেল্লাটির কেন্দ্রীয় এলাকা দখল করে ছিল তিনটি প্রধান ভবন। পূর্বে দেওয়ান-ই-আম ও হাম্মাম খানা, পশ্চিমে মসজিদটি এবং পরী বিবির সমাধি দুটোর মাঝখানে - এক লাইনে, কিন্তু সমান দূরত্বে নয়। নির্দিষ্ট ব্যবধানে কয়েকটি ফোয়ারা সহ একটি পানির নালা তিনটি ভবনকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ও উত্তর থেকে দক্ষিণে সংযুক্ত করেছে ।

লালবাগ কেল্লার দুর্গ এবং সাথেই গোলাপ বাগান। ছবি: নাফিসা রহমান।
সময়সূচী: গ্রীষ্মকালীন: ১লা এপ্রিল থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকেল ৬.০০ টা পর্যন্ত। দুপুর ১.০০ টা থেকে ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি। শুক্রবার: সকাল ১০.০০ টা থেকে ৩.০০ টা পর্যন্ত। ১২.৩০ মিনিট থেকে ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি।
শীতকালীন: ১লা অক্টোবর থেকে ৩০শে মার্চ পর্যন্ত সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৫.০০ টা পর্যন্ত। দুপুর ১.০০ টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বিরতি। শুক্রবার সকাল ৯.০০ থেকে বিকেল পর্যন্ত। দুপুর ১২.৩০ মিনিট থেকে ২.০০ টা পর্যন্ত বিরতি।
রবিবার পূর্ণ দিবস বন্ধ থাকে ও সোমবার অর্ধ দিবস পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এছাড়া সরকারী ছুটির দিনগুলোতে লালবাগ কেল্লা পূর্ণ দিবস বন্ধ থাকে। যেকোনো পরিস্থিতিতে লালবাগ কেল্লা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
দর্শনার্থীর ভিড় মোগল আমলের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন ঢাকার লালবাগ কেল্লায় দর্শনার্থীর সমাগম দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইতিহাসের সাক্ষী এ কেল্লা প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, প্রতিবছর এখানে গড়ে প্রায় ৩০ লাখ দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। প্রতিদিন লালবাগ কেল্লা দেখতে আসে দেশি-বিদেশি প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থী। এর মধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ দর্শনার্থী রয়েছে। বিদেশি দর্শনার্থীরা এখানে কেল্লার ইতিহাস জানতে আসেন। সাধারণ দর্শনার্থী ১০ টাকা এবং সার্ক-ভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি ১০০ টাকা ও অন্য দেশের ভ্রমণকারীদের জন্য ২০০ নেয়া হয়।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া।
সম্পাদনা: ড. জিনিয়া রহমান।
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।
www.ajkerpatrika.com
| গাজীপুর
২ মিনিট আগে