কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হাসপাতালে মিজান (ডানে) ও তার দুই ভাই-বোন। ছবি: প্রিয়.কম

বয়স বাড়লেও বাড়ে না শারীরিক গঠন, অর্থাভাবে অনিশ্চিত জীবন

জানিবুল হক হিরা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৩
আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৩

(প্রিয়.কম) যে বয়সে স্কুলে পড়ালেখা আর খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা, সেই বয়সে হাসপাতালে দিন কাটছে মিজান ও তার দুই ভাই-বোনের। বয়সের তুলনায় স্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত রোগ গ্রোথ হরমোন ডিফিসিয়েন্সিতে (Growth Hormone Deficiency) আক্রান্ত হয়ে এই তিন ভাইবোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন। প্রতি মাসে চিকিৎসার জন্য তাদের প্রয়োজন ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে টানা কয়েক বছর। যা তাদের হতদরিদ্র বর্গাচাষী বাবা আবদুল কাদিরের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। আবদুল কাদির ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ধোনতা গ্রামের বাসিন্দা।

এরই মধ্যে এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সহায়তায় শুধুমাত্র মিজানের চিকিৎসা শুরু হলেও অর্থাভাবে অন্য দুই ভাই-বোনের চিকিৎসা এখনো শুরুই হয়নি। এমন অবস্থায় মিজানসহ তিন ভাইবোনের চিকিৎসা নিয়ে দিশেহারা বাবা আবদুল কাদির। তিন সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন তিনি। গ্রোথ হরমোন ডিফিসিয়েন্সি হলো একটি হরমোনজনিত রোগ। মানুষের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত পিটুইটারি নামক হরমোন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় গ্রোথ হরমোন। গ্রোথ হরমোনের ওপর মানুষের দৈহিক উচ্চতা কম বা বেশি নির্ভর করে। ছোটবেলা থেকে এই হরমোনের কমতি হলে শিশু খর্বকায় বা বেঁটে হয়। যাকে বলা হয় গ্রোথ হরমোন ডিফিসিয়েন্সি। হরমোনের কমতি হলে চিকিৎসার মাধ্যমে বাইরে থেকে হরমোন পুশ করতে হয়। 

বিএসএমএমইউতে পাশাপাশি দাঁড়ানো মিজান, জুবায়ের ও শরিফা। ছবি: প্রিয়.কম

এই রোগে আক্রান্ত মিজানের বয়স এখন ১৫ বছর। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছর বয়সী মিজানের স্বাভাবিক উচ্চতা হওয়ার কথা ছিল ১৫৯ সেন্টিমিটার (৫.২ ফুট)। কিন্তু রোগের কারণে তার উচ্চতা মাত্র ৮৬ সেন্টিমিটার (২.৮ ফুট)। আর ওজন ১০ কেজি। তার এক বছরের ছোট বোন শরিফার বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক উচ্চতা হওয়ার কথা ছিল ১৫০ সেন্টিমিটার (৫ ফুট)। সেখানে তার উচ্চতা ৮১ সেন্টিমিটার (২.৭ ফুট)। আর ওজন আট কেজি। একই অবস্থা তাদের ছোট ভাই দুই বছর বয়সী জুবায়েরের। তার উচ্চতা ৫৯ সেন্টিমিটার (১.১০ ফুট) ও ওজন পাঁচ কেজি।

বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একটানা চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। সে ক্ষেত্রে শুধু মিজান ও শরিফার প্রয়োজন প্রতি মাসে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর তাদের চিকিৎসা চালাতে হবে টানা তিন বছর। অন্যদিকে দুই বছর বয়সী জুবায়েরের ক্ষেত্রে একই চিকিৎসা চালাতে হবে তার বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত।

চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, চিকিৎসা চলাকালীন তাদের ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে ব্যয়। কারণ ধীরে ধীরে তারা যত বড় হবে তত বেশি হারে তাদের শরীরে হরমোন পুশ করতে হবে।

মিজানের পরিবারের ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনজনই এই রোগে আক্রান্ত। তিনজনের জন্য অন্তত তিন বছরে তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকা। যা তাদের বাবার পক্ষে বহন কারা কোনোভাবেই সম্ভব না। এমনকি প্রায় দুই মাস ধরে বিএসএমএমইউ ভর্তি থাকা তিন ভাইবোনের বর্তমান চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনুদানে, যা খুব বেশি দিন চালানো সম্ভব না।

সন্তানদের চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মো. আবদুল কাদির প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমার বড় দুই পোলা মাইয়ারে নিয়া আমাগো অনেক আশা আছিল। ভাবছিলাম হেরা বড় হইলে আমার সংসারের অবস্থা বদলাইব। কিন্তু রোগের কারণে তাদের এই অবস্থা, এহন যে আমি কী করি। ডাক্তারতো কইছে চিকিৎসা করাইলে ভালা হইয়া যাইব। তাগো তিনজনের পতি মাসে ৪৫ হাজার টাকার ওষধ লাগব। হেইডাও আবার তিন বছর ধইরা দিতে হইব। এতো টাকা আমি কই পামু। হেগ কপালে কী আছে আল্লাই জানে। আফনেরা কিছু করতে পারলে যদি আমার পোলামাইয়াডির কিছু হয়।’

আবদুল কাদিরের পরিবারকে সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে গত ৭ জানুয়ারি (সোমবার) বিএসএমএমইউর চিকিৎসক ডা. সাইদুর রহমান নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মিজানের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন, ‘হরমোন চিকিৎসা চালাতে প্রতিজনের জন্য মাসে প্রয়োজন প্রায় ১৫ হাজার টাকা, চালাতে হবে অন্তত তিন বছর। কিন্তু টাকার অভাবে তাদের পরিবারের পক্ষে এই চিকিৎসা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আপনারা যারা ফ্রি হেলথ ক্যাম্প নামের লোকদেখানো মানবসেবা করে থাকেন, তারা বরং এই রকম টাকার অভাবে যারা চিকিৎসা পাচ্ছে না, তাদের দায়িত্ব নিতে পারলে মনে হয় অন্তত কিছু মানুষ আসল সেবাটা পেত।’

হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে ওষুধ হাতে মিজান। ছবি: ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত

এই ব্যাপারে গত ৯ জানুয়ারি মিজানের চিকিৎসার খোঁজ নিতে বিএসএমএমইউতে গেলে ডা. সাইদুর ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসিও মিজানের মতো একই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বয়ঃসন্ধিকালের আগে এই রোগের চিকিৎসা শুরু করতে পারলে ভালো ফলাফল আশা করা যেত। তবে এখনো যদি মিজান আর শরিফার চিকিৎসা শুরু করা যায়, হয়ত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে না, তবে অনকটা উন্নতি আশা করা যায়। যা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারে। তবে তাদের দুইজনের ক্ষেত্রেই টানা তিন বছর বাইরে থেকে শরীরে হরমোন পুশ করতে হবে। কারণ তাদের দেহের বৃদ্ধিজনিত হরমোন উৎপন্ন হয় না। আর দুই বছর বয়সী জুবায়েরের ক্ষেত্রে একই চিকিৎসা চালাতে হবে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত।’

বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম মিজান ও তার দুই ভাইবোনের বিষয়ে প্রিয়.কমকে বলেন, ‘হরমোনের কমতির কারণে বয়সের তুলনায় তাদের হাড়ের বৃদ্ধি খুবই কম। তাদের হাড়ের বৃদ্ধি হচ্ছে দুই/তিন বছর বয়সী শিশুদের মতো। যদিও তাদের বয়স বেশি। চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে পারলে মিজান ও তার বোনের শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হবে। আর জুবায়েরের ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের শারীরিক উন্নতির সাথে সাথে হরমোন পুশের হার বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাবে। একজনের চিকিৎসার ব্যয়ই তখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা হবে।’

হাসপাতালের বিছানায় তিন ভাই-বোন। ছবি: সংগৃহীত

ডা. সুরাইয়া বেগম জানান, প্রায় দুই মাস ধরে মিজানসহ দুই ভাই এক বোন তারই অধীনে হাসপাতালে ভর্তি আছে। মিজানের বাবার পক্ষে তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব না দেখে তিনি ব্যক্তিগত সহায়তা এবং হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগের কিছু সহায়তায় শুধু মিজানের এক মাসের চিকিৎসা চালিয়েছেন। এমনকি আরও বেশি সহায়তা পাওয়ার জন্য চালিয়ে যাচ্ছেন চেষ্টা তদবির।

ডা. সুরাইয়া বেগম আশা, এমন অসহায় তিনটি জীবন- যাদের প্রকৃতপক্ষেই সাহায্যের প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়াবে সমাজের অবস্থা সম্পন্ন মানুষেরা।

অর্থের অভাবে স্বাভাবিক জীবন অনিশ্চিত মিজানসহ তার আরও দুই ভাই-বোন সমাজের আর দশটি শিশুর মতো চলাফেরা করবে, পড়াশোনা করবে। জীবন স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে এমন স্বপ্ন তাদের। তবে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে এই অনিশ্চয়তার কালো মেঘ পেরোনো সম্ভব। তাই মিজান ও তার ভাই-বোনকে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়েছেন তাদের অসহায় বাবা আবদুল কাদির। চাইলে সমাজের যে কেউ সাহায্য করতে পারেন। সাহায্য করতে পারেন আবদুল কাদিরের বিকাশ নম্বর ও ব্যাংক একাউন্টে।

বিকাশ নম্বর: ০১৭২৭-৩৪৬২৪১

ডাচ-বাংলা ব্যাংক: (আবদুল কাদির। A/C: ১০৭. ১৫১. ০১৮০৬২৮)

প্রিয় সংবাদ/রুহুল