কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গানের ছেলে পাপি মনা। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

চেষ্টা করছি ভালো গান করতে : পাপি মনা

তাশফিন ত্রপা
ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:১৬
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:১৬

(প্রিয়.কম) সময়ের নান্দনিক সংগীতশিল্পী পাপি মনা। তরুণ এ শিল্পীর গানে খুঁজে পাওয়া যায় আধ্যাত্মিক জীবনের ধ্যান ধারণা ও জীবনমুখী চিন্তা। ২০১৬ সালে ‘ভুল’ গানটির মাধ্যমে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন এ শিল্পী। তার গাওয়া ‘বেঁচে থাকো বাংলাদেশ’ শিরোনামের গানটিও শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। গানের ছেলে পাপি মনা। গান নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি গান লিখছেন, মাঝে মাঝে সুরও করে ফেলছেন।

সম্প্রতি প্রিয়.কমের সঙ্গে কথা হয় এ শিল্পীর। আলাপকালে উঠে আসে গান নিয়ে তার যত ভাবনা, পরিকল্পনা, জীবন সম্পর্কিত নানা কথা।

প্রিয়.কম: প্রথমেই জানতে চাইব, নিজের গাওয়া গানগুলোর মধ্যে আপনার সবচেয়ে পছন্দ কোন গানটি?

পাপি মনা: আমার নিজের কাজের মধ্যে, যে কাজগুলো ভালো লেগেছে তার মধ্যে ২০০৮ সালের ‘বেঁচে থাকো বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটা গান আছে। তখন তো এখনকার মতো ইউটিউবের এতো প্রচলন ছিল না। তো ওই সময় চ্যানেলগুলোতে এ গানটি ৭০০ বারের বেশি বার বাজানো হয়েছিল।

প্রিয়.কম: এরই মধ্যে আপনার দুটি অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে, সামনে আরেকটি অ্যালবাম নিয়ে কাজ করছেন, এ অ্যালবামগুলো সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

পাপি মনা: লেজার ভিশন থেকে দুইটা একক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছিল। একটি অ্যালবামের নাম ‘তুমি আসবে’, এতে ছিল ১০টা গান। এ অ্যালবামের প্রায় অর্ধেক গানই আমার লেখা। অপর আরেকটি অ্যালবামের নাম ‘চাঁদের নিচে দাঁড়াই’, এতে গান ছিল ৮টা। ‘চাঁদের নিচে দাঁড়াই’-এর বেশিরভাগ গানই আমার লেখা। আমার  আরেকটা অ্যালবাম ছিল। যদিও অ্যালবামটার নাম আমি বলতে চাই না। যাই হোক ওই অ্যালবামটির প্রতিটি গানই আমার লেখা। অ্যালবামটা এখন আর বাজারে নাই। ভাবছি ওই অ্যালবামটা আমি আবার নতুন করে তৈরি করব। অ্যালবামটির একটি গানের শিরোনাম ‘মাটির গন্ধ পাইরে’। এখানে মাটির গন্ধ বলতে শরীরের গন্ধকে বোঝানো হয়েছে। যাই হোক বিষয়টা একটু আধ্যাত্মিক ধরনের।

হাসির উচ্ছলতায় পাপি মনা। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: ইদানিং কি ধরনের কাজ করছেন?

পাপি মনা: আমি চেষ্টা করছি ভালো গান করতে। এ কারণে স্ট্রাগল করে যাচ্ছি। ইদানিং গানের ব্যাপারে যিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি গাইড করছেন তিনি হচ্ছেন শহীদুল আলম সাচ্চু ভাই। গান বিষয়ে তিনি আমাকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। গত ঈদে তিনি আমাকে বললেন ঈদ নিয়ে একটি গান করতে। আমিও খুঁজে দেখলাম, কাজী নজরুলের পর তেমন কেউ ঈদ নিয়ে ভালো কোনো গান করতে পারেননি। আমি চেষ্টা করেছি একটা গান করতে। তো এ গানটার নাম হচ্ছে ‘আজ উল্লাসে চাঁদ ঐ হাসে’। গানটি গত ঈদুল আজাহার একদিন আগে প্রকাশ পেয়েছে। যদিও গানটি ছিল ঈদুল ফিতরের। এটি লিখেছেন ফয়সাল রাব্বিকীন। ঈদের এক সপ্তাহ পরেই ‘বসতে চাইলে বস’ শিরোনামের আরেকটি গান প্রকাশ পেয়েছে। গানটা একটু অন্যরকম। শুধু একটি অ্যাকোস্টিক গিটারে গানটা রেকর্ড করে গাওয়া হয়। আরকেটি গান নিয়ে কাজ করছি। এটি ৭১-এর বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে। বুদ্ধিজীবীদের যে সন্তানরা বেঁচে আছেন। সে সন্তানদের নিয়ে একটি ভিডিও নির্মাণের প্ল্যান করছি। বছর কয়েক আগে রাজধানীর শিল্পকলায় অনুষ্ঠিত আর্ট সামিটে পারফর্ম করেছিলাম। তারপর লা মেরিডিয়ানে কমিউনিকেশন সামিটে অংশ নিয়েছিলাম। এর পাশাপাশি স্টেজ শোগুলোও করছি। এদিকে আরেকটি কাজও করছি সেটাও সাচ্চু ভাইয়েরই (শহীদুল আলম সাচ্চু)। হঠাৎ একদিন ফোন করে তিনি বলেন, ‘লাইনগুলো লেখ’। তার টেলিফোনের প্রতি উত্তরে আমি বললাম, ‘ঠিক আছে বলেন’। গানের কথাগুলো নিয়ে তিনি আমাকে জানালেন, আমারা এমন একজন নেতাকে খুঁজছি। যে শুধু আমাদের না,বাংলাদেশের না, যে হবে সারা পৃথিবীর নেতা। ওই নেতা হবে সবার নেতা। আমাদের নেতা, গরিবের নেতা, কৃষকের নেতা, বড়লোকের নেতা, সবার নেতা।

প্রিয়.কম: আপনার কি মনে হয়? এমন নেতা বাস্তবে পাওয়া সম্ভব?

পাপি মনা: সম্ভব কি না জানি না। তবে আমরা ওই রকমের একটা নেতাকে কল্পনা করেই গানটা লিখি। হয়তো বা এটা বাজারে যে কোনো বড় বড় নেতারা নিজেদের, ওই মানের নেতা ভেবেও গানটা বাজাতে পারেন। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। তিনি যদি তার কথা ও কাজে ওই ধরনের বৈশিষ্টের ও আদর্শের নেতা হতে পারেন। তাহলে সেই তো নেতা। তাকে পৃথিবীর শীর্ষ নেতা হতে হবে, ব্যাপারটা তা নয়। সে আমার বা আপনার এলাকার নেতাও হতে পারে।

প্রিয়.কম: ‘পাপি মনা’ শুনতে চাইব এ নামের পেছনের গল্পটা।

পাপি মনা: তাহলে শুরু থেকেই বলি। আমি মুসলিম। বাবা মায়ের আকিকা করা নাম জয়নাল আবেদীন। এবার পাপি মনা নামের বিষয়টা বলি। আমি মাঝে মধ্যেই গভীর রাতের প্রায় ২টা বা ৩টার দিকে রাস্তায় একা বসে থাকি। তখন পুরো রাস্তাটাই প্রায় খালি থাকে। আর ওখানে আমি একা বসে আছি। এরকম মাঝে মাঝেই হয়। এবার বলি সম্ভবত ২০০২ বা ২০০৩ সালের দিকের এক ঘটনা। তখন কোনো এক রাতে রাস্তায় ঘুরছিলাম। হঠাৎ কে যেন আমাকে পাপি মনা বলে ডাকছে। আমি অবাক হয়ে গেছি। হয়তো বা ওই মুহূর্তে আমার মনই আমাকে এ নামে (পাপী মনা) ডাকছিল। অথবা আমার ভেতরে থেকেই হয়তো আনমনে ব্যাপারটি ঘটে যাচ্ছিল। যাই হোক এ নামে ডাকার পর আমি শূন্যের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে পাপি মনা?’ তখন কে যেন বার-বার বলে যাচ্ছে, ‘তুই পাপি মনা। এটাই তোর নাম’। এরপর আমার মন আমাকে বলতে শুরু করল, ‘তুইত এসেছিস, কিছু জিনিসকে ভাঙতে। নতুন কিছু করতে। তুই তোর মতো, যা ভালো মনে হবে তাই করবি। তুইত এসেছিস, এরকম কিছু করতে।’ তো যেহেতু আমি শিল্পী হব। আমার লেখার ক্ষমতা আছে, গানও গাইতে পারি। তাই আমিও ভেতরে ভেতরে সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক আছে, ‘আমিই পাপি মনা।’ কিন্তু তখনো পর্যন্ত আমি জানতাম না এই নামের মানে কী? কিবা হবে এ নাম দিয়ে?

আধ্যাত্মিক ও জীবনমুখী গান গাইতে ভালোবাসেন পাপি মনা। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: সংগীত নিয়ে শ্রোতাদের জন্য সামনে আর কী কী ধরনের কাজের পরিকল্পনা রাখছেন ?

পাপি মনা: নিজের একটি ব্যক্তিগত ব্যান্ড আছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের কিছু গান করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছি। এরই মধ্যে একটি ইংরেজি গান নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এটা আগামী বছর প্রকশ করব। গানের শিরোনামটা হলো, ‘ অর দ্যট  আই সি, ইট’স লোনলি রোড আই হ্যাড বাই মাই সেলফ’। এর সঙ্গে আরেকটি কাজ করছি। যা হচ্ছে আমাদের আগের প্রজন্মে কালজয়ী যে শিল্পীরা ছিলেন, তাদের কিছু গান নিয়ে। কিন্তু তারা একেকজন এতো এতো গান করে গেছেন যে, তা বলেও শেষ করা যাবে না। তাদের সবগুলো গান নিয়ে তো আর কাজ করতে পারব না। তাই ওনাদের সিলেক্টিভ কিছু কিছু গানের কয়েকটি করে লাইন নিয়ে একটা নতুন গান তৈরি করব। এ নতুন গানের নাম দিয়েছি পাঁচমিশালি। এ গানের মধ্যে একটা ক্ল্যাসিক রাগ রেখেছি। এ রাগই হবে গানটির অন্যতম আকর্ষণ।

গানকে ঘিরেই পাপি মনার যত ধ্যান জ্ঞান। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

প্রিয়.কম: পাপি মনা নামটি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন কি না?

পাপি মনা: টুকটাক কিছু প্রশ্নের সম্মুখীনতো হয়েছিই। নামটা স্টাবলিশ হওয়ার অনেক বছর পর আমার এক শিক্ষক, নাম জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। ছোটবেলায় তার কাছে আমি উচ্চারণ শিখেছিলাম। তো বড় বেলায় ওনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর একজন তার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে জয়ন্ত দাকে বলেন, ‘জয়ন্ত দা, ও হচ্ছে পাপি মনা’। তো আমি ওনাকে বলি, ’স্যার, আমি আপনার সেই লিটল থিয়েটারের স্টুডেন্ট’। তো তিনি আমাকে দেখেই বলা শুরু করলেন, ‘তুই কেন এ নাম রাখলি? তুই পাপি মনার মানে জানিস?’ আমি বললাম, ‘না’। আমার প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, ‘এর মানে হল, পাপি মনস্ক। তুই তোর মতো করে নাম রাখলেতো হবে না। তুই নিজেকে “জয়নাল” ডাক, না হয় “আবেদিন” ডাক। অথবা তোর এই নামটা “পূর্ণ মনা” হতে পারতো। কিংবা এই মনা, সেই মনা হতে পারতো। তুই এরকম নেতিবাচক নাম রাখলি কেন?’। এদিকে যখন কেউ আমাকে বলেন, ‘ভাই, আপনি কি অনেক পাপ করসেন?’ তখন আমি বলি, ‘ভাই, আমি যতটুকু পাপ করেছি, ততটুকু স্বীকার করার ক্ষমতা, সাহসীকতা ও মানসিকতা আমি রাখি। আমি বলতে পারি, আমি এই পাপ করেছি। আপনারা যেটাকে লুকান আমি সেটাকে প্রকাশ করতে পারি। তাই আমি নিজেকে “পাপি মনা” বলতে পছন্দ করি।’ এর অনেক দিন পর ‘নিউএজ’-এর একজন সিনিয়র সাংবাদিক ভাই আমার একটি ইন্টারভিউ ছাপালেন নিউএজ পত্রিকায়। তার ছাপানো ইন্টারভিউটা পড়ার পর দেখলাম ইংরেজিতে তিনি আমার নামটা লিখেছেন ‘দ্য সিনার হার্ট’। একদিন আমি ইন্টারনেটে ঘাটলাম। তখন পাপি মনার অনেকগুলো নতুন অর্থও খুঁজে পেলাম। সেগুলোর মধ্যে কিছু শব্দের অর্থ পেলাম এমন, যার অর্থ দাঁড়ায় অনেকটা,‘দয়ালু’ বা ‘আন্তরিক’-এ ধরনের। এরপর আরও কিছু ঘটালাম, ঘাটার পর যা দেখলা তা আমিও আগে জানতাম না। পরে দেখলাম, এর মানে হচ্ছে, ‘নিয়ম কানুন ভাঙা’। এ বৈশিষ্ট্যগুলো আমি নিজের মধ্যেও খুঁজে পেয়েছি। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যেখানে যা করা যাবে না , আমি শেখানেই সেটা করব। মনে হয় যেন আমার চরিত্রটাই এমন। যদিও নিজেকে খুব সাধারণভাবেই রাখার চেষ্টা করি, সাধারণ ভাবার চেষ্টা করি। আসলে বেশির ভাগ মানুষকেই দেখি অসাধারণের পেছনে দৌড়াচ্ছেন। সাধারণের বাইরে গিয়ে অসাধারণ কর্মকাণ্ড করছেন। সবাই যখন অসাধারণ নিয়ে ব্যস্ত, তখন কেউ যদি সাধারণ কিছু করে। তখন সেই সাধারণ জিনিসটাই অসাধারণ হয়ে উঠবে। তো আমি সেই সাধারণ জিনিসটাই করি।

প্রিয় বিনোদন/গোরা