ওমান প্রবাসী নোমানের ফেসবুক আইডি। ছবি: সংগৃহীত

‘আমি নোমান থাকি ওমান’

রাফিউজ্জামান রাফি
writer
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৯:০৪
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৯:০৪

সম্প্রতি ‘আমি নোমান থাকি ওমান’ নামের একটি ফেসবুক আইডি ভাইরাল হয়েছে। তাকে ইনবক্সে বিরক্ত করার একটি স্ক্রিনশট দেখে আর তার আইডির নাম চোখের সামনে পড়লে একটু হেসেছিলাম। তারপর স্কিপ করে গেছি। পরে জানতে পারলাম, তার এই নামের কারণে তাকে নাকি এমন বিরক্ত করা হয়েছে যে, লোকটা আইডিই ডিঅ্যাক্টিভ করে দিয়েছে। তাকে বিরক্ত করার প্রমাণস্বরূপ বেশ কিছু স্ক্রিনশটও পেলাম। তাকে বিরক্ত করা হয়েছে মূলত ইনবক্সে। কেউ লিখেছে, ‘আমার ভাই হাসান থাকে পাকিস্তান’, ‘আমার বন্ধু আরমান থাকে জার্মান’—এমন মিলিয়ে মিলিয়ে অারও অনেক কিছু লেখা হয়েছে। 

একটা নামের কারণে একটা লোককে এত বিরক্ত করার অর্থ কী? লোকটা কোনো সেলিব্রেটি না যে তার পরিচিতি দেখে জেলাস ফিল করে তাকে খোঁচাতে হবে, কিংবা সে চেতনাবাজ টাইপেরও কেউ না যে কিছু হলেই ফেসবুকে দুই লাইন লিখে দেশ ও জাতি উদ্ধার করে বলে তার পেছনে লাগতে হবে। লোকটা কোনো ধনীর দুলালও না যে কথায় কথায় চিল করে, লং ড্রাইভে যায়, নামিদামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে চেকইন দেয় আর দুই আঙুল উঁচিয়ে তুলে ভি বানিয়ে সেলফি তুলে ফেবুতে আপলোডায় বলে তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে অথবা বিরক্ত হয়ে সবাই তাকে বিরক্ত করবে।

লোকটা একজন ওমান প্রবাসী বাঙালি। তিনি দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে অবসরে একটু বিনোদন নিতে বা সময় কাটাতে ফেসবুক চালাতে পারেন। এই মানুষটার না হয় একটু অদ্ভুত নামের আইডি আছে। তাতে আমাদের কী? সে তো আর আমাদের বাড়া ভাতে ছাই দেয়নি। তবুও তার আইডির ইউজার নেম নিয়ে আমরা এমন অদ্ভুত আচরণ শুরু করলাম যে গুটিকয়েক লাইক, দু-তিনটি কমেন্ট পাওয়া তার পোস্টগুলো হাজার হাজার লাইক কমেন্ট ও শেয়ার হতে লাগল। তাও আবার ভালো কোনো উদ্দেশ্যে না, তাকে মদন-আবুল-মফিজ মিন করে হেয় করে। এ ছাড়া ইনবক্সে যে অত্যাচার দেখলাম, লোকটা তো পাগল হয়ে যেত আইডি অ্যাক্টিভ রাখলে। শুধু তিনি নন, যেকোনো সুস্থ মানুষেরই অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা এমন ট্রল ও দাঁতাল মার্কা হাসির ইমোর অত্যাচারে। 

প্রবাসী লোকটার আইডি নেমটাকে মূর্খের কাজ হিসেবে প্রচার করতে গিয়ে আমরা যেটা করলাম, সেটা কি অতি নিম্নপর্যায়ের গণ্ড-মূর্খামি নয়? আমরা মানুষের মৃত্যু নিয়ে ট্রল করতে যেখানে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করি না আর সেখানে তো এই বিষয়ে ভাবারই অবকাশ নেই আমাদের।

কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আমাদেরও তো ঠিক তাই। কিন্তু আমরা কি একটিবার ভেবে দেখেছি, একজন লোকের ভার্চ্যুয়াল লাইফ তথা স্বাভাবিক লাইফ (আজকাল ভার্চ্যুয়াল আর স্বাভাবিক আলাদা করার কিছু নেই) দুর্বিষহ করার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? একটা মানুষের পোস্ট নিয়ে অমানুষের মতো মেতে ওঠার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? এখনো কি আমাদের এসব ভেবে দেখার সময় আসেনি?

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কমের সম্পাদকীয় নীতির মিল না-ও থাকতে পারে।]