ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার ও স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকারের একটি মুহুর্ত-ফাইল ছবি।
স্মৃতির পথে হাঁটছিলেন কিছুক্ষণ৷ মনে পড়ে যাচ্ছিল, সেই সব দিনের কথা, যখন 'সেলফি' বলে কোনও শব্দবন্ধ অভিধানে ঢোকেনি৷ কারণ, মোবাইল ফোন নামে কোন বস্ত্তর জন্মই হয়নি যে৷ যোগাযোগের প্রয়োজন আর পাঁচ জনের মতো তাঁরও ছিল৷ ভরসা ছিল, ল্যান্ড ফোন আর চিঠি৷ তিনি কনিষ্ঠতম ভারতরত্ন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।
চিঠির প্রসঙ্গ উঠতেই যাঁর মনে পড়ে গেল তাঁর স্ত্রী অঞ্জলির দুর্দান্ত হাতের লেখার কথা। সেই সঙ্গে 'কষ্ট করে' স্ত্রীর সেই সব চিঠির উত্তর দেওয়ার প্রসঙ্গও। এ বিষয়ে শচীন বলেন, ‘আমার কাছে ক্রিকেট বল মারা অনেক বেশি সহজ ছিল, চিঠি লেখার থেকে। তাই অঞ্জলিকে কিছু লেখার পর তা বারবার পড়ে তবেই পাঠাতাম। এ সময় তিনি আও বলেন, ‘সে সময় কোনও মোবাইল ফোন ছিল না। ল্যান্ড লাইনে ফোন বা চিঠি দিতে হত৷ আমিও চিঠি লিখতাম। বাবা-মাকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি অঞ্জলিকেও চিঠি লিখতাম।’

স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকারের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল শচীন
হাতের লেখার প্রসারের এক অনুষ্ঠানে চেন্নাইয়ে গিয়ে বুধবার এমনই টুকরো স্মৃতি তুলে আনলেন শচীন টেন্ডুলকার। যাঁর কথা থেকে মনে পড়তে পারে এ জি গার্ডিনারের লেখা, ‘অন লেটার রাইটিং'য়ের দুই চরিত্র বিল আর স্যামের সেই মজাদার কথোপকথন। বলা হয়, সাধারণভাবে ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ৷ কিন্ত্ত চিকিত্সক অঞ্জলির হাতের লেখা কেমন?
শচীন টেন্ডুলকারের উত্তর, ‘আমার মনে হয়, অঞ্জলি ব্যতিক্রম৷ ওর হাতের লেখা দুর্দান্ত৷ যে কেউ দেখলে তারই ভালো লাগবে৷ তাই ওকে কিছু লেখার আগে বাড়তি সতর্ক থাকতাম।’
বাবা এবং দাদা দু'জনেরই লেখালিখির অভ্যাস ছিল৷ ছোট থেকে বাবার ১০০টারও বেশি পেন দেখে বড় হয়েছেন। সে সব কথাও বলছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার৷
প্রশ্ন ছিল, তিনি যাঁদের সঙ্গে খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে সব থেকে সুন্দর হাতের লেখা কার? শচীনের উত্তর, 'আমার মনে হয় অনিল (কুম্বলে)-এর লেখা খুব ঝরঝরে৷ এ ছাড়া সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দেখে খুব সুন্দর লাগে।’ সব থেকে খারাপ? দ্রুত উত্তর, ‘মানুষের ভালো গুণই তো দেখা উচিত, তাই না?’
এরপর অবসর জীবন কেমন কাটছে তা-ও জানালেন---‘পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো আর ছেলের সঙ্গে সামান্য খেলা---এ ভাবেই দিন কাটছে৷ আমার খুবই ভালো লাগছে।’
ডানহাতি ব্যাটসম্যান হলেও লেখেন বাঁ হাতে৷ নিজেই বলে রাখলেন, ‘খেতে পারি দুই হাতেই৷ কিন্ত্ত লেখার সময় বাঁ হাত ব্যবহার করি৷ ডান হাতে লিখতেই পারি না৷’ ছেলে-মেয়ের কথা উঠতে মজা করে বলেন, ‘ছোট বেলায় ওরা ঘরের গোটা দেওয়ালে লিখে ভরিয়ে রাখত৷ কেউ বাড়িতে এলে আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, 'দেওয়ালে ওগুলো কী'? আমি বলতাম, দু'জন শিল্পীর বড় হওয়ার প্রতিশ্রুতি৷ পরে যখন ওরা মাথায় বাড়তে লাগল, দেওয়ালের নকশাও আরও উপরে উঠতে শুরু করল!' গোলাপি টি শার্ট আর ডেনিম জিন্সের কিংবদন্তি তখন অনুষ্ঠানে সকলের সঙ্গে নিজেও হাসছেন৷ তথ্যসূত্র : এই সময়


গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেই দিনটি ছিল মন খারাপের! এদিনই যে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন ২২ গজের রাজা। দীর্ঘ ২৪ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ মুহুর্তে ছেলে অর্জুন, মেয়ে সারা এবং স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকারের সঙ্গে এভাবেই ক্যামেরাবন্দী হন ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার।