ছবি সংগৃহীত

জ্যোতিষ মতে নবরত্ন

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০১৩, ১৭:১৪
আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৩, ১৭:১৪

নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে কে না চায় ! অলংকারকে গণ্য করা হয় সৌন্দর্য বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে । তাই এসব অলংকার তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় সুন্দর সুন্দর কিছু উপাদান । যেমন - রত্ন বা পাথর । অলংকারের ক্ষেত্রে যেসব পাথর ব্যবহার করা হয় , সেগুলোকে এক সময় মানুষ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করত । সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়টি তখনো তাদের মাঝে গুরুত্ব পায়নি । বিভিন্ন দেশে এখনো অনেকেই নানা ধরনের পাথরের আংটি পরে থাকে । সাধারণত এগুলো পরা হয় ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে । কারণ অনেকেই বিশ্বাস করে , পাথর ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম । সেই আদিকালের বিশ্বাস এখনো মানুষের মাঝে কাজ করছে । গ্রীকদের মাঝেও এ বিশ্বাস ছিল । গ্রীক এবং ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী রাশিচক্রে বর্ণিত বারোটি রাশির জন্য আলাদা আলাদা বিশেষ পাথর রয়েছে । বিশ্বাস করা হয় , রাশি অনুযায়ী পাথর পরলে ভাগ্যের উন্নতি ঘটে । এমনকি তা ব্যক্তিকে রোগশোক থেকেও দূরে রাখে ! সবচেয়ে শক্তিশালী নয়টি রত্নকে জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে একত্রে 'নবরত্ন' বলা হয় । এগুলো হলো - হীরা , পোখরাজ , নীলা , চুনি , পান্না , প্রবাল , মুক্তা , গোমেদ এবং ক্যাটস্ আই । চলুন কিছু তথ্য জানি 'নবরত্ন' এবং এগুলো ব্যবহারের প্রচলিত কিছু ধারণা সম্পর্কে – হীরা : হীরা সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন । এটি খুব রহস্যময়ও বটে ! সামান্য কয়লা থেকে অসামান্য হীরার জন্ম বলে অনেকের কাছেই তা বিস্ময়ের বিষয় । হীরা মূলত প্রাকৃতিক রত্ন হলেও আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বর্তমানে কৃত্রিম উপায়েও হীরা তৈরি করা হয় । দক্ষিণ আফ্রিকা , ব্রাজিল , আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া , রাশিয়া এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিক হীরা পাওয়া যায় । হীরা মূলত চার ধরনের হয় - স্বচ্ছ বা সাদা , লালচে আভাযুক্ত , কালো রঙের বা কালচে আভাযুক্ত এবং পীত রঙের । হীরার বিভিন্ন নাম আছে । যেমন - বজ্র , শতকোন , বিদুর , কুলিশ , তানারা , ভূমিজ , অধির , অশির ইত্যাদি । ধারণা করা হয় , হীরা ব্যবহার করলে সব ধরনের ব্যাধি নাশ হয় । হীরা দেহের ও মনের সুখ-শান্তি বৃদ্ধি করে এবং অকাল বার্ধক্য রোধ করে আয়ু বাড়িয়ে তোলে । প্রেম ও দাম্পত্য জীবন সুখময় হয় । সংগীত , চিত্রকলা , কাব্য , শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মে । এমনকি গনোরিয়া , সিফিলিস , দন্তরোগ , বদহজম , গলার রোগ ও হাত-পায়ের ব্যথা উপশম করে । পোখরাজ : পোখরাজ এক ধরনের স্বচ্ছ , মসৃণ ও উজ্জল রত্ন । পোখরাজ বেশ দামী একটি পাথর । সিংহল , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , নরওয়ে , রাশিয়া , ব্রাজিল , মায়ানমার , দক্ষিণ আফ্রিকা , আমেরিকা ও ভারতে পোখরাজ পাওয়া যায় । সাদা , গোলাপী , হলদে ও নীল - এই চার ধরনের পোখরাজ দেখতে পাওয়া যায় । পোখরাজের অনেকগুলো নাম রয়েছে । যেমন - পুষ্পরাগ , পীতমণি , পীতরক্ত , ঋতুমণি , গুরুরত্ন , সম্ভুমণি , বৃহস্পতিবল্লভ ইত্যাদি । বিশ্বাস করা হয় পোখরাজ ব্যবহার করলে দেহের শক্তিসহ মেধাশক্তি, আয়ু , সুখ ও গুরুজনদের প্রতি ভক্তি বৃদ্ধি পায় । সংসারে কখনো অভাব আসে না । এছাড়া রতিবৃদ্ধি , চুলপড়া , কণ্ঠরোগ , হৃদরোগ , টিউমার ও পাকস্থলীর রোগ দূর করে । নীলা : নীলা সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য রত্ন । এর সুন্দর নীল রঙের জন্যই এই নামকরণ । ভারত , সিংহল , মায়ানমার , অস্ট্রেলিয়া , জার্মানি , থাইল্যান্ড ও কম্বডিয়ায় নীলা পাওয়া যায় । নীলা পাঁচ ধরনের হয়ে থাকে - ইন্দ্রনীলা , পীতম্বর নীলা , রক্তমুখী নীল , অপরাজিতা নীলা এবং গঙ্গাজলী নীলা । নীলার বিভিন্ন নামও রয়েছে । যেমন - নীলোত্‍পল , মহানীল , সুনীল , নীলম , নীলরত্নক , সৌররত্ন , নীলাঙ্ক্ষা ইত্যাদি । নীলাকে বলা হয় সবচেয়ে মারাত্মাক এবং শক্তিশালী রত্ন । না বুঝে নীলা ব্যবহার করলে তা সুফলের চেয়ে কুফল দেয় বেশি । নীলা ব্যবহার করলে দুঃখ-কষ্ট , দারিদ্র্য , মৃত্যুভয় দূর হয় এবং নানা ভাবে অন্যের স্নেহ-ভালবাসা ও সাহায্য পাওয়া যায় । শত্রুরা মাথা নত করে , বন্ধুরা সহজে আকৃষ্ট হয় । বৈধব্যযোগ দূর হয় , কফ , পিত্ত , বায়ু ও বাতরোগ দূর হয় । চুনি : চুনি বা রুবি খুবই দুর্লভ এবং মূল্যবান একটি পাথর । আরবিতে এই পাথরকে ইয়াকুত বলে । চুনি উজ্জল , লাল ও স্বচ্ছ ধরনের রত্ন । মায়ানমার , থাইল্যান্ড , সিংহল , আফগানিস্তান , ভারতের কাঞ্জিয়া ও হায়দ্রাবাদে চুনি পাওয়া যায় । তবে মায়ানমারের চুনি বেশি মূল্যবান । চুনি চার ধরনের হয়ে থাকে - টকটকে লাল চুনি , গোলাপী লাল চুনি , চকোলেট লাল চুনি ও নীলাভ লাল চুনি । চুনির বেশ কিছু নাম রয়েছে । যেমন - পদ্মরাগ , শরেন্দু , কুরুবিন্দ , লোহিত , সৌগন্ধিক , রত্নসরক , রবিরত্ন , শৃঙ্গারী ইত্যাদি । জ্যোতিষ বিদ্যায় চুনির ক্ষেত্রে এই ধারণা প্রচলিত যে এটা ব্যবহারে সুস্বাস্থ্য , সুখ-সমৃদ্ধি , মনের প্রফুল্লতা , কার্যোদ্দীপনা , ব্যবসায়ে লাভ , চাকরিতে উন্নতি , প্রেমে সাফল্য আসে । এছাড়া রোগ , বিষণ্নতা , ক্লান্তি , মনের হীনতা , দেরিতে বিয়ে ও প্রেমে বঞ্চনা দূর হয় । পান্না : পান্না সবুজ রঙের একটি রত্ন ।যে পান্না শৈবাল বর্ণ , ময়ূরের পেখমের মতো সবুজ আভাযুক্ত , স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ এবং আঁধারে চকচক করে , সেটি হলো শ্রেষ্ঠ পান্না । তবে এমন পান্না খুবই দুষ্প্রাপ্য । রাশিয়ার উরাল পর্বতমালায় , মিশর , ব্রাজিল , পাকিস্তানের সোয়াতে , ভারতের উদয়পুরে ও রাজগড়ে , কলোম্বিয়া , আফ্রিকা , অস্ট্রেলিয়া , সিংহল ও মায়ানমারে পান্না পাওয়া যায় । পান্না বেশ কয়েক ধরনের হয় । যেমন - ঘন সবুজ পান্না , নীলাভ সবুজ পান্না , পীতাভ সবুজ পান্না , হালকা সবুজ পান্না , রক্তাভ পান্না । পান্নারও বিভিন্ন নাম রয়েছে - হিরন্মণি , গরুড় , অশ্ম গর্ভজ , বুধরত্ন , সৌপর্ণ , রোহিনেয় , বায়বল , নীল ইত্যাদি । জ্যোতিষ বিদ্যায় বলা হয়ে থাকে পান্না ব্যবহারে ব্যবসায়ে উন্নতি , সংযত ব্যবহার , সংযত বুদ্ধি , উপস্থিত বুদ্ধি হয় । পাশাপাশি এটা স্বাস্থ্যও ভালো রাখে । প্রবাল : প্রবাল নামের সামুদ্রিক কীটের ধ্বংসাবশেষ হলো প্রবাল রত্ন । সমুদ্রের গভীরে স্তরীভূত হওয়া প্রবালকীটের মৃতদেহই হলো প্রবাল রত্ন । প্রশান্ত মহাসাগরে , লোহিত সাগরে , ভারত মহাসাগরে ও ভূমধ্যসাগরে প্রবাল পাওয়া যায় । প্রবাল মূলত চার ধরনের হয় - রক্ত প্রবাল , পলাশ প্রবাল , গৈরিক প্রবাল এবং শ্বেত প্রবাল । প্রবালের নানা নামও রয়েছে । যেমন - মহারক্ত , বল্লী , সিন্ধুসম্ভব , লতাগ্র , বিদ্রম , সুবল্লিজ ইত্যাদি । জ্যোতিষীরা বলেন প্রবাল ব্যবহার করলে দেহ ভালো থাকে । ব্রণ , ফোঁড়া , দুর্ঘটনা , রক্তপাত ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । কফ ও পিত্ত নাশ করে , শ্বাসকষ্ট দূর করে । এছাড়া ভূসম্পদ লাভ , সম্পদ বৃদ্ধিসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । মুক্তা : ঝিনুকের মধ্যে মুক্তার জন্ম । তবে সব ঝিনুকে মুক্তা জন্মায় না । মূলত সামুদ্রিক ঝিনুকে মুক্তা জন্মে । ঝিনুক তার কোমল দেহটি শক্ত খোলসের মধ্যে লুকিয়ে রাখে । কোনোভাবে এই শক্ত দেহাবরণের ভেতর বালিকণা , মাটি বা শক্ত কিছু ঢুকে গেলে ঝিনুক এক ধরনের রস নিঃসৃত করে । এই রস জমাট বেঁধে মুক্তায় পরিণত হয় । পারস্য উপসাগরে , সিংহলের কাছে মানার উপসাগরে , আমেরিকায় , বঙ্গোপসাগরে , প্রশান্ত মহাসাগরে , হাইতি দ্বীপপুঞ্জে উন্নত মানের মুক্তা পাওয়া যায় । মুক্তা নানা ধরনের হয় - গোলাপী , সাদা , হলদে , কালচে , তামাটে , নীলচে ইত্যাদি । মুক্তার বিভিন্ন নামও রয়েছে । যেমন - স্বচ্ছমণি , শুক্লমণি , শশিপ্রিয় , নীরজ , শুক্তিজ , তারা , মৌক্তিক , ইন্দুরত্ন ইত্যাদি। জ্যোতিষীরা ধারণা করেন মুক্তা ব্যবহার করলে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় । মানসিক রোগ দূর হয় , দেহের কান্তি বৃদ্ধি করে । পেট , বুক ও গলার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । গোমেদ : গোমেদ বা গারনেট খয়েরী বা বাদামী রঙের স্বচ্ছ ধরনের রত্ন । এই পাথর তুলনামূলক ভাবে সুলভ । মায়ানমার , সিংহল , অস্ট্রেলিয়া , ফ্রান্স , ইটালি , দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে গোমেদ পাওয়া যায় । সিংহল গোমেদ , ইটালিয়ান গোমেদ এবং ভারতীয় গয়া গোমেদ - এই তিন ধরনের গোমেদই সহজলভ্য । গোমেদের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে - পিঙ্গ স্ফটিক , ষড়াহব , তমোমণি , রাহুরত্ন , স্বভনির ইত্যাদি । গোমেদ ব্যবহার করলে কর্মলাভ , ব্যবসায়ের প্রসার , বিদেশ ভ্রমণ , তীর্থ ভ্রমণ হয় । জ্যোতিষীরা বলেন এর ব্যবহারে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় । আকস্মিক বিপদ ও মামলা-মোকাদ্দমা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । এছাড়া বাতরোগ দূর হয় , হজমশক্তি বৃদ্ধি , আমাশয় , উদরাময় রোগ ভালো করে । ক্যাটস আই: ক্যাটস্ আই এক ধরনের অস্বচ্ছ পাথর । দেখতে বিড়ালের চোখের মতো । এ করণেই এই রত্নকে ক্যাটস্ আই বা বৈদুর্য্য মণি বলা হয় । এই পাথর উজ্জ্বল আলোর সামনে রেখে নাড়াচাড়া করলে এর ওপরের অংশে বিড়ালের চোখের মতো একটি উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখা যায় । ভেতরের এই রশ্মিটিকে দেখলে মনে হয় তা চলনশীল , এক জায়গায় স্থির থাকে না । ক্যাটস্ আই মায়ানমার , সিংহল , রাশিয়া , ব্রাজিল , আফ্রিকা ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায় । ক্যাটস্ আই-এর অন্য নামগুলো হলো - বিদুরাজ , প্রাবৃষ্য , কৈতক , অভ্রলৌহ , কেতুরত্ন , বালবারন ইত্যাদি । ক্যাটস্ আই সোনালি , সবুজাভ , ছাই রং ইত্যাদি ধরনের হয়ে থাকে । জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে এ রত্ন ব্যবহারে যেকোনো বিষাক্ত জীবের দংশন থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । ভূসম্পদ থেকে লাভবান হওয়া যায় । বাত , চর্ম ও যৌন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । কলেরা , বসন্ত , ধনুষ্টংকার হয় না এবং দেহের কান্তি বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ।