ছবি সংগৃহীত

কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ!

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০১৫, ২৩:৪১
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫, ২৩:৪১

ভোরের দ্বিতীয় আলো যখন উদিত হয়, আর দ্বিতীয় আলো হলো যা দিগন্তে বিস্তৃত হয়, আর তার শেষ সময় হলো যতক্ষণ না সূর্য উদিত হয়। কেননা হযরত জিবরীল [আ.] ইমামতি সম্পর্কিত হাদীছে বণির্ত আছে যে, তিনি প্রথম দিন ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ্ [সা.] -এর ইমাম হয়ে সালাত আদায় করেন যখন আলো উদ্ভাসিত হয়। আর দ্বিতীয় দিন (সালাত আদায় করেন) যখন খুব ফরসা হয়ে গলো, এমন কি সূর্য উদিত হওয়ার উপক্রম হল। হাদীছের শেষে রয়েছে-এরপর হযরত জিবরীল [আ.] বললেন- এ দুই সময়ের মধ্যবর্তী সময়টি হলো আপনার ও আপনার উম্মতের জন্য সময়। ধর্তব্য নয়। ফজরুল কাযিব হচ্ছে লম্বা-লম্বিতে উদ্ভাসিত আলো, যার পর অন্ধকার থেকে যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ্ [সা.] বলেছেন- বিলালের আযান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে। তদ্রুপ লম্বালম্বি আলো (যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে)। দিগন্তে উদ্ভাসিত অর্থাত্ বিস্তৃত আলোই হলো ফজরের সময়। যুহরের প্রথম সময় হলো যখন সূর্য হেলে পড়ে। কেননা জিবরীল [আ.] প্রথম দিন সূর্য হেলে পড়ার সময় ইমামতি করেছেন। আবূ হানীফা [রহ.] এর মতে যুহরের শেষ সময় হলো যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া মধ্যাহ্ন ছায়ার বাদ দিয়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর দ্বিতীয় ইমামদ্বয় বলেন, যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমান হয়। ইহাও ইমাম আবূ হানীফা [রহ.] হতে বর্ণিত, আরেকটি মত। মধ্যাহ্ন ছায়া হলো ঠিক মধ্যাহ্নকালে কোন বস্তুর যে ছায়া হয়, তাই। দ্বিতীয় ইমামদ্বয়ের দলীল এই যে, জিব্রীল [আ.] প্রথম দিন এ সময়ে আসরের ইমামতি করেছেন। ইমাম আবূ হানীফা [রহ.] এর দলীল হলো, রাসূলুল্লাহ্ [সা.] বলেছেন- যুহরকে তোমরা শীতল করে পড়ো। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের তীব্রতা থেকেই আসছে। আর আরব দেশে (প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হওয়ায়) এ সময়টাতেই গরম প্রচণ্ডতম হয়। সুতরাং হাদীছ যখন পরস্পর বিরোধপূর্ণ হলো তখন সন্দেহবশতঃ সময় শেষ হবে না। আসরের প্রথম সময় হলো যখন উভয় মত অনুসারে যুহরের সময় পার হয়ে যায়। আর তার শেষ সময় হলো যতক্ষণ না সূর্য ডুবে যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ্ [সা.] বলেছেন- যে ব্যক্তি সূর্য অস্তের আগে আসরের এক রাকাআত পেয়ে গেল, সে আসরের সালাত পেয়ে গেলো। মাগরিবের প্রথম সময় হলো সূর্য যখন ডুবে যায় এবং তার শেষ সময় হলো যতক্ষণ না অদৃশ্য হয়। ইমাম শাফিঈ [রহ.] বলেন, তিন রাকাআত পড়ার পরিমাণ সময় হলো মাগরিবের সময়। কেননা জিবরীল [আ.] দু’দিন একই সময়ে মাগরিবের ইমামতি করেছেন। আমাদের দলীল হলো রাসূলু্ল্লাহ্ [সা.] বলেছেন- মাগরিবের প্রথম সময় হলো যখন সূর্য ডুবে এবং তার শেষ সময় হলো যখন অদৃশ্য হয়। ইমাম শাফিঈ [রহ.] কে হাদীছ প্রমাণ স্বরূপ পেশ করেছেন, তাতে বিলম্ব না করার কারণ হল মাকরূহ থেকে বেঁচে থাকা। ইমাম আবূ হানীফা [রহ.] এর অর্থ দিগন্তের ফরসা আলো, যার লালিমা পরে দেখা দেয়। পক্ষান্তরে ইমাম ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রহ.] এর মতে লালিমাটিই হলো এরূপ। এরই অনুরূপ একটি বর্ণনা ইমাম আবূ হানীফা [রহ.] থেকেও পাওয়া যায়। আর এ-ই হল ইমাম শাফিঈ [রহ.] এরও (পূর্ববর্তী) অভিমত। কেননা, রাসুলুল্লাহ্ [সা.] বলেছেন- শায়ক হলো দিগন্ত লালিমা। ইমাম আবূ হানীফা [রহ.] এর দলীল হলো রাসূলুল্লাহ্ [সা.] এর নিম্নোক্ত বাণী- মাগরিবের শেষ সময় হলো, যখন দিগন্ত কালো হয়ে যায়। ইমাম শাফিঈ [রহ.] এর বর্ণিত হাদীছটি ইবন উমর [রা.] এর উপর মওকুফ ইমাম মালিক মু’আত্তা গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন, আর এ সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ‘ঈশার প্রথম সময় হলো যখন অদৃশ্য হয়ে যায় এবং তার শেষ সময় হলো যতক্ষণ না ফজর (সুবহি সাদিক) উদিত হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্ [সা.] বলেছেন- ‘ঈশার শেষ সময় হলো যতক্ষণ না ফজর উদিত হয়। রাত্রের তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত দ্বারা ঈশার শেষ সময় নির্ধারণের ব্যাপারে এ হাদীছ ইমাম শাফিঈ [রহ.] এর বিপক্ষে দলীল। বিতরের প্রথম সময় হলো ‘ঈশার পরে এবং তার শেষ সময় হলো যতক্ষণ না ফজর উদিত হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্ [সা.] বিতর সম্পর্কে বলেছেন- ‘ঈশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে তোমরা তা আদায় কর। হিদায়া গ্রন্থকার বলেন, এটা সাহেবাইনের মত। আর ইমাম আবূ হানীফা [রহ.] এর মতে ‘ঈশার সময়ই হচ্ছে বিতরের সময়। তবে তারতীব ওয়াজিব হওয়ার কারণে স্মরণ থাকা অবস্থায় বিতরকে ‘ঈশার আগে আদায় করা যাবে না। মূল- শায়খুল ইসলাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবন আবূ বকর আল-ফারগানী [রহ.] অনুবাদ- মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ গ্রন্থনা ও সম্পাদনা- মাওলানা মিরাজ রহমান