রঙ এবং তুলির আঁচড়ে বিভিন্ন ধরণের ফুল আঁকতেই বেশী ভালোবাসেন শাহনাজ। ছবি কৃতজ্ঞতা: শাহনাজ সুলতানা।

সব বাধা পেরিয়ে তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠছে ফুল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫১
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৫১

(প্রিয়.কম) কমবেশী সকলেই ছোটবেলায় ছবি আঁকার সময়ে পরিবার থেকে বাধা পেয়েছেন। এমন কথাও অনেকে শুনেছেন যে- ছবি আঁকার পেছনে সময় নষ্ট করলে পড়ালেখা হবে না কিংবা, কোন জীবজন্তুর ছবি আঁকা ঠিক নয়! এর ব্যতিক্রম ছিল না শাহনাজ সুলতানা’র ক্ষেত্রেও। পরিবার থেকে নিষেধ থাকলেও বর্তমানে যার হাতের ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে সোনালু ফুল থেকে শুরু করে রাধা-কৃষ্ণ। শাহনাজ তার পড়ালেখার পর্ব শেষ করে ফেলছেন বেশ আগেই। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ এর উপর ডিপ্লোমা করেছেন ইউকে থেকে। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভেরিফিকেশন এক্সিকিউটিভ পথে কর্মরত রয়েছেন।

শাহনাজ ছবি ১

শাহনাজের ছবি আঁকাআঁকিটা সম্পূর্ণই তার মনের আনন্দের জন্য, নিজের জন্য। ছেলেবেলার ছেলেমানুষি আঁকাআঁকির পর্ব পার করার পরে কিছুটা যখন বড় হলেন তখন থেকেই নিজের বিষণ্ণতা দূর করার জন্যে ছবি আঁকা শুরু করেন। শাহনাজের মতে, ছবি আঁকার মাধ্যমেই দুঃখ, কষ্ট, হাসি, আনন্দ কিংবা প্রতিবাদের মতো মনের সকল ধরণের আবেগ অনুভূতি অনেক সুন্দরভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয় রঙ-তুলির মাধ্যমে। যে কারণে ক্যানভাস হলো তার ভালোবাসা ও কষ্ট প্রকাশের একমাত্র স্থান। যেখানে তিনি তার মন একদম উন্মুক্ত করে দিতে পারেন! রঙ তার ভালোবাসা, এবং এই রঙ নিয়ে খেলা তার মনের চাপ কমায় বলেই তিনি মনে করেন।

শাহনাজ ছবি ৬

আঁকাআঁকি ক্ষেত্রে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই শাহনাজের। তিনি জানান, ইউটিউবই তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান! ছবি আঁকার, রঙ নিয়ে কাজ করার নানান রকম কলাকৌশল তিনি ইউটিউবের বিভিন্ন রকমের ভিডিও দেখে শিখেছেন এবং এখনও শিখছেন। শুধু তাই নয়, যখনই কোথাও কাউকে আঁকতে দেখেন তিনি, সাথে সাথে তার পাশে বসে পড়েন তার আঁকাআঁকি দেখার জন্য, তার কাছ থেকে কিছু শেখার জন্য। কীভাবে তুলি ঘোরাতে হয়, কীভাবে রঙের মাধ্যমে ছবিতে আলো-ছায়ার কাজ ফুটিয়ে তুলতে হয়, কীভাবে ছবিতে রঙ ফুটিয়ে তুলতে হয়- এই সকলই তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে শেখার চেষ্টা করেন সবসময়।

শাহনাজ ছবি ২

ছবি আঁকার জন্যে শাহনাজ অনেক ধরণের রঙই ব্যবহার করে থাকেন। যেমন: অ্যাক্রেলিক কালার, অ্যাক্রেমিন কালার, ফেব্রিক কালার, পোস্টার কালার, ব্লক এর রঙ ইত্যাদি তার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের ভিন্নতায় রঙ এর ব্যবহারে ভিন্নতা আসে। শাহনাজ মূলত কাপড় এবং ক্যানভাসে ছবি আঁকেন। কখনো শাড়ি, কখনো কামিজ, ওড়না কখনোবা ঘরের দেয়ালের জন্য ক্যানভাসে ছবি আঁকেন তিনি ছবি আঁকার যাবতীয় উপাদান তিনি কিনে থাকেন উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেট, গাউছিয়া এবং নিউমার্কেট থেকে।

শাহনাজের আঁকাআঁকির শুরুটা একদম ছোটবেলা থেকে হলেও কাপড়ের উপরে ছবি আঁকা বয়স হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই ১৬-১৭ বছরের মতো। যদিও এই সময়টুকুর মাঝে লম্বা সময়ের একটা বিরতি ছিল, তবে আবারও শুরু করেন আঁকাআঁকি। তার এই আঁকাআঁকির শুরুটা একদমই নিজের জন্য হলে, তার সকল বান্ধবীদের অনুপ্রেরণায় এবং তার চেষ্টায় জন্ম নেয় "রংধনু ক্রিয়েশন।"

শাহনাজ ছবি ৩

কাজের উপরে নির্ভর করেই মূলত এক একটা ছবি শেষ করতে শাহনাজের সময় লেগে যায় এক এক রকম! শাড়িতে কাজ শেষ করতে ৫-৬ দিন সময় প্রয়োজন হয়। ক্যানভাসে ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ক্যানভাসের সাইজের উপর নির্ভর করে সময় প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে ১-৬ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায় একটি ছবি শেষ করতে। তার নিজের ইচ্ছা এবং তার ক্রেতার চাহিদার উপরে নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের ছবিই এঁকে থাকেন তিনি। তবে ফুলের ছবি আঁকতেই সবচেয়ে বেশী পছন্দ করেন শাহনাজ। নিজের আঁকা প্রতিটি ছবিই তার কাছে তার কন্যাসন্তানের মতোই পরম ভালোবাসার! ছবি ভালো হোক কি খারাপ, নিজ হাতে আঁকা সকল ছবিই ভালোবাসেন শাহনাজ। বরং যে ছবিটা খুব একটা ভালো হয় না, সে ছবিটাকে তিনি আরো বেশী ভালোবাসেন। কারণ পরবর্তিতে সেই ছবিটা আরো ভালোভাবে আঁকার একটা তাগিদ থাকে তার মাঝে।

শাহনাজ ছবি ৪

জানতে চাওয়া হয়েছিল, নিজের সংসার, চাকরী, সন্তান সকল কিছু সামলেও কীভাবে ছবি এঁকে চলেছেন শাহজান? তিনি জানান, তার পরিবারের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ এবং সাহসের জন্যেই তিনি তার নিজের ভালোবাসার ও শখের কাজটা সুন্দর মতো করে যেতে পারছেন। এরই সাথে তিনি আরও বলেছেন, তার বর্তমান এই অবস্থানের পেছনে "মেয়ে নেটওয়ার্ক" অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে, তাকে বুঝিয়েছে যে- তিনিও পারবেন। যার জন্য তিনি মেয়ে নেটওয়ার্কের কাছেও বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

শাহনাজ ছবি ৫

শাহনাজের ছবি আঁকা নিয়ে অনেক ইচ্ছা, অনেক পরিকল্পনা। তিনি আরো কাজ শিখতে চান, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ শেখার জন্য প্রবল আগ্রহ তার। তার বিশ্বাস ভালো কাজ করলে সকলেই সেই কাজের মূল্য বোঝে, সেই কাজের মর্যাদা দেয়। তাই তিনি তার ভালো কাজের মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছাতে চান। এরই সাথে তিনি ছবি আঁকার বিষয়ে যতখানি জানেন, পারেন ততখানি অন্য কাউকে শেখাতে ও জানাতে।  তার মতে, এই কাজ শিখে এই কাজকে পুঁজি করেও একটি সংসার চালানো সম্ভব। যে কারণে, শাহনাজের ইচ্ছা ছবি আঁকার মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বী হোক। ভবিষ্যৎ এ নিজের রংধনু ক্রিয়েশনকে আরো বড় করে তোলার ইচ্ছা রয়েছে তার। তিনি চান তার হাতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি যেন আরো শক্ত এবং পাকাপোক্ত একটি অবস্থানে যেতে পারে সামনের দিনগুলোতে।  

সম্পাদনা: কে এন দেয়া