
ছবি সংগৃহীত
জাতীয় স্মৃতিসৌধ: আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক
আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:২৩
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ছবি: প্রিয়.কম
(প্রিয়.কম) ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে সাধারণ মানুষের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবং শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারে এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মূল সৌধের গাম্ভীর্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য স্থপতি মাইনুল হোসেন সৌধের মূল কাঠামোটি কংক্রিটের এবং কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্থাপনা লাল ইটের তৈরি করেন। এর মাধ্যমে রক্তের লাল জমিনে স্বাধীনতার স্বতন্ত্র উন্মেষ নির্দেশিত হয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রনায়করা রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এলে সাভারের জাতীয় এ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত।
দেশ-মাতৃকার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী অসংখ্য শহীদদের স্মরণে তৈরি বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্যের মধ্যে প্রথম এবং প্রধানতম সাভারের এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এটি আমাদের অস্তিত্ব আর জাতীয়তাবোধের প্রতীক। আমাদের ইতিহাসের স্মারক।
প্রতিবছর স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসে জাতীয়ভাবে এ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধ শুধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণের জন্যই নয়, এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আমাদের অতীত ইতিহাস। যে ইতিহাস, যে ঘটনা আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে স্বাধীনতার পথে। এই ইতিহাসই অদম্য সাত কোটি বাঙালিকে নিজস্ব দেশ আর পতাকার স্বপ্নে বিভার করে তুলেছিল। তারই সূত্র ধরে অপ্রতিরোধ্য নারী-পুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, ছিনিয়ে আনেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম বিজয়।
‘বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা/এর যত মূল্য সে কি ধরার ধূলোয় হবে হারা’ লেখা একটি শ্বেতপাথরের ভিত্তিপ্রস্তর চোখে পড়বে স্মৃতিসৌধে প্রবেশের পরপরই। এরপর ডানদিকে রয়েছে নজরকাড়া উন্মুক্ত মঞ্চ। সোজা হেঁটে গেলে মিলবে মূল স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধ চত্বরে রয়েছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতপরিচয় শহীদদের ১০টি গণসমাধি।
স্মৃতিসৌধ এবং এর প্রাঙ্গণের আয়তন ৮৪ একর। এছাড়া একে পরিবেষ্টনকারী আরো ২৪ একর এলাকা নিয়ে বৃক্ষরাজি পরিপূর্ণ একটি সবুজ বলয়। এই সবুজ বলয় সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের প্রতীক ।
স্মৃতিসৌধের ছবি দেখে এর গঠন বুঝতে পারাটা বেশ দুরূহ। এটা বুঝতে হলে সৌধের খুব কাছে যেতে হবে, পাশ থেকে দেখতে হবে। ভালোভাবে দেখলেই বোঝা যাবে স্মৃতিসৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজ নিয়ে গঠিত। স্মৃতিসৌধের সাত জোড়া দেয়াল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে।
এগুলো হলো- ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে অনিন্দ্যসুন্দর এ সৌধ নির্মিত হয়েছে।
স্মৃতিসৌধের মূল মিনারটি ৪৫ মিটার উঁচু এবং জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সৌধটি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। মিনার ঘিরে রয়েছে কৃত্রিম হ্রদ এবং বাগান। প্রাঙ্গণে আরো রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ, অভ্যর্থনা কক্ষ, মসজিদ, হেলিপ্যাড ও ক্যাফেটেরিয়া।
বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিশেষ জাতীয় দিবসে এখানে লাখো জনতার ঢল নামে। মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি নিবেদন করা হয় ফুলেল শ্রদ্ধা। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান কিংবা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যখন এদেশে আসেন, এদেশের জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে তারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান এবং সফরের স্মৃতিস্বরূপ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রোপণ করেন বিভিন্ন গাছের চারা।