বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। ছবি : সংগৃহীত

অভ্যাস নামক মন্ত্রে বিশ্বজয়ী বিজ্ঞানী আইনস্টাইন

ডা. মো. সাইফুল ইসলাম ‍সোহেল
লেখক
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:০৮
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:০৮

(প্রিয়.কম) ক্লাসের সবচেয়ে পেছনে বসে থাকা এক বালক তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিল ‘স্যার, আমি আমার বুদ্ধির বিকাশ কীভাবে ঘটাতে পারি?’ শিক্ষক বলেছিলেন ‘অভ্যাসই হচ্ছে সফলতার মূলমন্ত্র।’


ছেলেবেলায় বোনের সঙ্গে আইনস্টাইন। ছবি : সংগৃহীত

সেই বালক শিক্ষকের এই মন্ত্র মনের ভেতর গেঁথে নিয়েছিল। অতঃপর অভ্যাসের শক্তিতে ভর করে একদিন সবার থেকে ভালো ছাত্রতে পরিণত হয় বালকটি। শিক্ষকদের কাছে স্বল্প বুদ্ধির ও অযোগ্য বলে পরিচিত সেই বালকই পরে অভ্যাসের দ্বারা বিশ্বজুড়ে পরিচিত লাভ করেছিল। এই বালকের নাম হচ্ছে আলবার্ট আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের জীবনী থেকে এটি প্রমাণিত হয় যে, অতি সাধারণ ব্যক্তিও পরিশ্রম, সাহস ও দৃঢ় মনোবল সহযোগে কোনো কাজে লেগে থাকার মাধ্যমে সফলতা পেতে পারে।


আইনস্টাইনের জন্ম ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ, জার্মানির ইউম নগরে। বাল্যকালে তার মাথায় সর্বদাই খারাপ বুদ্ধি ঘুরপাক খেত। তবে পড়াশোনায় ভালো করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। পড়াশোনায় মন না বসলেও কখনো বই ছাড়তেন না। মনকে বুঝিয়ে বারংবার পড়াশোনায় লেগে যেতেন। কিছুদিন এভাবে অভ্যাস করতে থাকেন এবং এক সময় ক্লাসের শিক্ষক অবাক হয়ে তার উন্নতি লক্ষ্য করেন। তিনি গণিতের মতো কঠিন বিষয়ে খুবই দক্ষ হয়ে ওঠেন। যে সব গণিত তার শিক্ষকও সমাধান করতে পারতেন না আইনস্টাইন নিজ যোগ্যতায় সে সব কঠিন গণিতেরও সমাধান করে ফেলতেন।

শিক্ষকের অভ্যাস নামক মন্ত্র দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করে আইনস্টাইন সফলতার চূড়ায় আরোহণ করেন। কিন্তু আর্থিক অনটন তার পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়াত। তারপরও এই সংকট আইনস্টাইনকে হতাশ করতে পারেনি। তিনি জুরিখ পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তার জন্য কম খরচে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। তিনি শখের বসে কোনো অর্থ ব্যয় করতেন না।

জুরিখ কলেজে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির দ্বারা শিক্ষকদের নজরে আসেন তিনি। এক অধ্যাপক তাকে আর্থিকভাবে সাহায্যও করেন। অভাব অনটনে কাটলেও নিরাশা তাকে কখনই স্পর্শ করতে পারেনি। বাল্যকালে পিতামাতার প্রদত্ত শিক্ষা তার মনোবল সর্বদাই দৃঢ় রাখতে সহায়তা করেছিল।

শিক্ষকের দেওয়া মন্ত্র ও প্রথম শিক্ষক পিতামাতার শিক্ষায় আইনস্টাইন নানা ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে এগিয়ে যান। তিনি নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকে আপেক্ষিকতার সূত্র E=mc2 (Theory of Relativity) আবিষ্কার করেন। এর ফলেই বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হন আইনস্টাইন। এ জন্য তাকে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে আপেক্ষিকতাভিত্তিক বিশ্বতত্ত্ব, কৈশিক ক্রিয়া, ক্রান্তিক উপলবৎ বর্ণময়তা, পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানের চিরায়ত সমস্যাসমূহ ও কোয়ান্টাম তত্ত্বে তাদের প্রয়োগ, অণুর ব্রাউনীয় গতির একটি ব্যাখ্যা, আণবিক ক্রান্তিকের সম্ভ্যাব্যতা, এক-আনবিক গ্যাসের কোয়ান্টাম তত্ত্ব, নিম্ন বিকিরণ ঘনত্বে আলোর তাপীয় ধর্ম, পদার্থ বিজ্ঞানের জ্যামিতিকীকরণ ইত্যাদি।

১৯২১ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে হিটলারের শাসন শুরু হলে ইহুদি হওয়ার কারণে আইনস্টাইনকে দেশ ত্যাগ করতে হয়। তিনি আমেরিকার নিউজার্সিতে চলে যান। সেখানে প্রিন্সটন কলেজে চাকরি করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। এই মহান ব্যক্তি ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

প্রিয় সংবাদ/ফারজানা/রুহুল