
অভিনেত্রী বাঁধন, সাবেক স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী এবং কন্যা সায়রা। ছবি: সংগৃহীত।
টাকা না দিলেই বাঁধন সংসারে ঝগড়াঝাটি এবং অশান্তির সৃষ্টি করতেন, অভিযোগ স্বামীর
আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:০৯
(প্রিয়.কম) ২০১০ সালে বিয়ে করেছিলেন তারা। ২০১৪ সালেই বিচ্ছেদ! বলছি অভিনেত্রী বাঁধন এবং মাশরুর সিদ্দিকীর কথা। তিন বছর আগে ডিভোর্স হলেও গণমাধ্যমে কিছুটা আড়ালেই ছিল বিষয়টা।
তবে নানা কারণে এবার সামনে এলো তাদের কলহ, বিচ্ছেদ এবং বর্তমান সংকটের বিষয়গুলো। আর এ বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এলেন খোদ বাঁধন এবং মাশরুর। গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রিয়.কমের অফিসে এসেছিলেন অভিনেত্রী বাঁধন, জানিয়েছিলেন মাশরুরের দ্বিতীয় বিয়ের কথা, বিচ্ছেদের পর একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে তার সংগ্রামের কথা। বলেছিলেন মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মাশরুর তাকে কানাডায় নিয়ে যেতে চান। আর এই ঘটনায় বিমর্ষ হয়ে মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে মাশরুরের নামে পারিবারিক আদালতে মামলাও করেন তিনি।
তবে এবার এইসব ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন বাঁধনের সাবেক স্বামী মাশরুর সিদ্দিকীও। নিজেদের পরিচয়ের শুরু থেকে প্রেম, বিয়ে, কলহ এবং বিচ্ছেদ- সবকিছু নিয়েই কথা বলেন তিনি। এমনকি নিজের কথার প্রেক্ষিতে প্রমাণও দেখান গণমাধ্যমে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া তার বক্তব্য মতে, বাঁধনের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়েছিল, সেখান থেকেই ফোন নম্বর বিনিময় এবং কথোপকথনের শুরু। তবে এই ঘটনাকে তিনি মিষ্টি হাসির আড়ালে এক লোভী নারীর প্রেমে পড়েছিলেন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মাশরুর আরো জানান, প্রেম শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ের জন্য উৎসাহী হয়ে উঠেন বাঁধন। মাশরুর সময় চাইলেও, বাঁধনের দিক থেকেই বেশি অস্থিরতা ছিল বলে জানান তিনি। তবে তাদের বিয়ের কথা শুনে যার মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়েছিল, বাঁধনের ওই আত্মীয়ই নাকি মাশরুরকে বিয়ে না করার জন্য অনুরোধ করেছিল।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেনই বা বাঁধনের আত্মীয়টি তাকে বিয়ে করতে না করেছিলেন, আর কেনই বা সেসব জেনে বিয়ে করতে রাজি হলেন মাশরুর সিদ্দিকী। এই বিষয়ে বাঁধনের প্রাক্তন স্বামীর বক্তব্য হলো- বাঁধনের সেই আত্মীয় বিয়ের আগে তাকে সতর্ক করেছিল, বলেছিল বাঁধনের লোভী স্বভাবের কথা কিন্তু যেহেতু তারা দুজনই তখন গভীর প্রেমে, তাই ওই ব্যক্তির কথা আমলে নেননি মাশরুর। নিজের সেই সিদ্ধান্তকে ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, সংসারী হলে হয়তো সুখী হবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু এই রকম একজন সুন্দর নারী তার জীবন এভাবে ধ্বংস করে দেবে তিনি তা কোনোদিনও ভাবেননি।

বিয়ের পরের নানা ঘটনাও ব্যাখ্যা করেছেন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা। বিয়ের পর থেকেই মানসিক অত্যাচারের শিকার হোন তিনি। সংসারের সমস্ত খরচ দেওয়ার পরও বাঁধনের হাত খরচের জন্য প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকা করে দিতে হতো বলে দাবি করেন তিনি। এমনকি মাসের এক থেকে দুই তারিখের মধ্যে সেই টাকা না দিলেই বাঁধন সংসারে ঝগড়াঝাটি এবং অশান্তির সৃষ্টি করতেন বলে দাবি তার। এমনকি বিভিন্ন সময় মাশরুরের বিভিন্ন ব্যাবসায়ে অংশীদারিত্ব চাইতো বাঁধন, আর এ নিয়ে তাদের কলহ নিয়মিতই চলতো।
এক সময় দাম্পত্য কলহ বিশাল আকার ধারণ করলে ঝগড়া করে বাবার বাড়ি চলে যান বাঁধন, কিছুদিন পর আবার সব মিটমাট হয়ে যায়, আর তখন মাশরুরকে গুলশানের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে তার (বাঁধনের) বাবার বাড়ি মিরপুরে গিয়ে থাকার জন্য চাপ দিতে থাকে বাধঁন। এ ব্যাপারে মাশরুর সিদ্দিকী বলেন, তার বন্ধু-বান্ধবরা না করা সত্ত্বেও তিনি বাঁধনের বাবার বাড়িতে যেতে রাজি হয়েছিলেন শুধু মাত্র কন্যা সায়রার জন্য। তিন মাসের সায়রাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হতো বলেই আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি বাঁধনের কথা মেনে নিয়েছিলেন।
মাশরুরের দাবি মতে, বাঁধনের বাবার বাড়িতে গিয়ে তিনি ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে পাঁচতলার ফ্ল্যাট কমপ্লিট করেন, নিজের যাবতীয় সঞ্চয় খরচ করে, লোন নিয়ে এবং নিজের মায়ের জমি বিক্রি করে এই ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করেন তিনি, ছাদে বানান সুইমিং পুল। মাশরুরের বাবা-মা আগেই মারা গিয়েছেন, তিনি বলেন বাঁধনের বাবা-মাকেই তিনি নিজের বাবা-মা মনে করেছেন, ভেবেছিলেন তারাই আপনজন। অথচ সে বাড়ি থেকে নাকি তাকে শূন্য হাতে বের হতে হয়েছে।
কেন তাকে শূন্য হাতে বের হতে হলো? কন্যা সায়রা যখন এত ছোট, তার জন্য কি এক সাথে থাকা যেত না? আরো একটু ভাবা যেত না সম্পর্ক নিয়ে? মাশরুর সিদ্দিকী বলেন, শেষের দিকে ঝগড়া হলে বাঁধন ডিভোর্স দিবে বলে সব সময় চাপের মধ্যে রাখতো, আর তাই এক পর্যায়ে তিনি নিজেই ডিভোর্সের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু মাশরুর জানান, গণমাধ্যমে বাঁধন যে তথ্যটি জানাচ্ছেন যে মাশরুর তাকে ডিভোর্স পাঠিয়েছে- সেটি নাকি সঠিক নয়, ডিভোর্সের আবেদন করলেও মাশরুরের সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। বরং তার দুই-তিনদিন পর বাঁধনই উল্টো তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠান। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। মাশরুর জানান, এইসব ঘটনার সময় তাকে বাসা থেকে বের করে দেন বাঁধন এবং তার পরিবার। এক কাপড়ে বের হয়ে আসতে হয় তাকে।
মেয়ে সায়রাকে নিয়ে গণমাধ্যমে বাঁধন যা বলছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন দাবি করছেন বাঁধনের সাবেক স্বামী। তিনি জানান, দেড় বছর অনেক চেষ্টা করার পরও মেয়ের সাথে তাকে দেখা করতে দেয়নি বাঁধন এবং তার পরিবার। শুধু মানসিকভাবেই নয়, শারীরিকভাবেও বাঁধনের পরিবার দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি। ২০১৫ সালে ৭ অক্টোবর মেয়ের জন্মদিনে দেখা করতে গিয়ে বাঁধনের ভাইদের দ্বারা শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হোন বলে দাবি তার। সেদিন বাঁধনের ভাইদের লাঠির আঘাতে তার বাঁ হাতের নিচের হাড় ভেঙে গিয়েছিল জানিয়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কাগজপত্র প্রমাণস্বরূপ হাজির করেন তিনি। এমনকি ওই ঘটনার পর পুলিশ নাকি তার মামলাও গ্রহণ করতে চায়নি, কারন আগে থেকেই বাঁধনের পরিবার তার নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রেখেছিলেন। অনেক কষ্টে মামলা দায়ের করলেও, উল্টা মাশরুরকে দায়ী করে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেন বাঁধন, দাবি তার সাবেক স্বামীর।

মেয়েকে এখনো ঠিকমতো দেখতে দেন না বলে জানিয়েছেন সায়রার পিতা। মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চান বাঁধনের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাশরুর জানান, মেয়ের বাবা হিসেবে তিনি তার মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার অধিকার রাখেন, আর বাঁধনের মেয়েকে কানাডায় পাঠানোর বিষয়ে তিনি শুধুমাত্রই আলোচনা করেছিলেন, এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু বাঁধন নাকি এটাকেই সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন মাশরুর জোর করে তাদের মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চাইছেন বা কানাডায় পাঠাতে চাইছেন। মেয়েকে নিজের কাছে না পেলে, সেই অধিকারের জন্য তিনি আদালতে যাবেন বলেও জানান মাশরুর।
প্রিয় বিনোদন/গোরা
- ট্যাগ:
- বিনোদন
- তারকার জীবন
- নাটক
- আজমেরী হক বাঁধন
- ঢাকা