রোজী ও মালেক আফসারী। ছবি: সংগৃহীত

‘আফসারী, চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে’

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০১৮, ২১:০২
আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮, ২১:০২

(প্রিয়.কম) খ্যাতিমান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রোজী আফসারীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ মাত্র ৫৭ বছর বয়সে কিডনিজনিত রোগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন গুণী এই অভিনেত্রী।

বাংলা চলচ্চিত্রের বর্ণাঢ্য যুগে আব্দুল জব্বার খানের ‘জোয়ার এলো’ সিনেমায় দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রোজীর। তবে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ সিনেমার মধ্য দিয়েই খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেন তিনি।

চার দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে দাপটের সঙ্গে দ্যুতি ছড়ানো এ অভিনেত্রী ১৯৮৫ সালে বিয়ে করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মালেক আফসারীকে। বয়সে মালেক আফসারী তার ২০ বছরের ছোট হলেও দীর্ঘ ২২ বছর সংসার করেন তারা। মৃত্যুর আগেও তার পাশে ছায়ার মতোই ছিলেন মালেক।

রোজীর মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করেন এ নির্মাতা। কিন্তু প্রয়াত স্ত্রীকে এখনো তিনি আগের মতোই ভালোবেসে স্মরণ করেন। আজ রোজীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বনানী কবরস্থানে ফুল ছিটিয়ে শ্রদ্ধা জানান মালেক আফসারী। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে করেন স্মৃতিচারণ।

রোজীর মৃত্যুর আগের কিছু মুহূর্তকে স্মরণ করে মালেক ফেসবুকে লিখেন, ‘‘তখন বেলা ৩টা। রোজী ফিসফিস করে বললো ‘আফসারী, চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে।’ আমি ডাক্তারের দিকে তাকাই। ডাক্তার ইশারায় বোঝাল, দেন। বুলুকে (রোজীর পার্সোনাল আয়া) বললাম, নিয়ে আসো। বুলু ছুটে বেরিয়ে গেল আইসিইউ থেকে। বারডেম হাসপাতালের নিচেই পান সিগারেটের দোকান থেকে একটি চকলেট নিয়ে আসে বুলু। আমি কাগজ ছিঁড়ে রোজীকে দেই। রোজী পুরাটা খেতে চায় না। আমি দাঁত দিয়ে কামড়ে একটু দেই। ও বাচ্চাদের মতো মুখে নিয়ে চুষতে থাকে। তারপর ইশারায় আমাকে ডাকে। আমি আমার কান ওর মুখের কাছে নেই। আস্তে করে বলে, ‘আফসারী, ডাক্তার আমাকে ভালো করতে পারবে না। তুমি তোমার জাদু দিয়ে আমাকে ভালো করে দিতে পারো না?’ আমি হেসে ওর হাত ধরে বসে পড়ি পাশে নার্সের রাখা টুলে। ভাবতে থাকি ওর এখনো মনে পড়ছে সেই প্রথম দিনের কথা।’’

১৯৮০ সালে ‘বিনি সুতোর মালা’ সিনেমায় কাজ করার মাধ্যমে পরিচয় হয় রোজী ও মালেক আফসারীর। তখনো মালেক আফসারী নির্মাতা হননি। মাত্র ৬০০ টাকা বেতনে কাজ করতেন পরিচালকের প্রধান সহকারীর পদে।

বয়স ও কাজে রোজী মালেকের অনেক বড় ছিলেন। তবুও রোজীর দৃষ্টি আকর্ষণের নানা চেষ্টা তিনি করেই যেতেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জাদু দেখানো। একটা আট আনার আধুলিকে দুইটা করে দেখানো বা দুইটা আধুলিকে গায়েব করে দিয়ে রোজীকে অবাক করতেন মালেক, কিছুটা মুগ্ধও।

রোজী সত্যি সত্যিই মালেককে ভেবে বসেন জাদুকর! মৃত্যুর আগে তাই তিনি সে জাদুকরের জাদুর ছোঁয়ায় সুস্থ হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

মৃত্যুর আগ মুহূর্তেই স্বামীর কাছে জাদু শেখার বায়না ধরেন রোজী। মালেক আফসারী যখন রোজীর হাতটি ধরেন, ততক্ষণে তিনি চলে গেছেন অনেক দূরে, চির ঘুমের দেশে। জাদু না শিখাতে পারার এ আফসোস এখনো কাজ করে মালেক আফসারীর ভেতর। মানুষ হিসেবে, একজন শিল্পী হিসেবে রোজী আফসারীকে তিনি অনেক বড় মাপের মনে করেন।

৪০ বছর ধরে প্রায় সাড়ে ৩০০ সিনেমায় কাজ করেন রোজী আফসারী। তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘সূর্য গ্রহণ’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘প্রতিকার’ ইত্যাদি। এ ছাড়া পাকিস্তানের ‘জাগো হুয়া সাবেরা’, ‘পুনম কি রাত’সহ ২৫টি উর্দু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তার সর্বশেষ অভিনীত ছবি ‘পরম প্রিয়’ মুক্তি পায় ২০০৫ সালে।

প্রিয় বিনোদন/আজহার