ছবি সংগৃহীত
হুমায়ুন আহমেদের বৃষ্টি বিলাস
আপডেট: ০১ মে ২০১৩, ১৭:০৬
বৃষ্টি বিলাস লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ প্রচ্ছদঃধ্রুব এষ প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০০০ “বৃষ্টি বিলাস” উপন্যাসটি প্রয়াত নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের রোমান্টিক উপন্যাস। “বৃষ্টি বিলাস”উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদের সব চেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের একটি। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারীতে এই বইয়ের দ্বাদশ মুদ্রন বাজারে আসে। এই উপন্যাসে উল্লেখ করা হয়েছে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনি। যেখানে পরিবারের কর্তা একজন ব্যাংক ক্যাশিয়ার । ব্যাংক ক্যাশিয়ার আবদুর রহমানের পরিবারের কাহিনী নিয়েই এই উপন্যাস। গুরু গম্ভীর এই লোকটি হটাৎ করেই ছেলে মেয়েদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ শুরু করে, কারন সে তার বড় মেয়ে শামার জন্য একজন পাত্র ঠিক করেছেন। আবদুর রহমান সাহেব মেয়েকে বিয়ে দেবেন এইটা ভাবতেই তার ভাল লাগছে। অন্য দিকে তার এই আচরণ ছেলে মন্টু কিংবা ছোট মেয়ে এশা কেউ সাধারন ভাবে নিতে পারতেছেনা। শামা তো নয়ই। যে ছেলেটি আজ শামা কে দেখতে আসবে ,তার নাম আতাউর সে আবদুর রহমান সাহেবের অফিসেই চাকুরী করে। ছেলে পক্ষ শামাকে দেখতে এসে এক হাজার এক টাকা ও একটি আংটি দিয়ে যায় এবং বিয়ের পাকা কথা বলে যায় । এখান থেকেই “বৃষ্টি বিলাস” উপন্যাসের শুরু। পাত্র আতাউরকে শামার অতটা পছন্দ না হলেও,যেহেতু তার পছন্দের কেউ নেই তাই পরিবারের পছন্দ করা পাত্রকে সে মেনে নেয়। আতাউরকে শামা সর্বদা খাতাউর নামেই ডাকতে থাকে ,তার মনের মাঝে ভাললাগার সৃষ্টি হয় আতাউরকে পেয়েই। আবদুর রহমান সাহেব যে বাসাটিতে ভারা থাকেন,সেই বাসার মালিক মুত্তালিব সাহেবের বয়স পঞ্চান্ন বৎসর। এই ভদ্র লোকটিও এই বাড়ির দোতালাতেই থাকেন। মুত্তালিব সাহেব বলতে গেলে একেবারে একা। তার একমাত্র মেয়ে জামাই সহ বিদেশে থাকেন। স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হবার কারনে প্রায় পনের বৎসর আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তারপর থেকে মুত্তালিব সাহেব এই বাড়িটিতে একাই থাকেন। এই বয়সেই তার সব দাঁত পরে গেছে,চুলে পাক ধরেছে। কলপ করে চুল কালো করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই লোকটি। হাঁটুতে ব্যথা হবার কারনে ইদানিং হাঁটু বাঁকাতে পারছেন না ,অনেক মালিশ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। বরং আগের চাইতে হাঁটু শক্ত হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার এক দের ঘণ্টা হাঁটতে বললেও তিনি তা করতে পারছেন না। জীবনে মুত্তালিব সাহেব অনেক ব্যবসা বাণিজ্য করলেও খুব বেশি লাভ তিনি করতে পারেননি। তার থাকার মধ্য আছে এই দোতালা বাড়ি, একটা টয়োটা কার, ব্যাংকে কিছু ফিক্সড ডীপোজীড। কোন এক অজানা কারনে মুত্তালিব সাহেব শামাকে অত্যন্ত পছন্দ করেন। কিন্তু মুত্তালিব সাহেব চাননা তার এই কথাটি শামা জানুক। এই দিকে শামা কারনে অকারনে দোতালার মুত্তালিব সাহেবের বাসাতে আসা যাওয়া করে। কখনো ফোন করতে কিংবা ভাল রান্না হলে তা মুত্তালিব সাহেবের জন্য নিয়ে ওপরে যায় শামা। শামার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে জেনে মুত্তালিব সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এইদিকে শামা তার ছোটবোন এশা সেজে টেলিফোনে কথাবলে আতাউরের সাথে। তার পছন্দ অপছন্দের কথা জানিয়ে দেয় শামা। আতাউর এশা মনে করেই কথা বলে যায়। পর্দার আড়াল থেকেই এভাবেই গভীর হয় ভালবাসা। এশা সেজে কথা বলে আতাউরের সাথে দেখা করে শামা এবং তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। শামা আতাউরকেকে নিয়ে তার বড়লোক বান্ধবী মিরার বাড়িতে যায়। মিরার বিয়ে উপলক্ষে এই বাড়িতে যায় শামা। মিরার বাড়িতে সবাই মিলে একসাথে থাকবে মজা করবে এটাই মূল উদ্দেশ্য। এখানেই পরিচয় ঘটে মিরার কাজিন আশফাকুর রহমান । ফাইবার অপটিক্সের ওপর পিএইচ ডি করেছেন। মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন।সুদর্শন এক যুবক আশফাকুর রহমান। এই লোকটির আবার মাইওপিয়া থাকাতে চশমা পরতে হয়,আর এই চশমা নিয়েই বাধে যত গণ্ডগোল। বিয়ে বাড়িতে শামার বান্ধবীরা মিলে কত ঘটনা যে ঘটায়। জানতে হলে পরতে হবে “বৃষ্টি বিলাস” উপন্যাসটি।ভালবাসার কত রকমফের এই বইটিতে। বিয়ে বাড়ি থেকে খুব তাড়াতাড়ি ফিরতে হয় শামাকে, কারন তার বাবা রাতে অসুস্থ হয়ে পরেন। শামা মুত্তালিব চাচার টেলিফোন পেয়েই বাসাতে ফেরে। শামার বাবা আবদুর রহমান অসুস্থ হবার কারন হচ্ছে তিনি আজ জানতে পেরেছেন যে শামার হবু বর আতাউর একজন পাগল। বছরের কোন এক সময় সে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পরে এবং তাকে ঘরে তালা বন্দী করে রাখতে হয়। আর এই ব্যাপারটি আতাউরের পরিবার লুকিয়ে ছিল।আবদুর রহমান সাহেব আতাউরের বোনের বাসাতে গিয়ে এই বিয়েটা ভেঙে দিয়ে এসেছেন। তার এত সুন্দর একটা মেয়েকে তিনি পাগলের সাথে বিয়ে দেবেন ,ভাবতেই তার মাথা গুলে যাচ্ছে। কথাটি শামা শোনার পর থেকেই তার খারাপ লাগতেছে।সে মনে মনে ঠিক করে রেখে ছিল তাদের মেয়ের নাম রাখবে আশা।আতাউর আর শামার নামের প্রথম দুই অক্ষর দিয়ে। কত কি ভেবে রেখেছিল শামা। অন্য দিকে আশফাকুর সাহেবের সাথে শামার বিয়ের কথা বলছেন শামার বান্ধবী তৃনা। কোন দিকে যাবে শামা আশফাকুর নাকি আতাউর জানতে হলে পড়তে হবে এই উপন্যাসটি। উপন্যাসটির পরতে পরতে রয়েছে ভালবাসার ছোঁয়া। কখনো পাওয়া কিংবা কখনো না পাওয়া আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই “বৃষ্টি বিলাস”। মধ্যবিত্ত পরিবারের টান পোড়ন নিয়ে গড়া হুমায়ূন আহমেদের সার্থক এই প্রেমের উপন্যাসটি।