ছবি সংগৃহীত

হাজারো গুণের কাঠ বাদাম

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৩, ০৭:৫৮
আপডেট: ২৭ মে ২০১৩, ০৭:৫৮

সুপ্রাচীন কাল থেকেই খাবার হিসেবে ফলের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। সেই সাথে কিছু ফলের বীজও খাদ্য হিসেবে গণ্য হয় এবং এগুলো সাধারণত ফলের মর্যাদা পেয়ে থাকে। এর মধ্যে বাদাম অন্যতম। বাদামও রয়েছে হরেক রকমের। যেমন- কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি।

এগুলোর মধ্যে চিনাবাদামের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য বাদামগুলোর দাম বেশি ও সহজলভ্য না হওয়ায় আমাদের দেশে তেমন একটা জনপ্রিয় না। তবে বিশেষ ধরনের খাবার যেমন পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ, হালুয়া ইত্যাদি রান্নায় এসব বাদাম স্বাদবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাদামের মধ্যে কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি। অতীতে কাঠবাদামকে বলা হতো সুস্বাস্থ্যের প্রতীক। কাঠবাদামকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রায় তিন হাজার বছর আগে কাঠবাদামকে ফল হিসেবে গ্রহণ করে। খুব সম্ভবত এটি ধর্মীয় কোনো ব্যাপারের সাথেও জড়িত ছিল। কারণ মিসরের রাজা তুতেনখামেনের সমাধিতে কাঠবাদামের নিদর্শন পাওয়া যায়, যা অতি সযত্নে কফিনে রাখা ছিল!
কাঠবাদামের ইংরেজি নাম Almond। এর বৈজ্ঞানিক নাম Prumus dulcis। কাঠবাদামের ফল হয় মাংসল ও প্রায় গোলাকার। এর অভ্যন্তরে থাকে কাঠের মতোই শক্ত আরেকটি খোলস! এই শক্ত খোলসের ভেতরে থাকে বাদামি আবরণে ঢাকা বাদাম। এই আবরণ তুলে ফেললে খাবার উপযুক্ত অংশটি বেরিয়ে আসে। কাঠবাদাম নানা প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠবাদামে রয়েছে - এনার্জি- ৫৭৮ কিলোক্যালরি কার্বোহাইড্রেট- ২০গ্রাম আঁশ- ১২ গ্রাম ফ্যাট- ৫১ গ্রাম প্রোটিন- ২২ গ্রাম থায়ামিন- ০.২৪ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লেভিন- ০.৮ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ৪ মিলিগ্রাম প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড- ০.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই- ২৬.২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ২৪৮ মিলিগ্রাম আয়রন- ৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ২৭৫ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ৪৭৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ৭২৮ মিলিগ্রাম এছাড়াও কাঠবাদামে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড অয়েল, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
কাঠবাদামের নানা গুণাগুণ আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যেমন -
  • মস্তিষ্ক গঠনে কাঠবাদামে ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভবতী মা এবং বাড়ন্ত শিশুদের কাঠবাদাম খাওয়া খুবই জরুরি। প্রতিদিন সকাল কাঠবাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি সহজে ভ্রষ্ট হয় না।
  • প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে ভালো কোলেস্টেরল বা 'হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন'-এর মাত্রা বাড়তে থাকে এবং খারাপ কোলেস্টেরল বা 'লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন'-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • কাঠবাদামের মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন ও পটাশিয়াম হার্ট ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ভিটামিন ই হার্টের নানারকম রোগ হবার সম্ভাবনা দূরে রাখে। কাঠবাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড ও ভিটাবিন বি। তাই গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে গর্ভস্থ শিশুর জন্মকালীন জটিলতা হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • এতে রয়েছে বিশেষ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট 'ফ্ল্যাভোনয়েড', যা বিভিন্ন ধরনের অসুখ প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। কাঠবাদাম কয়েক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। বিশেষ করে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাঠবাদামের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • যাঁরা ধূমপান করেন তাঁরা প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে সিগারেটের কুফল থেকে একটু হলেও রক্ষা পাবেন।
  • কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। বেশি খেয়ে ফেললে আবার উল্টোটাও হতে পারে!
  • আগে মনে করা হতো কাঠবাদাম খেলে ওজন দ্রুত বেড়ে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, কাঠবাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে! আসলে ৪-৫ টা কাঠবাদাম পেট ভরা বলে মনে হয়। তাই খিদে পেলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে কাঠবাদাম। তাই যাঁরা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওজন কমাতে চান, তাঁরা সকালে ও রাতে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার কমিয়ে তার পরিবর্তে কাঠবাদাম খান।
  • কাঠবাদামে উপস্থিত ভিটামিন বি চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • মোনোপেজের পর নারীদের নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়া উচিত। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা মোনোপেজকালীন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। হাড়ের নানা রোগ প্রতিরোধ করতেও কাঠবাদাম ভূমিকা রাখে।
শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, রূপচর্চাতেও রয়েছে কাঠবাদামের বহুল ব্যবহার। যেমন -
  • কাঠবাদামের গুঁড়ো খুব ভালো স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে।
  • কাঠবাদাম বেটে তার সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও কোমল।
  • ত্বকের অসমান রং ও দাগ দূর করতে কাঠবাদাম বাটা ও কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
  • কাঠবাদামের তেল ব্যবহারে চুল হয়ে ওঠে ঝলমলে ও স্বাস্থোজ্জ্বল।
  • কাঠবাদামের তেল ত্বকের জন্যেও খুব উপকারী। এর নিয়মিত মাসাজে ত্বকের বলিরেখা দূর হয় এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।