ছবি সংগৃহীত

হাঁস পালনে লাখপতি

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৬, ০৪:৩৩
আপডেট: ২১ মে ২০১৬, ০৪:৩৩

খামারে ব্যস্ত জিল্লু মিয়া, ছবি: প্রিয়.কম
(সানি সূত্রধর, কিশোরগঞ্জ) জিল্লু মিয়া। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার মহরকোনা গ্রামের এই মানুষটি পড়ালেখা তেমন করেননি। তবে তিনি এখন স্বপ্ন দেখান উপজেলার হাজারো মানুষকে। হাঁস পালন করে তিনি এখন লাখপতি। কয়েক হাজার হাঁস তার খামারে। ডিম বিক্রির টাকায় তিনি জমি কিনেছেন প্রায় ১২ একর। টাকা জমিয়েছেন অন্তত ২৫ লাখ। তবে শুরুটা এতো সহজ ছিলোনা।

তিনি জানালেন, ২৭ বছর আগে গ্রামের তিন বন্ধুর একটি হাঁসের খামার দেখে উদ্বু্দ্ধ হন তিনি। বাড়িতে এসে দশ বছরের শিশু জিল্লু মিয়া কান্নাকাটি শুরু করলে বাবা ধান বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা দেন তাকে। ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ৩০০ হাঁস কিনে খামার শুরু করেন তিনি। এক মাসের মাথায় ৩০০ হাঁস থেকে পেতে শুরু করলেন ২৫০ ডিম। বছরের মাথায় বাবার দেয়া ৩০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিলেন তিনি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

তিনি জানান, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সিলেটের বানিয়াচং উপজেলা থেকে ৩০০ হাঁস কিনেছিলাম। এখন আমার খামারে পাঁচ হাজার ছোট-বড় হাঁস আছে। হাঁসের খাবারের খরচ বাদ দিয়েও আমার দৈনিক চার হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। আমার হাঁসের খামার দেখে নিকলীর অনেক লোক হাঁসের খামার করেছে। তাদের সবারই ভাগ্যে পরিবর্তন হয়েছে। আগে যারা বেকার যুবক ছিল, তারা এখন অনেকেই হাঁসের খামারি।

তিনি জানালেন তার খামারে দুই জাতের হাঁস আছে। ‘একটার নাম নাগিনী, এই জাতের হাঁস সারা দিন নদীতে ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। ডিম দেয় বেশি। অন্য জাতের নাম হলো খাগি, এরা নদীতে কুড়িয়ে খায় না। আমরা খামারিরা এগুলোকে ধান, গম ও শামুক কিনে খাওয়াই। আবার এ জাতের হাঁস ডিম দেয় কম। এ কারণে আমরা সবাই নাগিনী হাঁস পালন করি বেশি।’ নাগিনী হাঁস তিন বছর একটানা ডিম দেয়। ডিমের সংখ্যা কমে এলে সেগুলো বিক্রি করে নতুন নাগিনী হাঁস কিনে আনি।


ডিম সংগ্রহে ব্যস্ত জিল্লু মিয়া, ছবি: প্রিয়.কম
তার জানা মতে নিকলীতে এখন ৫০০-এর বেশি হাঁসের খামার আছে। সব খামার মিলিয়ে প্রতিদিন তিন লাখ ডিম হয়। প্রতিটি ডিম সাড়ে আট টাকা করে পাইকারি বিক্রি হয়।পাইকাররা এগুলো নিয়ে যায় ঢাকার কাওরান বাজার, ঠাটারী বাজার, চিটাগাং রোডসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। কার্তিক থেকে জ্যৈষ্ঠ, এই আট মাস আমরা এলাকার খামারিরা হাঁসগুলো থেকে ডিম পেয়ে থাকেন।

তবে জিল্লুরের অভিযোগ  হাঁসের খামারে যখন ডাগ প্লেগ ও রানীক্ষেত রোগ দেখা দিলে নিকলীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

সরকারি দামের ৩০ টাকা হলেও তা কিনতে হয় ৫০ টাকা দরে। বাড়তি টাকা না দিলে টিকা পাওয়া যায়না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।


জিল্লু মিয়ার হাঁসের খামার, ছবি: প্রিয়.কম
তিনি বলেন ‘পশু ডাক্তারদের খামারে আনতে হলে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। টাকা না দিলে আসেন না। এ সময় টিকা না পেলে এবং ডাক্তার আমাদের খামারে না এলে খামারের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। এমনকি খামারের সব হাঁস মরে যায়। এ সময় যদি পশু ডাক্তাররা টিকা বা পরামর্শ দিতেন, তাহলে আমরা খামারিরা উপকার ও বড় ধরনের ক্ষতির থেকে রক্ষা পেতাম।

তিনি বললেন একসময় আমি এবং আমাদের সংসারের সবাই গরিব ছিলাম। আমি মানুষের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছি। মানুষের খেতে দিনমজুরের কাজ করেছি। আমি এখন ১২ একর বোরো জমিসহ ২৫ লাখ টাকার মালিক। আগে ভাঙা ঘরে থাকতাম, এখন আমার বড় একটা পাকা ভিটের টিনশেড ঘর হয়েছে। নিজে তো এখন আর লেখাপড়া করতে পারছি না, তাই দুই মেয়েকে আমি লেখাপড়া করাচ্ছি।

জানালেন নিজের ব্যক্তিগত আক্ষেপের কথাও। ‘বাবা মারা গেছেন ২০০৬ সালের ১ জানু���ারি। বাবা বেঁচে থাকলে আমার এ অবস্থা দেখে খুব খুশি হতেন।’

তার মতে হাঁসের খামার একটা লাভজনক ব্যবসা। আমি বিশ্বাস করি, ঠিকমতো হাঁসের টিকা ও খাবার দিতে পারলে হাঁসের খামার করে আমার মতো সবাই স্বাবলম্বী হতে পারবে। তার ফলে দেশে বেকার যুবকের সংখ্যাও কমে আসবে। এখন হাঁসই আমার সব। হাঁসের সঙ্গেই আমার ওঠাবসা। খাওয়া দাওয়া, ঘুম সবই হাঁসের সঙ্গে।