স্মার্টফোনের ফিচার দিন দিন বাড়লেও কেন যেন ব্যাটারি নিয়ে অভিযোগ ব্যবহারকারীদের থেকেই যাচ্ছে। সিম্ফোনি –ওয়ালটনের কথাই ধরুন না! ১২-১৬ হাজার টাকার মধ্যে অক্টা-কোর প্রসেসর এবং ২ গিগাবাইট র্যা ম সমৃদ্ধ স্মার্টফোন তারা এনেছে তবে এই হার্ডওয়্যার গুলোর জন্য উপযুক্ত ক্ষমতার ব্যাটারি তারা এখনো দেয়নি। ফলে, সবার কাছে স্মার্টফোন সহজলভ্য হবার পরেও কমতি থেকেই যাচ্ছে। যদিও কথায় আছে, ‘মানুষের চাওয়ার কোন শেষ নেই!’ তবুও, আমার মতে মানুষের স্মার্টফোন বিষয়ক এই চাহিদাটা অমূলক নয়। যাই হোক, যাদের লং-লাস্টিং ব্যাটারি ব্যাক-আপের প্রয়োজন হয় তাদের জন্যেই আজকের পোষ্টটি লিখতে বসেছি, শেয়ার করবো এমন ৩টি উপায় যেগুলোর মাধ্যমে সহজেই আপনি আপনার স্মার্টফোনে লং-লাস্টিং ব্যাটারি ব্যাক-আপ উপভোগ করতে পারবেন।

১। ব্যাটারি কেস

আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনে লং-লাস্টিং ব্যাটারি ব্যবহার করতে চান তবে সম্ভবত ব্যাটারি কেস ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে বেশি সহজ এবং সুবিধাজনক। নাম থেকেই আসলে প্রোডাক্টটি কি হতে পারে তা কিছুটা হলেও আন্দাজ করে নেয়া যায়, ‘এটা মূলত একটি সাধারণ কেসের মতই কেস যা আমরা আমাদের স্মার্টফোনের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করে থাকি যাতে করে হাত থেকে নিচে পড়ে গেলে স্মার্টফোনটির খুব একটা ক্ষতি না হয়। তবে সাধারণ কেসের সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে, ব্যাটারি কেসের সাথে একটি বাড়তি বিল্ট-ইন ব্যাটারি সংযুক্ত করা থাকে। এই কেসের ব্যাটারিটি মূলত স্মার্টফোনের চার্জিং পোর্টের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে, তাই যখন আপনি আপনার চার্জারটি এই কেসের পোর্টে যুক্ত করেন তখন কেসের সাথে থাকা ব্যাটারিটি চার্জতো হয়ই, সাথে আপনার স্মার্টফোনের মূল ব্যাটারিটিও চার্জ হতে থাকে।’ টেকনিক্যালি বা আরও সহজে এক কথায় যদি বুঝতে চান তবে বিষয়টা হচ্ছে, ‘এটি মূলত একটি আলাদা ব্যাটারি যা আপনি আপনার স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত করে বহন করছেন।’ আপনি এই পদ্ধতিতে চমৎকার লং-লাস্টিং ব্যাটারি লাইফ পাবেন এমনকি যার ফলে আপনি এক্সট্রিম ব্যবহার করেও হয়তো পুরো একদিন আপনার স্মার্টফোনটিকে চার্জ না দিয়েও ব্যবহার করতে পারবেন তবে এজন্য অবশ্য আপনাকে একটু ছাড় দিতে হবে! এযুগের স্মার্টফোন গুলো যে শুধু ভেতর দিয়েই শক্তিশালী হয়ে উঠছে তা কিন্তু নয় বরং স্লিক ডিজাইনের এই স্মার্টফোন গুলোকে তৈরি করা হচ্ছে অনেক হালকা-পাতলা করেই। তবে আপনি যদি ব্যাটারি কেস ব্যবহার করেন তবে আপনার সেই স্মার্টফোনটি আর স্লিম থাকবেনা! এমনিতেই কেস লাগানোর ফলে স্মার্টফোনের থিকনেস বেড়ে যায়, আর যেহেতু এটি হবে ব্যাটারি যুক্ত কেস সেহেতু বুঝতেই পারছেন এর থিকনেস ভালোই বৃদ্ধি পাবে। তবে আমার মতে সুবিধাই বেশি। কেননা, এটি আপনার স্মার্টফোনের সাথে এমন ভাবে যুক্ত থাকবে যাতে করে আপনার ঝামেলা লাগবেনা। শুধু, যখন আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি লেভেল নিম্ন স্তরে থাকবে তখন আপনি ব্যাটারি কেসের সুইচ অন করে দিলেই সেই ব্যাটারি কেসের বিল্ট-ইন ব্যাটারিটি আপনার মোবাইলের ব্যাটারিটিকে চার্জ করতে শুরু করবে। আগেই বলেছি, এই পদ্ধতিটিই সম্ভবত সবচাইতে আইডিয়াল অপশন যদি আপনি আপনার স্মার্টফোনে লং-লাস্টিং ব্যাটারি ব্যবহার করতে চান। Mophie নামের একটি প্রতিষ্ঠান আইফোনের এই ব্যাটারি কেসের জন্য এখন পর্যন্ত সবচাইতে উপযুক্ত এবং চমৎকার ব্যাটারি কেস নির্মান করে আসছে। তবে, প্রতিষ্ঠানটি শুধু আইফোনই নয় বরং অন্যান্য স্মার্টফোনের জন্যেও ব্যাটারি কেস নির্মান করে থাকে। এছাড়াও, এরকম অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে যারা স্মার্টফোনের জন্য চমৎকার ডিজাইনের এবং বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি যুক্ত ব্যাটারি কেস নির্মান করে থাকে। আপনি যদি এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করতেই চান তবে আজই লোকাল মার্কেটে খোঁজ করতে পারেন। যদি না পান তবে আপনার স্মার্টফোনের জন্য বাটারি কেস অ্যামাজন বা ই-বে থেকেও আনিয়ে নিতে পারেন।

২। আফটারমার্কেট ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট

অনেক স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেই এরকম দেখা গিয়েছে যে স্মার্টফোনটির মূল ব্যাটারি অচল হবার পর সেই স্মার্টফোনটির জন্য আর নতুন ব্যাটারি পাওয়া যাচ্ছে না। এটা খুবই বিরক্তিকর। তবে, বেশির ভাগ জনপ্রিয় স্মার্টফোনগুলোতে আবার এরকম সমস্যা দেখা যায় না। যেমন, স্যামসাং-এর গ্যালাক্সি সিরিজের লাইনআপে প্রায় সব স্মার্টফোনেরই ইউসার-রিপ্লেসেব্যল ব্যাটারি প্রযুক্তি বাজারে পাওয়া যায়, এমনকি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৫ এর মত ফ্লাগশীপ ডিভাইসগুলোও এর মধ্যে পরে। আসলে, এরকমই হওয়া উচিৎ। কেননা, একটি স্মার্টফোনকে যদি এযুগে শুধুমাত্র এর ব্যাটারি পাওয়া যাচ্ছে না বলে ব্যবহার না করা যায় তবে এটা খুবই বাজে একটি বিষয় বলেই আমি মনে করি। যাই হোক, আপনার স্মার্টোনটি যদি আপনাকে ব্যাটারি রিপ্লেস করার এক্সেস দিয়ে থাকে তবে আপনি লং-লাস্টিং ব্যাটারি ব্যাক-আপ পেতে আফটারমার্কেট ব্যাটারি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আপনি যদি আপনার ফোনটির ব্যাটারি-লাইফ দীর্ঘায়িত করার পাশাপাশি আকর্ষনিয়ও রাখতে চান তবে এটি সবচাইতে ইফেক্টিভ দিক। কেননা, এতে করে শুধু আপনি আপনার স্মার্টফোনের মূল ব্যাটারিটি পরিবর্তন করছেন। আপনি যদি ব্যাটারি রিপ্লেস করতে চান তবে ইন্টারনেটে ‘extended battery for’ লিখে আপনার স্মার্টফোনের মডেলটি দিয়ে সার্চ করে দেখতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৫ ডিভাইস থাকে তবে আপনি অ্যামাজন থেকে $40 ডলারের (কাছাকাছি) মাধ্যমে ডিভাইসটির মূল ব্যাটারির চাইতে তিন গুণ ভালো ব্যাটারি কিনে ব্যবহার করতে পারেন। সতর্কতাঃ যদিও এই পদ্ধতিতে আপনার স্মার্টফোনটির ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি পাবে তবে অনেক সময়েই ক্রেতারা সুপার-চিপ ব্যাটারি কিনে পরবর্তীতে পস্তায়। আপনার যদি সত্যিই ব্যাটারি পারফর্মেন্স ভালো দরকার হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনাকে এজন্যে সেরা ব্যাটারিটিই কিনতে হবে।

৩। পাওয়ার ব্যাংক

নিশ্চয়ই আপনার কাছে পাওয়ার ব্যাংকের নাম অজানা নয়, হওয়া উচিৎও নয়। কেননা, এই প্রযুক্তিটি বেশ আগের।যাই হোক, আপনি যদি ব্যাটারি কেস বা রিপ্লেসমেন্ট ব্যাটারির ঝামেলায় না যেতে চান তবে এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য সেরা হওয়া উচিৎ। এতে অবশ্য কিছু সুবিধা আছে, যেমন-

• আপনার স্মার্টফোনটির থিকনেস বাড়বেনা।
• পাওয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি অন্যান্য ডিভাইসও চার্জ করতে পারবেন।

অল্প বিস্তর খুলে বলি...। যেহেতু পাওয়ার ব্যাংক সম্পুর্ন আলাদা একটি ডিভাইস এবং এটি শুধু মাত্র আপনার স্মার্টফোনটি চার্জ করার সময় আপনার ফোনের সাথে যুক্ত করতে হয় তাই আপনার স্মার্টফোনটির থিকনেস বৃদ্ধি পাবার কোন কারণ নেই। এছাড়া, আপনি পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে বাইরে গেলে অন্যান্য ডিভাইস সমূহও চার্জ করতে পারবেন, যেমন-ট্যাব! ট্যাব-ডিভাইসে মূলত স্মার্টফোনের চাইতেও বেশি ব্যাটারি ব্যাক-আপ দরকার হয়ে থাকে। তবে, এই পদ্ধতির কিছু ড্র-ব্যাক বা অসুবিধাও রয়েছে। যেহেতু এটি একটি আলাদা ডিভাইস, তাই এটি বহন করতে আপনার ঝামেলা মনে হতে পারে, আপনি যদি সবসময় ব্যাক-প্যাক ব্যবহার করে থাকেন তবে আলাদা কথা। দ্বিতীয়ত, পাওয়ার ব্যাংকের সাহায্যে স্মার্টফোন চার্জ করতে ক্যাবলের প্রয়োজন হয়। তাই বেশি ক্ষমতাযুক্ত পাওয়ারব্যাংক গুলো কিছুটা বড় হবার কারণে পকেটেই স্মার্টফোন চার্জ দেয়াটা ঝামেলার হয়ে থাকে!! সতর্কতাঃ দয়া করে সস্তা পাওয়ার ব্যাংক কিনবেন না।

শেষ কথাঃ

উপরের পদ্ধতি তিনটির সাথে আমি এগুলোর সুবিধা এবং অসুবিধাও খুলে বলেতে চেষ্টা করেছি। ব্লগটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনার জন্য কোনটি পারফেক্ট হবে আপনি বুঝে গিয়েছেন। আমার মতে, ব্যাটারি প্যাকই সবচাইতে ভালো সেবা দিয়ে থাকবে যদিও এক্ষেত্রে আপনাকে কিছুটা ‘লুক’ ছাড় দিতে হচ্ছে তবে আপনি এক্সট্রিম পর্যায়ে আপনার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করতে পারছেন। তবে শেষে ছোট্ট একটি টিপস দিয়ে যাই... যদি উপরের পদ্ধতি গুলো ঝামেলার মনে হয় তবে যখনই অফিসে থাকবেন বা কোন কম্পিউটারের সামনে থাকবেন স্মার্টফোনটি চার্জে দিয়ে রাখবেন! স্বীকার করছি যে এই পদ্ধতিতে খুবই ধীর গতিতে চার্জ হয় স্মার্টফোনটি তবে ‘নাই মামার চাইতে কি কানা মামাই উত্তম নয়?’ বলুন??