ছবি সংগৃহীত

যাদের হাতের স্পর্শে টেকনোলজিঃ টিম বার্নার্স লি

Jahan Ahmed
লেখক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০১৪, ০৮:১৯
আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৪, ০৮:১৯

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা www এর সাথে বিশেষ পরিচিত। যেকোনো ওয়েবসাইটের শুরুতেই www লেখা লাগে। কি এই www? এটি হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বহুল ব্যবহৃত এই তিনটি অক্ষরের জনক হচ্ছেন টিম বার্নার্স লি। তিনি একজন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী। লি ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল পাশ করার পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড এর দি কুইনস কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি একটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতে কাজ করেন। টিম বার্নার্স-লি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চে (সার্ন)-এ ১৯৮০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি সেখান থেকে জন পুলি'স ইমেজ কম্পিউটার সিস্টেম কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি পুনরায় সার্ন এ যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালের মার্চে টিম বার্নাস লি পূর্ববর্তী হাইপারটেক্সট সিস্টেম থেকে ধারণা নিয়ে যে প্রস্তাবনা লেখেন তা থেকেই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে এই কাজে লি'র সাথে যোগ দেন বেলজিয়ান বিজ্ঞানী রবার্ট কাইলিয়াউ। এসময় তারা উভয়েই সার্ন এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রস্তাবনায় তারা উল্লেখ করেন,“ হাইপারটেক্সট-কে লিংক ও ওয়েব হতে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে একজন ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন মতো ওয়েব পরিভ্রমণ করতে পারবে।” সেই থেকে শুরু করে টিম বার্নার্স লি ওয়েবের উন্নতি সাধনে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ তৈরিতেও ভূমিকা রাখেন যার মাধ্যমে ওয়েবপেজ কম্পোজ করা হয়। তিনি সেমান্টিক ওয়েব তৈরিতেও ভূমিকা রাখছেন। টিম বার্নার্স-লি'র ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবঃ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হাইপারটেক্সট ডকুমেন্টগুলো নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW বা W3) নামে পরিচিত। হাইপারলিংকের সাহায্যে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী টেক্সট, চিত্র, ভিডিও ও অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ ওয়েব পেইজ দেখতে পারে। সাধারনত ব্রাউজারে ইউআরএল টাইপ করে বা কোন পাতা থেকে হাইপারলিঙ্ক অনুসরণ করে ওয়েব পেজে ঢোকার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ওয়েব ব্রাউজার কিছু বার্তা প্রদান করা শুরু করে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে। এরপরই ওয়েব পেজটি প্রদর্শিত হয়।প্রথমেই ইউআরএল এর সার্ভার আইপি অ্যাড্রেস ধারণ করে। এ জন্য এটি ডোমেইন নেম সিস্টেম নামে পরিচিত বিশ্বজনীন ইন্টারনেট ডাটাবেস ব্যবহার করে। এরপর ব্রাউজার নির্দিষ্ট ঠিকানাটিকে একটি এইচটিটিপির আবেদন জানায় ওয়েব সার্ভারের কাছে। সাধারণত ওয়েব পেজেটির এইচটিএমএল লেখার জন্য শুরুতে আবেদন জানানো হয়। এরপর ওয়েব ব্রাউজারটি ছবিসহ অন্যন্য প্রয়োজনীয় ফাইলের জন্য আবেদন পৌছে দেয়। ওয়েব সার্ভার থেকে আবেদনকৃত ফাইলসমূহ পাবার পর ওয়েব ব্রাউজারটি এইচটিএমএল, সিএসএস ও অন্যান্য ওয়েব ল্যাঙ্গুয়েজ অনুযায়ী পাতাটিকে স্ক্রিনে সাজিয়ে ফেলে। অধিকাংশ ওয়েব পাতাগুলোতে নিজস্ব হাইপারলিঙ্ক থাকে যা ওয়েব নামে পরিচিত। টিম বার্নার্স-লি সর্বপ্রথম একে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে নামকরণ করেন। এক নজরে টিম বার্নার্স লি’র স্বীকৃতিঃ

  • ১৯৯৪ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হল অফ ফেম- এর ছয়জন সদস্যের মধ্যে একজন ছিলেন।
  • ১৯৯৫ সালে তিনি অ্যাসোসিয়েশন অফ কম্পিউটিং মেশিনারি (এসিএম) এর কাছ থেকে সফটওয়্যার সিস্টেম অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
  • ১৯৯৭ সালে তিনি গ্লোবাল কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এ অবদান রাখার জন্য তাকে কুইনস বার্থডে অনার প্রদান করা হয়।
  • ১৯৯৮ সালে ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্স তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে।
  • ২০০০ সালে ‘দি ওপেন ইউনিভার্সিটি’ তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে।
  • ২০০১ সালে তিনি আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস এন্ড সায়েন্সেস এর একজন সহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন।
  • ২০০২ সালে বিবিসি’র এক জরিপে ‘ 100 Greatest Britons’ এর মধ্যে একজন নির্বাচিত হন।
  • ২০০৩ সালে কম্পিউটার হিস্টোরি মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
  • ২০০৪ সালে তিনি ল্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অফ সায়েন্স ডিগ্রী গ্রহণ করেন।
  • ২০০৭ সালে তিনি বিশ্বখ্যাত পত্রিকা 'দি টেলিগ্রাফ’ এর ‘100 greatest living geniuses’ এর মধ্যে যৌথভাবে প্রথম স্থান দখল করেন।
  • ২০১১ সালে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অফ সায়েন্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
এছাড়াও তিনি অনেক পুরষ্কার লাভ করেন এবং সম্মানসূচক ডিগ্রী লাভ করেন। লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসরটিয়ামের (W3C) ডিরেক্টর। তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার এবং MIT Computer Science and Artificial Intelligence Laboratory (CSAIL) এর সিনিয়র রিসার্চার। তিনি ওয়েব সায়েন্স রিসার্চ ইনিশিয়েটিভেরও একজন ডিরেক্টর এবং MIT Center for Collective Intelligence এর একজন সদস্য।