ছবি সংগৃহীত

যখন কাঁদলেও চোখে পানি আসে না

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৫:৪৪
আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৫:৪৪

কেউ বকা দিয়েছে, ভীষণ কান্না পাচ্ছে, অথচ চোখে পানি আসছে না? কোনো কারণে দুকূল ছাপিয়ে অভিমান এসে জমা হয়েছে বুকে, কাঁদতে পারলে হালকা লাগত অথচ কাঁদতে পারছেন না? ভীষণ কান্না পেলেও চোখ দিয়ে পানি না পড়া, তার বদলে চোখ সাংঘাতিক জ্বালা করা কিন্তু এক ধরনের অসুখ! আমাদের চোখে অশ্রু তৈরি ও অশ্রুর বহির্গমনের জন্য নির্দিষ্ট পথ আছে। অশ্রু তৈরির গ্রন্থি, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ল্যাক্রিনাল গ্ল্যান্ড বলে, তা চোখের ওপরে ও বহিঃকোণে অবস্থিত। এই গ্রন্থিতেই অশ্রু তৈরি হয়ে ছোট ছোট নালির মাধ্যমে আমাদের চোখে আসে। অশ্রু কিন্তু আমাদের চোখের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ এই চোখের জলই আমাদের চোখকে সিক্ত ও মসৃণ রাখে এবং চোখের ওপর একটা সমান স্তর তৈরি করে। এই চোখের জলেই থাকে 'ল্যাক্টোফেরিন' নামক একটি পদার্থ যা আমাদের চোখের কর্নিয়া ও কনজাংটাইভাকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে! গ্রন্থি থেকে যথেষ্ট পরিমাণে অশ্রু তৈরি না হলে চোখের সারফেস শুকনো হয়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় কষ্টকর সব উপসর্গ। এর যথোপযুক্ত চিকিত্‍সা না হলে মানুষ অন্ধও হয়ে যেতে পারে। এই অন্ধত্বের ডাক্তারি নাম 'কর্নিয়াল ব্লাইন্ডনেস'।

কেন হয় :

দুচোখের অশ্রুহীনতার জন্য নানা কারণ দায়ী হতে পারে। যেমন -
  • মানুষটির যদি নার্ভের রোগ থাকে। বিশেষ করে Trigeminal বা Facial nerve এ কোনো সমস্যা থাকলে।
  • ওষুধের প্রভাবে হতে পারে।
  • চোখে অ্যাসিড বা ক্ষার পড়লে এবং তার সঠিক চিকিত্‍সা না করলে এমনটা হতে পারে।
  • অশ্রু তৈরির গ্রন্থির নানা অসুখ যেমন জোগ্রেন সিন্ড্রোম বা কেরাটোকনজাংটিভাইটিস সিক্কা থেকে হতে পারে।
  • ভিটামিন এ-এর অত্যধিক অভাব হলে হতে পারে।
  • হরমোনের সমস্যা থাকলে হতে পারে।
  • অশ্রু তৈরির গ্রন্থি শুকিয়ে গেলে হতে পারে।
  • অনেক সময় বার্ধক্যের কারণেও হয়।

উপসর্গ :

  • আনন্দ বা কষ্ট কোনো আবেগেই চোখ থেকে জল ঝরে না।
  • বিভিন্ন কষ্টকর অনুভূতি হয়। যেমন চোখ জ্বলা, চোখে অস্বস্তি অনুভব করা, শুষ্কভাব অথবা অল্প সময় কাজ করলেই চোখে শ্রান্তি অনুভব করা।
  • চোখের মধ্য কড়কড় করা। চোখে ধুলা-ময়লা পড়লে যেমন লাগে তেমন অনুভূত হওয়া।
  • চোখে পিচুটির পরিমাণ বেশি হওয়া।
  • আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হওয়া।

চিকিত্‍সা :

উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিত্‍সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ডাক্তাররা 'কৃত্রিম অশ্রু'র জন্য ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন। রোগ জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে।

সাবধানতা :

  • ধুলা-ময়লাযুক্ত স্থানে বা সিমেন্টের গুঁড়ো আছে এমন জায়গায় চশমা ব্যবহার করুন।
  • চোখে কিছু পড়লে সাথে সাথে পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। চোখ কচলাবেন না।
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খান।
  • ময়লা হাতে চোখ চুলকাবেন না।