ছবি সংগৃহীত

মাহে রমজানের হাদিয়া- ১১ : রোজার ফজিলত

priyo.Islam
লেখক
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৪, ০৮:৫০
আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪, ০৮:৫০

রোজার ফজিলত : হে আমার মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দ, আমরা আপনাদেরকে এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। মহান আল্লাহর কাছে তাওফিক প্রার্থনা করছি, যাতে আমরা রমজানের মহা মূল্যবান মুহূর্তগুলোকে নেক আমালের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হতে পারি। আরো প্রার্থনা করছি হে আল্লাহ তুমি আমাদের থেকে তা কবুল করে নাও এবং আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের বিনিময় দশগুণ থেকে সাতশতগুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আল্লাহ বলন, কিন্তু রোজা তার ব্যতিক্রম, কারণ সেটি কেবলমাত্র আমার জন্যই রাখা হয় আর তার বিনিময় আমিই দিব। সে আমার কারণেই তার প্রবৃত্তিগত চাহিদা ও পানাহার ত্যাগ করে থাকে। রোজাদারের জন্য দুইটি খুশি, একটি খুশি হলো ইফতারের সময়, আর অপর খুশি হলো আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। (বোখারি:১৮৯৪ ও মুসলিম:১১৫১) এ হাদিস রমজানের ফজিলত ও অন্যান্য আমলের তুলানায় রোজার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপর প্রমাণস্বরূপ। রোজার বৈশিষ্ট্য: ১. রোজার মধ্যে এখলাস অন্যান্য আমলের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। যেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ বলেন সে আমার কারণেই পানাহার ও প্রবৃত্তিগত চাহিদা ত্যাগ করেছে। ২. আল্লাহ তাআলা সমগ্র আমল থেকে রোজাকেই তার নিজের জন্য নির্বাচন করেছেন এবং তিনি নিজেই রোজার বিনিময় বলে সুসংবাদ দান করেছেন। তিনি বলেন - রোজা আমার জন্য আর আমিই তার বিনিময় দিয়ে থাকি। ৩. রোজাদারের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের আনন্দ লাভ। একটি হলো ইফতারের সময় যখন আল্লাহ তাদেরকে পানাহারের অনুমতি দান করেন আর অপরটি হলো আখেরাতে যখন আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাত হবে। আর এ ধরনের খুশি হলো আল্লাহর আনুগত্যের খুশি তাই একে প্রশংসনীয় খুশিই বলা চলে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا # يونس 85 বল, এগুলো আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের মাধ্যমে। সুতরাং এ কারণেই তাদের খুশি হওয়া উচিত। [সূরা ইউনুস: ৮৫] ৪. আল্লাহ তাআলা রোজাদারের সম্মানে জান্নাতের একটি দরজা নির্ধারিত করেছেন, যে দরজা দিয়ে কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। সহিহ বোখারি ও মুসলিমে সাহাল বিন সায়াদ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে । কিয়ামত দিবসে এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাড়াবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না । [বোখারি ১৮৯৬, মুসলিম ১১৫২] ৫. আল্লাহ তাআলা রোজাদারকে কষ্টদায়ক গুনাহ ও ক্ষতিকর বস্তু হতে হেফাজত করেন। আরো হেফাজত করেন জাহান্নামের আগুন থেকে। যেমন হাদিসে এসেছে। الصيام جُنَّة রোজা ঢালস্বরূপ। অর্থাৎ রোজার কারণে মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে। রোজার অপর একটি ফজিলত হলো, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য। যেমন আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় এমন কিছু দোয়া আছে যা কখনোই রদ করা হয় না। [ইবনে মাজা:১৭৫৩ হাকিম:৪২২] ৬. একজন রোজাদার যাতে বেশি বেশি করে দোয়া করতে থাকে। আল্লাহ তাআলা রোজার বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে মাঝে একটি আয়াতে বলেছেন, وإذا سألك عبادي عني فإني قريب أجيب دعوة الداع إذا دعان # البقرة 186 আমার বান্দারা আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করলে (বলবে) আমি নিকটেই আছি। প্রার্থনাকারী প্রার্থনা করলে তার প্রার্থনার জবাব দিয়ে থাকি। [সূরা বাকারা: ১৮৬] ৭. রোজা রোজাদারের প্রতিটি আমলকে ইবাদতে পরিণত করে। যেমন আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা: হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রোজাদারের চুপ থাকা তাসবিহ স্বরূপ, তার ঘুম ইবাদত, তার দোয়া গ্রহণযোগ্য আর তার কাজের সাওয়াব অধিক হারে বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। (আবু দাউদ, বাইহাকী ) ৮. রোজা সবরের একটি অংশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজা ধৈর্য্যের অর্ধেক। [তিরমিজি ও ইবনে মাজা] আর ধৈর্য্য সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় ধৈর্য্যশীলদের বিনিময়-পুরস্কার হিসাব ছাড়া দেয়া হবে। রোজা সুস্থতা ও সুসাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রোজা রাখ এবং সুস্থ থাক। এ ছাড়াও রোজা রাখার অনেক বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উপকার আছে যেগুলো এখানে বর্ণনা করে শেষ করা খুব একটা সহজ নয়, তবে বিশেষ বিশেষ কয়েকটি এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। সতর্ক ও উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট মনে করছি। শায়খ সালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান সৌজন্যে : ইসলামহাউজ