
ছবি সংগৃহীত
ভার্চুয়াল সম্পর্কে থাকুন নিরাপদ
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৩, ১৫:৩৬
আজকাল ফেসবুকে কেবল বন্ধুত্ব নয়, প্রেম হওয়াটাও খুব সাদামাটা একটা ঘটনা। অবসরে সময় কাটাবার কিংবা দূরে থাকা আত্মীয় বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম যেমন এই ফেসবুক, তেমনি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সাথে পরিচিত হবার মাধ্যমও। এই পরিচয় থেকেই সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, বন্ধুত্ব হচ্ছে, এমনকি হচ্ছে প্রেম আর পরিণয়ও। বর্তমান পৃথিবীতে “দূরত্ব” শব্দটা ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, এবং তার অনেকটাই এই ফেসবুকের কারণে। এই তো গেল ভালো দিক, তাই বলে কি খারাপ দিক নেই ফেসবুকের? অবশ্যই আছে!! এবং সত্যি বলতে গেলে কি, ভালো আর খারাপ দিক গুলো রীতিমতন সমান-সমান এই ফেসবুকের ক্ষেত্রে। ফেসবুকে মাত্রা অতিরিক্ত আসক্তি, ফলে কাজকর্ম আর লেখা পড়ায় অমনোযোগিতা... ইত্যাদি হাজারো ঋণাত্মক দিক ফেসবুকের আছেই। কিন্তু সাথে আরও আছে একটি ভয়ানক ব্যাপার- “অনিরাপত্তা”!! বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকেও নিজেকে নিরাপদ রাখবার ব্যাপারটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। ভার্চুয়াল জগতে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আর প্রেম যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, ঠিক সেভাবেই বাড়ছে ধোঁকা- প্রতারণা- যৌন হয়রানির ছাড়াও আরও মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত হবার হার। বিভিন্ন সুসংগঠিত সঙ্ঘ ও কিছু অতি চালাক ব্যক্তি ফেসবুকে নিজেদের নেটওয়ার্ক বিছিয়ে রেখেছে। এবং তাদের পাতা এই ফাঁদে পা দিয়ে অনেক তরুণ তরুণীরাই হচ্ছে চাকরির নামে প্রতারণার শিকার, প্রেমের নামে ধোঁকা ও হয়রানির শিকার, এমনকি অপহরণ ও ধর্ষণের মতন ঘটনাও ঘটছে। সাথে আরও আছে ব্যক্তিগত ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া, ব্ল্যাক মেইল, ফেক আইডি খুলে অপরাধ সংগঠনে ব্যবহার করা সহ নানান রকম ঘটনা ঘটেই চলেছে। আসুন, আজকে আলোচনা হয়ে যাক ভার্চুয়াল জগতে নিরাপদ থাকবার নানা দিক সম্পর্কে। ছবির প্রাইভেসি- কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে আপনার ফেসবুক বন্ধুদের কতজনকে আপনি বাস্তবে চেনেন? ভালো করে ভাবতে গেলে দেখবেন যে সংখ্যাটা আসলে খুব বেশী নয়। তাহলে? যে মানুষটিকে আপনি বাস্তবে চেনেন না পর্যন্ত, তাকে কি করে অনুমতি দিচ্ছেন আপনার ব্যক্তিগত ছবি গুলো দেখবার জন্য? আপনার ছবি দেখে হয়তো অনেকেই লাইক/ কমেন্ট করছে , কিন্তু সেই ফাঁকে চুরিও হয়ে যাচ্ছে আপনার ছবি। অনেকেই হয়ত তা সেভ করে রাখছে নিজের কম্পিউটারে। আর সময় সুযোগ বুঝে তা ব্যবহার করছে ফেক আইডি ব্যবহার করতে, কিংবা বিভিন্ন পেজে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে আপনার আত্মীয় পরিজন ও একান্ত আপন বন্ধুদের নিয়ে ফেসবুকে একটি গ্রুপ করে রাখবেন। প্রাইভেসি সেটিঙয়ে এমন ব্যবস্থা করে রাখবেন যেন শুধু সেই মানুষগুলোই আপনার ব্যক্তিগত ছবিগুলো দেখতে পারে। লাইক/ কমেন্টের লোভে নিজের ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পাবলিক করে দিবেন না। একান্ত ব্যক্তিগত ছবি না দেয়া- অনেক তরুণ তরুণীরাই (বিশেষ করে মেয়েরা) ফেসবুকে নিজেদের সৌন্দর্য জাহির করার আগ্রহে নানান অঙ্গ ভঙ্গিমায় ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করে। এটা খুবই অনুচিত। ছবিটি দেয়ার সময় মেয়েটি হয়ত কল্পনাও করে দেখছে না যে কত পুরুষের কাছে এই ছবি যৌন উত্তেজক হিশাবে বিবেচিত হবে, এবং তারা হয়তো ছবিটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখবে। শুধু তাই নয়, ছবিটি তারা ব্যবহার করবে বিভিন্ন পর্ণ সাইট ও পেজে। তাই ফেসবুকে ছবি আপলোড করবার সময় প্রাইভেসির দিকে মনোযোগের পাশাপাশি রুচিশীলতার পরিচয় দিন। এমন কোনও ছবি আপলোড করবেন না, যা যৌন উত্তেজক পোশাকে বা ভঙ্গিমায় তোলা। আপনার ছোটভাই বোন বা সন্তানেরা কি ধরনের ছবি আপলোড করছে, সেই ব্যাপারেও নজর রাখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর- ফেসবুকে কখনও নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর প্রোফাইল তথ্যতে লিখে রাখবেন না। তাতে নানা রকম হয়রানির শিকার তো হবেনই, সাথে নজরে পড়ে যেতে পারেন কোনও অপরাধ চক্রেরও। ফেসবুকে কোনও বন্ধু ঠিকানা আর ফোন নম্বর চাইলেই চট করে দিয়ে দেবেন না। প্রেমের ব্যাপারে- কল্পনা বা আবেগের দুনিয়ায় সব কিছুকে সঠিক মনে হলেও, বাস্তব পৃথিবীতে কিন্তু আসলে তা নয়। ভার্চুয়াল একটি সম্পর্ককে আপনার কাছে খুব রোমান্টিক মনে হতে পারে অবশ্যই, কিন্তু সাথে এটাও মাথায় রাখবেন যে মানুষটিকে আপনি এখনও বাস্তব জীবনে চেনেন না। ফেসবুকে সব চাইতে বেশী ধোঁকা, প্রতারণা ও অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে কিন্তু এই প্রেমের উপরে ভর করেই। এটা খুব সাধারণ ঘটনা যে প্রোফাইল ছবির সাথে আসল মানুষটির কোনও মিল নেই, কিংবা ফেসবুক মোবাইল ফোনে আপনি যে নারী বা পুরুষের সাথে আপনি প্রেম করছেন তিনি আসলে বিবাহিত। কিংবা হতে পারে তিনি কোনও অপরাধ চক্রের সদস্য, এবং আপনি তার পরবর্তী শিকার। অনেক মধ্য বয়স্ক নারী পুরুষেরাই নিঃসঙ্গতা দূর করতে ফেসবুকে আসেন, এবং নিজের সত্যতা গোপন করে জড়িয়ে যান অনৈতিক সম্পর্কে। আবার ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেবার ঘটনা যেমন আছে, তেমনি আছে ঠিকানা যোগাড় করে বাসায় ডাকাতি করবার ঘটনাও। এবং এই সব আমাদের দেশেই ঘটছে। পাশাপাশি বছরের পর বছর বাস করেও মানুষ চেনা যায় না, সেই তুলনায় ফেসবুক অনেক তুচ্ছ ব্যাপার। তাই মন ভাঙ্গার ঝুঁকিতে না গিয়ে জেনে বুঝে সম্পর্ক গড়ুন, সম্পর্ক হয়ে গেলেই কাউকে শতভাগ বিশ্বাস করতে যাবেন না। বাস্তব জীবনে একটু খানি সন্দেহপ্রবনতা কিন্তু নিজের নিরাপত্তা রক্ষাথেই ভালো জিনিস। ফেসবুক বন্ধুর সাথে দেখা করার ব্যাপারে- আমরা অনেকেই ফেসবুক বন্ধুদের সাথে দেখা করে থাকি, দেখা যায় ফেসবুকের বন্ধুটি একসময় আমাদের বাস্তব জীবনেরও বন্ধু হয়ে গেছে। তাইনা? কিছু খারাপ মানুষের কারণে তো আর সমস্ত সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলা যায় না!! কিন্তু তাই বলে কাউকে চোখ বুজে বিশ্বাস করবারও কিছু নেই। বরং কিছুদিন সতর্ক থেকে মানুষটাকে যাচাই করে দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে করে দেখুন, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের অভিনয় করে অনেক পুরুষকেই লুট করবার ঘটনা আমাদের দেশেই ঘটেছে। আরও ঘটেছে মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা ছাড়াও অপহরণ করে মুক্তিপণ চাইবার ঘটনাও। তাই ফেসবুকের বন্ধু বা প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে সাক্ষাত করতে যাবার সময় মনে রাখুন কয়েকটি বিষয়- *অবশ্যই সন্ধ্যার পড়ে বা রাতের বেলায় কারো সাথে দেখা করতে যাবেন না। দিনের কোনও একটা সময় বেছে নিন দেখা করার জন্য। *কোনও নির্জন জায়গা বা দূরে কোথাও দেখা করতে রাজি হবেন না। লঙ ড্রাইভে যাবার প্রস্তাব করলে প্রত্যাখ্যান করুন। *কোনও "পাবলিক প্লেস", যেমন কোনও মার্কেট বা খাবার জায়গা বেছে নিন দেখা করবার জন্য। এমন কোথাও, যেখানে অনেক মানুষ থাকে। *সব চাইতে ভালো হবে যদি প্রথম দেখা করবার সম��় সাথে কোনও বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষীকে নিয়ে যান। তাতে আপনার নিরাপত্তা থাকবে শতভাগ অক্ষুণ্ণ। এসব ছাড়াও... সকলকে সব ব্যক্তিগত কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। ফেসবুকে বন্ধু হিশাবে অ্যাড করার আগে সেই মানুষটির লাইক লিস্ট বা আগ্রহের বিষয় গুলো খতিয়ে দেখতে চেষ্টা করুন। এতে করে তার মানসিকতা সম্পর্কে আঁচ পাবেন। বন্ধুদের সবারই কার্যকলাপের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। কারো আচার আচরণ সন্দেহজনক বা আপত্তিজনক মনে হলে তাকে আন ফ্রেন্ড বা ব্লক করুন। আপনার ফেসবুক আইডি আপনার বাড়ির মতই, যার সম্পর্কে মনে বিশ্বাস নেই তাকে স্থান দেয়ার অর্থ নিজের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখে ফেলা। ফেসবুক আছে, ফেসবুক থাকবে। আর ফেসবুক থাকলে সম্পর্কও তো হবেই, তাই না? তবে প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ ভালো। কি ক্ষতি হবে, যদি ফেসবুকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে একটু বাড়তি সতর্ক থাকেন? ক্ষতি কিছুই হবে না, বরং পুরোটাই লাভ। এবং আপনি একজন নারী হয়ে থাকলে তো এই বাড়তি নিরাপত্তা টুকুন অতি অবশ্যই চাই আপনার। মনে রাখবেন, জীবনের পথে একটু বাড়তি সতর্কতা অনেক বড় বিপর্যয় থেকে দূরে রাখতে পারে আমাদের।
- ট্যাগ:
- লাইফ
- জীবন চর্চা
- তারুণ্য