ছবি সংগৃহীত

"ব্রেক-আপ" কেন এতো কষ্ট দেয়?

দেয়া
লেখক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫, ১৭:৩৩
আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫, ১৭:৩৩

(প্রিয়.কম)- বিভিন্ন কারণে ব্রেক-আপ হয় প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে। কারণ যা-ই হোক না কেন, ব্রেক আপের কষ্ট সামলানো সহজ নয়। বেশিরভাগ মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ব্রেক-আপের সম্মুখীন হন। আপনি যদি নিজেই সঙ্গীর থেকে দূরে সরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলেও তার অনুপস্থিতি আপনাকে কষ্ট দেবে। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করবেন, কাজটা কি ঠিক হলো? আর যদি আপনার সঙ্গীই আপনাকে দূরে ঠেলে দেয় তবে তো কষ্টটা আরো বেশি। মনে হবে, ভুলটা কোথায় ছিলো? এ সময়ের আবেগ হয়ে থাকে বিভ্রান্তিকর। নিজের “এক্স” কে মিস করতে থাকেন আপনি। তার বিভিন্ন কাজ, বিশেষ কোনো কথা মনে পড়তে থাকে। অনেকেই ব্যাপারটাকে মেনে নিতে পারেন না এবং প্রাক্তন সঙ্গীর কাছে আবারো ফিরে যান নতুন করে শুরু করবার আশায়।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্রেক-আপ

২০১১ সালে Proceedings of the National Academy of Sciences এ প্রকাশিত এক স্টাডিতে এমন সব পুরুষ ও নারীর মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয় যারা সম্প্রতিই ব্রেক-আপের শিকার হয়েছেন। গবেষকেরা দুই বার স্ক্যান করেন। তাদের সামনে প্রাক্তন সঙ্গীর ছবি রেখে একবার স্ক্যান করা হয়। এর পর তাদেরকে “noxious thermal stimulation” অর্থাৎ অস্বস্তিকর তাপমাত্রার অনুভূতি দিয়ে স্ক্যান করা হয়। এই গবেষণার তথ্য ছিলো সুস্পষ্ট। এতে দেখা যায়, এই দুই ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক কষ্ট একই রকম। অর্থাৎ প্রাক্তন সঙ্গীর ছবি সামনে আসাটা শারীরিক ব্যাথা পাওয়ার মতোই কষ্টকর।
ব্রেক আপের পর যে শুধু কষ্টই হয় তা নয়। ২০১০ সালে Rutgaers University এর একটি গবেষণায় দেখা যায় মস্তিষ্ক আসলে সঙ্গীকে সহজে ভুলতে পারে না। আমরা বিদায় বলে দিলেও মস্তিষ্ক তা মেনে নিতে পারে না সহজে। এ গবেষণাতেও প্রাক্তন সঙ্গীর ছবি দেখার সময়ে মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়। এ সময়ে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ উদ্দিপিত হয়। একটি অংশ সক্রিয় হয় যা থেকে বোঝা যায় ঐ ব্যক্তি ভাবছিলেন “আমার কি ভুল ছিলো?” অথবা “আমি কি হারালাম?”। এর পাশাপাশি দেখা যায়, তাদের মস্তিষ্কে প্রাক্তন সঙ্গীর প্রতি অনেক টান ছিলো এমনকি বিভিন্ন মাদকের প্রতি আসক্তির মতো সেই সঙ্গীর প্রতিও আসক্তির অনুভূতি দেখা যায়। এসব বিভ্রান্তিকর অনুভূতির কারণে ব্রেক আপ মেনে নেওয়াটা অনেকের জন্যই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রেক আপের বিভিন্ন পর্যায়

মোটামুটি দুইটি পর্যায় দেখা যায় ব্রেক আপের পর। কেউ কদি আপনাকে ছেড়ে চলে যায় তবে এই দুটি পর্যায় বেশি দেখা যায়। প্রথমটি হচ্ছে প্রতিবাদ এবং পরেরটি হচ্ছে হাল ছেড়ে দেওয়া। প্রথম পর্যায়ে আপনি সঙ্গীকে আবার ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবেন। এর পর আপনি যখন বুঝতে পারবেন আপনাদের অতীত সম্পর্কটিতে ফিরে যাবার আর কোনো পথ নেই, তখন আপনি হাল ছেড়ে দেবেন। এ পর্যায়ে আপনি নিজের মানসিক ক্ষত সারিয়ে তোলা শুরু করবেন, তবে এই সেরে ওঠার জন্য অনেকটা সময় লাগতে পারে। এ ব্যাপারটা কেন এতো কঠিন? কারণ ঐ সঙ্গী এবং সম্পর্কের সাথে সাথে আমরা নিজের জীবনের একটি অংশকেই যে হারিয়ে ফেলি। সঙ্গীর সাথে আপনার সম্পর্ক যতটা গভীর, ব্রেক-আপের কষ্টটা ততই বেশি। শোকের সাথেই কেবল তুলনা করা চলে এই কষ্টকে। খুব বেশি গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্রেক আপের কষ্ট ভুলে যেতে এক থেকে দুই বছরের মতো সময় লাগতেই পারে।

ব্রেক-আপের যন্ত্রণা ভুলতে কেন এতো সময় লাগে

বিবর্তনের দৃষ্টি থেকে ব্রেক আপের পর এতো সময় নেওয়াটা আসলে অযৌক্তিক, তাহলে আমার মস্তিষ্ক এই কষ্ট ভুলতে কেন এতো সময় নেই? গবেষকদের মতে, এখানেই ব্রেক আপের পরবর্তী “প্রতিবাদ” পর্যায়ের কার্যকারিতা দেখা যায়। ব্রেক আপ মেনে নিতে না পেরে অনেকে সঙ্গীর সাথে সমঝোতায় যাবার চেষ্টা করেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা আবার সম্পর্কে ফিরে গেছেন। কিন্তু হাল ছেড়ে দেবার ক্ষেত্রে কেন এতো সময় ধরে কষ্ট পায় মানুষ? এর কারণ হলো, আপনার আশেপাশের মানুষ দেখতে পাবে যে আপনি কষ্টে আছেন, আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন এবং এর মাধ্যমে নিজের কাছের মানুশদের সাথে আপানর সম্পর্ক আরো ভালো হয়। আরেকটি কারণ হলো, কিছুটা বিষণ্ণতা আসলে মানুষকে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। এতে অনেক সময় ঐ সম্পর্কের ভুলগুলো বোঝা যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের শোক এবং দুঃখ পার হবার পর সঙ্গীর ব্যাপারে মাঝে মাঝে চিন্তা করাটা আসলে ভালো। প্রথম প্রথম এতে কষ্ট হলেও সময়ের সাথে সাথে সব কষ্টই ভোঁতা হয়ে যাবে। নিজেকে সময় দেওয়াটা এক্ষেত্রে খুব জরুরী। দ্রুতই অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াটা হতে পারে বড় ভুল, কারণ সেক্ষেত্রে আপনার অতীত সম্পর্কের শোক বর্তমান সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর চাইতে পরিবার ও কাছের বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা উপকারি। আপনার হৃদয় ভেঙ্গে গেলেও, ভাঙ্গা টুকরোগুলো জোড়া দেবার মাধ্যমেই ভবিষ্যতে আপনি পেতে পারেন সাফল্য। সূত্র: Yahoo Health