ছবি সংগৃহীত

বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মজার গল্প!

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০১৩, ১৯:১৫
আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০১৩, ১৯:১৫

বিজ্ঞানীরা সব সময়ই গবেষণা করে চলেন নিত্য-নতুন জিনিস উদ্ভাবনের জন্য। সাধারণত গবেষণা বলতে আমাদের চোখে ভেসে উঠে, গবেষণাগারে একজন ব্যক্তি খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে কাজ করে চলেছেন। তার চারপাশে জটিল সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু সব সময় তা হয় না। এমন কিছু উদ্ভাবন আছে যেগুলো খুবই অদ্ভূতভাবে উদ্ভাবিত হয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেরকমই কিছু উদ্ভাবন আর তাদের পেছনের গল্প। (১)পেনিসিলিন আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ সালে Penicillium notatum ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছেন এটা আমরা সবাই জানি। যেটা জানি না সেটা হলো ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে গবেষণা করতে করতে ফ্লেমিং একদিন কাজের মাঝ পথেই কয়েক দিনের জন্য ছুটিতে চলে যান। যাবার আগে তিনি ল্যাবের বেসিনে ভুলক্রমে একটি পেট্রি ডিশ (বিশেষ ধরণের ঢাকনিযুক্ত প্লেট। পরীক্ষাগারে ব্যাক্টেরিয়া কিংবা ছত্রাক জন্মানোর কাজে ব্যবহার করা হয়) অপরিস্কার অবস্থায় ফেলে যান। ফিরে আসার পর ফ্লেমিং দেখতে পান, পুরো পেট্রি ডিশ ব্যক্টেরিয়াতে ভরে গিয়েছে। তবে যেসব জায়গায় ছত্রাক জন্মেছিল সেসব জায়গায় ব্যাক্টেরিয়া বিস্তার লাভ করতে পারে নি। এই ঘটনা থেকে দুটি জিনিস হলো, আমরা পেলাম পেনিসিলিন। আর ফ্লেমিং সাহেবের স্ত্রী ল্যাব পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য একজন গৃহকর্মী খুঁজে বের করলেন!

(২)এনেসথেসিয়া হোরাস ওয়েল ১৮৪৪সালে এই পদ্ধতির উদ্ভাবনকারী। পরীক্ষাগারে রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে অচেতন করে ফেলা হয়। আবার অনেক সময় শরীরের কোন বিশেষ অংশকে সাময়িকভাবে অনুভূতিহীন করে ফেলা হয়। এটাকে বলে এনেসথেসিয়া। এর জন্য ব্যবহার করা হয় নাইট্রাস অক্সাইড বা লাফিং গ্যাস। সে আমলে নাইট্রাস অক্সাইড ছিল পার্টিতে মজা করার একটি অনুষঙ্গ মাত্র। পার্টিতে এই গ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে সবাই হাসিতে লুটিয়ে পড়তো। হোরাসের এক বন্ধু এরকমই এক অনুষ্ঠানে লাফিং গ্যাস একটু বেশিই শুঁকে ফেলেন এবং দুর্ঘটনাক্রমে নিজেই নিজের পায়ে বিরাট এক ক্ষত তৈরি করে ফেলেন। মজার বিষয় হলো, অতিরিক্ত নাইট্রাস অক্সাইড নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণের ফলে তার শরীরের অনুভূতি শক্তি সাময়িকভাবে চলে যায়। ফলে নিজেই নিজের পায়ে ক্ষত তৈরি করে ফেললেও হোরাসের সেই বন্ধুটি কিছুই টের পান নি। এই ঘটনা থেকেই এনেসথেসিয়ার জন্য নাইট্রাস অক্সাইডের ব্যবহার শুরু হয়। (৩)মাইক্রোওয়েভ পার্সি স্পেন্সার ১৯৪৬ সালে আবিষ্কার করেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের একদম শেষ প্রান্তে মার্কিন অস্ত্রনির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রেথিয়ন ম্যাগনিট্রন নামের এক যন্ত্রের বিকল্প ব্যবহার কি হতে পারে তাই নিয়ে গবেষণা করছিল। ম্যাগনিট্রন রাডার যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মাইক্রোওয়েভ বা ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ উৎপন্ন করতো। স্পেন্সার যখন এই যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন এই মাইক্রোওয়েভের কারণে তার পকেটে থাকা চকোলেট বার গলে যেতে শুরু করলো। পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হলো এই মাইক্রোওয়েভ পপকর্ণ ভাজাতেও বেশ কাজে দেয়। তখন পপকর্ণ ভাজা বেশ ঝামেলার কাজ ছিল। পরিবর্তীতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ভাজা পপকর্ণ বিক্রি করে অনেক মানুষ ধনী হয়ে গেল!
(৪)চুইংগাম সময়টা ১৮৭০ সাল। থমাস এডাম নামের এক ভদ্রলোক দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আনা কিছু ‘চিকল’ গাছের রস নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল একে রবারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা। কিন্তু অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও তিনি ব্যর্থ হলেন। হতাশায় বেচারা থমাস সেই রস থেকে তৈরি আঠালো বস্তুটি আনমনেই মুখে নিয়ে চিবুতে শুরু করলেন। ভাবছিলেন কি করা যায়। হঠাৎই তার ঘোরে কেটে গেল। আরেহ! মুখের ভেতর তিনি যে জিনিসটি চাবাচ্ছিলেন সেটি খেতে তো মন্দ না। আসলো নতুন ব্যবসার চিন্তা। ফলে Adams New York No. 1 হচ্ছে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজারজাতকৃত চুইং গাম। (৫)কৃত্রিম উজ্জ্বল বেগুনি রং ম্যালেরিয়া সব সময়ই একটি ভয়াবহ রোগ হিসেবে পরিচিত ছিল। উইলিয়াম পার্কিন নামে এক ব্যক্তি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এর প্রতিষেধক উদ্ভাবনের। সে সময় সিনকোনা গাছের ছাল থেকে প্রাপ্ত কুইনাইন ম্যালেরিয়ার রোগীকে খেতে দেয়া হতো। কিন্তু সেই গাছ খুব সহজলভ্য ছিল না। পার্কিন চেষ্টা করছিলেন পরীক্ষাগারে কৃত্রিম উপায়ে কুইনাইন তৈরি করার। ওষুধ উদ্ভাবন করতে গিয়ে পার্কিন দেখলেন উজ্জ্বল বেগুনি রঙ গবেষণাগারের টেবিলের উপর ছড়িয়ে আছে। পার্কিন ভুলে গেলেন ম্যালেরিয়ার ওষুধ উদ্ভাবনের কথা। তিনি খুলে বসলেন কৃত্রিম বেগুনি রঙ তৈরির কারখানা আর হয়ে গেলেন বিরাট ধনী ব্যক্তি!