ছবি সংগৃহীত

বিদ্রোহী কবির ভূবন থেকে

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০১৬, ১০:৩৪
আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০১৬, ১০:৩৪

(প্রিয়.কম) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ প্রয়াণ দিবস। এ দিনে প্রিয় পাঠকদের জন্য বিদ্রোহী কবির কিছু কবিতা তুলে ধরা হলো।

বিদ্রোহী

বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
বল মহা বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির উন্নত শির।

আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধুর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির!

আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি পথ-সমুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি।
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনান্দ।
আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি' ছমকি'
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি'
ফিং দিয়া দিই তিন দোল্‌;
আমি চপলা-চপল হিন্দোল।
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা',
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর;
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর।
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চির-দূরণ্ত দুর্মদ,
আমি দুর্দম, মম প্রানের পেয়ালা হর্দম্‌ হ্যায় হর্দম ভরপুর মদ।

আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রানী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য;
আমি কৃষ্ণ-কণ্ঠ, মণ্থন-বিষ পিয়া ব্যাথা-বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর-
চির- উন্নত মম শির!

আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক,
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিশ,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ইশান-বিষানে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পানির ডমরু ত্রিশুল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহা শঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব।
আমি প্রাণ-খোলা হাসি উল্লাস,-আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস
আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত,-কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছ্বাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-উর্মির হিন্দোল দোল!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দণ শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখণ,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা, তা'র কাঁকন চুড়ির কন্ কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেনু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি।
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!

আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে,
তাজী বোর্‌রাক্‌ আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে!

আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নিয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া উরে চলি জোর তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সঞ্চারি ভূবনে সহসা সঞ্চারী' ভুমিকম্প।

ধরি বাসুকির ফনা জাপটি-
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি'।
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্,
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম্
মম বাঁশরীর তানে পাশরি
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল-ধ্বংস-ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ঞু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!
আমি ছিন্নমন্তা চণ্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজয় অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ পাতাল-মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!
হাবিয়া দোজখ-সপ্তম নরক, এই নরকই ভীষনতম।


আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম-স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে,

মহা- বিদ্রোহী রণ-কাল্ত,
আমি সেইদিন সব শান্ত,
যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দণ-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন;
আমি স্রষ্টা-সুদন; শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন।

আমি চির-বিদ্রোহী-বীর-
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
                              [অগ্নি-বীণা]




নারী


সাম্যের গান গাই-

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!

বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,

অর্ধেক তার আনিয়াছে নর অর্ধেক তার নারী।

নরক কুন্ড বলিয়া তোমা’ করে নারী হেয় জ্ঞান?

তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,

ক্লীব সে, তাই নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।

এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল

নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-গন্ধ সুনির্মল।

 

তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?

অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।

জ্ঞানের লক্ষী, গানের লক্ষী, শষ্য-লক্ষী নারী,

সুষম-লক্ষী নারীওই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’।

পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ

কামিনী এনেছে যামিনী শান্তি সমীরণ বারিবাহ।

দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস, নিশিথে হয়েছে বঁধু

পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে নারী যোগায়েছে মধু।

শষ্য ক্ষেত্র উর্বর হল,পুরুষ চালাল হাল,

নারী সেই মাঠে শষ্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।

নর বাহে হল, নারী বহে জল,সেই জল মাটি মিশে’

ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে

 

স্বর্ণ-রৌপ্যভার,

নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।

নারীর বিরহে, নারীর মিলনে‌ নর পেল কবি-প্রাণ

যত কথা হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।

নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুঢা,সুঢায় ক্ষুধায় মিলে’

জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।

 

জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নি বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহান।
কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর, লেখা নাই তার পাশে।

কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত বোন দিল সেবা
বীর স্মৃতি স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নি ক জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য শাসন, রাজারে শাসিছে রানী,

রানীর দরদে ধুইয়া গেছে রাজ্যের যত গ্লানি।

 

পুরুষ-হৃদয়হীন,

মানুষ করিতে নারী দিল তারে অর্ধেক হৃদয় ঋণ।

ধরায় যাদের যশ ধরে নাক, অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাদের স্মরণে, করি মোরা উৎসব
খেয়ালের বশে তাদের জম্ম দিয়েছে পিতা
লব কুশ বনে ত্যাজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা!

নারী, সে শিখাল শিশু পুরুষেরে, স্নেহ-প্রেম, দয়া-মায়া
দীপ্ত নয়নে পরল কাজল, বেদনার ঘন ছায়া!
অদ্ভুত রূপে পুরুষ পুরুষে করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে নিয়ে তারে চুমিল যে তারে করিল সে অবরোধ!

তিনি নর-অবতার-

পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি’ কুঠার!

পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর-

নারী চাপা ছিল এতদিন,আজ চাপা পড়িয়াছে নর!

 

সে-যুগ হয়েছে বাসি,

যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক, নারীরা আছিল দাসী!

বেদনার যুগ,মানুষের যুগ, সাম্যর যুগ আজি,

কেহ রহিবেনা বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি!

 

নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে

আপনারি রচা অই কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে।

যুগের ধর্ম এই-

পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই!

শোনো মর্ত্যের জীব!

অন্যরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!

স্বর্ণ-রৌপ্য  অলঙ্কারের যক্ষপুরিতে নারী!

করিল তোমা বন্দিনী, বল, কোন সে অত্যাচারী?

 

আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যকুলতা,

আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নৈপথ্যে কও কথা!

 

চোখে চোখে আজ চাহিতে পারনা; হাতে রুলি,পায়ে মল,

মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙ্গে ফেল ও শিকল!

যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু ঊড়াও সে আবরণ!

দূর করে দাও দাসীর চিহ্ণ, ঐ যত আভরণ!

 

ধরার দুলালী মেয়ে

ফের না ত আর গিরিদরীবনে শাখী-সনে গান গেয়ে।

 

কখন আসল “প্লুটো” যমরাজ নিশিথ পাখায় উড়ে’,

ধরিয়া তোমায় পুড়িল তাহার বিবর-পুরে!

সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই হতে আছ মরি’

মরণের পুরে;নামিল ধরায় সেই দিন বিভাবরী।

 

ভেঙ্গে যম্পুরী নাগিনীর মত আয় মা পাতাল ফূঁড়ি।‘

আধাঁরে তোমায় পতজ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুঁড়ি!

 

পুরুষ-যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও পদাঘাতে

লুটায়ে পড়িবে ও চরণ-তলে দলিত যমের সাথে!

এতদিন শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে,

যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে।

 

সেদিন সুদূর নয়-

যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীর ও জয়।



লিচু চোর



বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।

পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,

ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।

আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!

সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা!




জাতের নামে বজ্জাতি সব


জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া,
ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া।
হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি – ভাব্‌লি এতেই জাতির জান,
তাইত বেকুব, করলি তোরা এক জাতিকে একশ’-খান।
এখন দেখিস ভারত জোড়া পঁচে আছিস বাসি মড়া,
মানুষ নাই আজ, আছে শুধু জাত-শেয়ালের হুক্কাহুয়া।
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া।

জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্ম সম সহন-শীল,
তাকে কি ভাই ভাঙ্‌তে পারে ছোঁয়া ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল!
যে জাত-ধর্ম ঠুন্‌কো এত, আজ নয় কা’ল ভাঙবে সে ত,
যাক্‌ না সে জাত জাহান্নামে, রইবে মানুষ, নাই পরোয়া।
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া।

বলতে পারিস, বিশ্ব-পিতা ভগবানের কোন সে জাত?
কোন্‌ ছেলের তার লাগলে ছোঁয়া অশুচি হন জগন্নাথ?
ভগবানের জাত যদি নাই তোদের কেন জাতের বালাই?
ছেলের মুখে থুথু দিয়ে মার মুখে দিস ধূপের ধোঁয়া।
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া।