
ছবি সংগৃহীত
ফ্যাশনে ফতুয়া
আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৩, ১৫:৫১
"ফতুয়া" শব্দটির কোনও অস্তিত্ব কিন্তু অভিধানে নেই। তবে হাল ফ্যাশনে ফতুয়ার দাপট আছে বেশ জোরেসোরেই। সেই ২০০০ সাল থেকে দেশীয় ফ্যাশনের ঘরানায় প্রবেশ করেছে এই ফতুয়া, এবং ক্রমশ তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে বই কমছে না এতটুকু! ফতুয়া মূলত লোকমুখে প্রচলিত বাঙালির বিশেষ পোশাকের নাম। ফতুয়ার কথা বলতেই যে কারো চোখে রবীন্দ্রনাথের নাটক-গল্পের চরিত্রগুলো ভেসে উঠতেই পারে। আদি সময়ের সেই গোল গলা, সামনে দুটি পকেট আর লম্বাটে ফতুয়া- একটু বয়স্করা যা ঘরে আরাম পেতে পরতেন। যতটা সম্ভব নরম কাপড়ে সাদামাটা ভাবেই তৈরি হতো সেই পোশাক। সেই ঘরোয়া ফতুয়াই ২০০০ সালে এসে পরিণত হলো একেবারে লেটেস্ট ফ্যাশনে। ২০০০-এর শুরু থেকে প্রত্যেক ডিজাইনার ও বুটিক হাউস নানাভাবে ফতুয়ার সেই আদি রূপের শোভাবর্ধন করেছে। ফতুয়ার অলঙ্করণ ও নকশায় এসেছে নানা বৈচিত্র্য। দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। লোকাল মার্কেটে তুমুল চাহিদার কারণে গ্লোবাল মার্কেটেও ছড়িয়ে পড়ে ফতুয়া। এখন প্রবাসী বাঙালিদের মাঝেও তুমুল জনপ্রিয় পোশাক ফতুয়া। জিন্স প্যান্ট কিংবা যে কোনো ট্রাউজারের সঙ্গে চটজলদি পরতে পারার জন্যই ফতুয়ার এতো চাহিদা বেড়েছিল। ইউরোপের সবচেয়ে বড় দোকান যাহ্রা এর শো-রুমেও এখন ফতুয়া চলছে। চীন ও ভারতেও ফতুয়ার অবাধ মার্কেট। ফ্যাশন ডিজাইনাররা জানিয়েছেন, ভারতীয় উপ-মহাদেশে ফতুয়ার উৎপত্তি হলেও বাংলাদেশেই ব্যবহার সবচেয়ে বেশি জিন্স বা গ্যাবারডিনের প্যান্টের সঙ্গে ফতুয়া এখন তরুণ তরুণীদের পছন্দের পোশাক। মেয়েদের ক্ষেত্রে ইদানীং কামিজ ধাঁচের লম্বা ফতুয়ার পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে নানা রকম ফিতা দিয়ে ডিজাইন করা ফতুয়া। অনেকেই দেশীয় সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে ফতুয়ার সাথে ব্যবহার করতে পারছেন ওড়না বা স্কার্ফ। সেটিও জনপ্রিয়তার অন্যতম একটি কারণ। ফতুয়ার কদর মূলত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যেই বেশি হলেও, যারা কর্মজীরী নারী তাঁরাও এসব পরতে পারেন। তাদের সুবিধার্থেই আড়ং বাজারে এনেছে ‘এক্সিকিউটিভ ফতুয়া’। এছেম যুগের হাওয়া বদলের সাথে সাথে ফতুয়াও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সব বয়সী ক্রেতাদের মাঝে। এ কারণে সব বয়সীদের উপযোগী ফতুয়াও প্রস্তুত হচ্ছে দেদার। শুধুমাত্র বয়সভিত্তিক নয়, কার্যপদ্ধতির ওপর নির্ভর করে প্রস্তুত হচ্ছে ফতুয়া। যেমন রাতে শোয়ার জন্য অথবা ঘরে পরে থাকার জন্য সিম্পল কাজ করা অথবা কাজ ছাড়া ফতুয়া মানিয়ে যায় বেশ। আবার রাতের কোন পার্টিতে একটু ডিপ কালারের ফতুয়া আকর্ষণীয় হবে। দিনের বেলাতে বাইরে যাওয়া অথবা ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য হাল্কা কালারের একটু কাজ করা ফতুয়া বেশ মানাবে। এছাড়াও দিবসভিত্তিক অনেক ফতুয়া তো রয়েছেই, যা দিবসগুলোকে আরও অর্থবহ করে তোলে। কোথায় মিলবে আড়ং, কে ক্রাফট, নন্দন কুটির, চিলেকোঠা, দেশাল, কল্পতরু, মেঠোপথ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন বুটিক হাউসে পাবেন এসব ফতুয়া। দরদাম বুটিক হাউস ভেদে ফতুয়ার দামেও রয়েছে পার্থক্য। আড়ংয়ের ফিতাওয়ালা সুতি ফতুয়ার দাম পড়বে ৫৫০-৭৭৫ টাকা। আর সিল্কের ফতুয়ার দাম ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া সুতি কাপড়ের কুর্তির দাম পড়বে ৭৫০-১০০০ ও এক্সিকিউটিভ ফতুয়ার দাম ৬০০-৭৭৫ টাকা। কে ক্রাফটের ফিতাওয়ালা ফতুয়াগুলো পাওয়া যাবে ৬৫০-৯০০ টাকার মধ্যে। ফ্যাশন হাউস চিলেকোঠায় এই ফতুয়ার দাম ৮০০-৯০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া দেশাল, কল্পতরু, মেঠোপথের ফতুয়াগুলোর দামও ৩৫০-৫৫০ টাকার মধ্যে।