ছবিটি রূপক, ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত
(প্রিয়.কম) জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবেই। আর সম্পর্ক থাকলে থাকবে সমস্যা। প্রতিদিন ফেসবুকের ইনবক্সে ও ই-মেইলে আমরা অসংখ্য সম্পর্ক ভিত্তিক প্রশ্ন পাই, যেগুলোর কথা হয়তো কাউকেই বলা যায় না। পাঠকদের করা সেইসব গোপন প্রশ্নের উত্তর দিতেই আমাদের নিয়মিত আয়োজন "প্রিয় সম্পর্ক"। আর সম্পর্ক ভিত্তিক সেই প্রশ্নগুলোর উত্তরে পরামর্শ দিচ্ছেন গল্পকার রুমানা বৈশাখী, এডিটর ইন চার্জ (লাইফ ও সায়েন্স), প্রিয়.কম।
আপনি চাইলে নিজের এমনই কোন একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারেন আমাদের। আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করবো "বাছাইকৃত" কিছু সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত পরামর্শটি দেবার। সমস্যার কথা "বাংলায়" লিখে জানান আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। নাম গোপন রাখতে চাইলে লিখে দেবেন "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক"। আমাদের পেজ লিঙ্ক- https://www.facebook.com/priyolife
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণী মা লিখেছেন নিজের পারিবারিক সমস্যার কথা।
"রুমানা বৈশাখী আপু,প্লিজ আমার নাম প্রকাশ করবেন না।
আমি অনেক নিরুপায় হয়ে আজ লিখলাম। অবশ্য খুব সাধারণ একটা পারিবারিক সমস্যা। কিন্ত আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কী করব। ছোট বেলা থেকেই আমার নিজের মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ, খুবই খারাপ। এক মুহূর্তের জন্য আমাদের মা-মেয়ের বনে না। ছোট বেলায় ভাবতাম তিনি আমার নিজের মা না, কিন্ত বড় হয়ে সে ভুল ভাঙে । তিনি আমাকে সহ্য করতেই পারেন না। এখনো না।
৫ বছর আগে আরেকটা ভুল হয়। মায়ের অত্যাচার থেকে বাচার জন্যে আমি বিয়ে করে ফেলি। এখানে থেকে পড়লাম আরেক বিপদে। আমার শ্বশুর বাড়িতে প্রথমে কেউ আমাকে মেনে না নিলেও পরে মেনে নেয়। কিন্তু মন থেকে নয়। তারা এক ধরনের মেন্টাল অত্যাচার করত সব সময়েই। আমার স্বামী চাকুরীর সুবাদে অন্য শহরে থাকত। এর মধ্যে আমার একটা বাচ্চা হয়। বাবুর যখন ৬ মাস বয়স তখন আমার স্বামী বিদেশে চলে যায়। এর মধ্যে আমার উপর অত্যাচার আরো বাড়ে। শেষ অব্দি নিরুপায় হয়ে বাবার বাড়ি তে চলে আসি। আমার স্বামী ভরন পোষন সব দেয়।
কিন্ত আমার মা আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না। আমি কিছু টাকা তাঁকে দিই, সংসার এর কাজও করে দেই। কিন্ত সব সময় ঝগড়া আর ভালো লাগে না।মায়ের অত্যাচার এর জন্য বিয়ে করলেও আব্বু জানে প্রেম করে বিয়ে করেছি, তাই আব্বু কিছু বলে না।
আমার স্বামীকে বললে বলে হয় বাবার বাড়িতে থাকো, নয় আমাদের বাড়ি তে। কিন্ত আমি আমার স্বামী না আসা পযন্ত ওখানে ফিরে যাব না। আমার বাবুর বয়স তিন বছর। আমি এখন কী করব। আমার স্বামীর দেশে আসার আরো ১৫ মাস বাকি আছে।"
পরামর্শ:
মায়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়াটা শুনতে অস্বাভাবিক মনে হলেও এটা আসলে অসম্ভব কিছু নয়। পৃথিবীতে অনেক পরিবারেই মা-সন্তানের মাঝে দ্বন্দ্ব আছে। কখনো এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের দায় একটি মেয়ের ওপরে চাপিয়ে দেয়ার কারণে, নিজের জীবনের অশান্তির জন্য মা তখন সন্তানকেই দায়ী করতে থাকেন। কখনো এটা হয় মায়ের অতিরিক্ত শাসনের কারণে। কখনো হয় সন্তান মাকে ভুল বুঝলে। এছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। এমনও হতে পারে মা নিজের ব্যক্তিগত হতাশা সন্তানের সাথে খারাপ আচরণ দিয়ে প্রকাশ করেন। আমি জানিনা আপনাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কী, তবে বুঝতে পারছি বিষয়টি বেশ গুরুতর।
হ্যাঁ, হুট করে বিয়ে করে ফেলাটা বেশ বড় রকমের ভুলই হয়েছে। বিশেষ করে ছেলের পরিবারের অসম্মতিতে। যেহেতু নিজের বাড়িতে আপনার সুখ হয়নি, সেহেতু শ্বশুরবাড়ি ছিল শেষ ভরসা। পরিবারের অমতে বিয়ে করে সেই সম্ভাবনাটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যাই হোক, যা হয়ে গেছে সেটা বদল করা যাবেন না। যেটা হতে পারে, সেদিকে মন দিতে হবে।
সবচাইতে ভালো হয়, আপনি একা একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলে। ছোট একটি বাচ্চা নিয়ে কীভাবে একা থাকবেন, এসব ভেবে হয়তো আপনার স্বামী রাজি হবেন না। বা হচ্ছে না। এই অবস্থায় আপনি বাবার বাড়ির একদম কাছে কোথাও বাসা ভাড়া নিতে পারেন বা একই বিল্ডিং এ নিতে পারেন। তাতে নিরাপত্তার ইস্যুটা থাকবে না। নিজের বাসা হলে সবিধা এই যে আপনাকেও শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যেতে হবে না বা স্বামী আবার চলে গেলেও আপনি ভালো থাকবেন। স্বামীকে বোঝান যে আপনার সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হলেও ওর একটা ��ালো পরিবেশে থাকা জরুরী।
সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে আছেন সেভাবেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি মা বাবার সাথে সরাসরি কথা বলুন। খুব সুন্দর করে তাঁদেরকে বুঝিয়ে বলুন যে, আপনি তাদের সন্তান, আপনি তাঁদেরকে অনেক বেশী ভালোবাসেন। খুব বেশিদিন আর এই বাড়িতে থাকছেন না আপনি, স্বামী আসলেই চলে যাবেন। শেষ দিনগুলো মা বাবার সাথে মিলেমিশে থাকতে চান। এতসব ঝগড়ায় আপনার বাচ্চাটা ভয় পাচ্ছে। এই ছোট্ট মানুষটার জন্য হলেও তারা যদি একটু মেনে নেন আপনাকে, আপনি কৃতজ্ঞ থাকবেন।
এর সাথে আরও একটি কাজ করবেন, আম্মার সাথে কখনো পাল্টা ঝগড়া করতে যাবেন না। তিনি মা, শত হলেও মুরব্বি। তিনি দুটি কথা বললেও চুপ করে থাকবেন, পাল্টা জবাব দেবেন না। আপনি চুপ করে থাকলে মাও আশাকরি একসময় বুঝবেন।