
ছবি সংগৃহীত
প্রশ্নোত্তরে হজ ও উমরাহ : প্রবন্ধ :- ০৩ : মীকাত কি? মীকাত কত প্রকার ও কি কি?
আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৪, ১৩:২৮
মীকাত কি? মীকাত কত প্রকার ও কি কি? প্রশ্ন : মীকাত কি? উত্তর : কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত আছে। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে। প্রশ্ন : মীকাত কত প্রকার ও কি কি? উত্তর : ২ প্রকারঃ (ক) সময়ের মীকাত, (খ) স্থানের মীকাত। হজ্জের জন্য সময়ের মীকাত হল শাওয়াল, যিলকদ এবং যিলহজ্জ মাস। অনেকের মতে শাওয়াল মাস থেকে যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত। এ সময়গুলোকে হজ্জের মাস বলা হয়। অপরদিকে উমরার সময় হল বছরের যে কোন মাস, দিন ও রাত। প্রশ্ন : স্থানগত মীকাত কয়টি ও কি কি? উত্তর : ৫টি মীকাত। ১। মদীনাবাসীদের জন্য যুল হুলাইফা ذو الحليفة ২। সিরিয়াবাসীদের জন্য আল-জুহফা الجحفة ৩। নজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল قرن المنازل ৪। ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম يلملم ৫। ইরাকবাসীদের জন্য যাতুইরক ذات عرق প্রশ্ন : বাংলাদেশ থেকে যারা উমরা বা হজ্জে যাবেন তারা কোন স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন? উত্তর : উপরে বর্ণিত চতুর্থ মীকাত ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থান থেকে। আকাশ পথে বিমান যখন উক্ত মীকাতে পৌছে তখন ক্যাপ্টেনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, তখনই ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে। ঢাকা থেকেও ইহরামের কাপড় পরে যাওয়া যায়। তবে নিয়ত করবেন ‘মীকাতে’ পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। মনে রাখতে হবে যে, ইহরাম বাঁধা ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা যাবে না। ইহরাম বাঁধার অর্থ হল ইহরামের কাপড় পরে উমরা বা হজ্জের নিয়ত করা। প্রশ্ন : প্রথম মীকাত (ذو الحليفة) যুলহুলাইফা নামক স্থানটি কোথায়? এখান থেকে কোন কোন এলাকার লোকেরা ইহরাম বাঁধবে? উত্তর : এস্থানটি এখন (أَبيَارِ عَلِيٍّ) ‘আবইয়ারে আলী’ নামে পরিচিত। এটি মসজিদে নববী থেকে ১৩ কিলোমিটার এবং মক্কা শহর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মদীনাবাসী এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে তারা এখান থেকে ইহরাম বাধবে। মক্কা শহর থেকে এটাই সবচেয়ে দূরতম মীকাত। প্রশ্ন : দ্বিতীয় মীকাত (الجحفة) আলজুহফা নামক স্থানটি কোথায়? এখান থেকে কোন দেশের লোকেরা ইহরাম বাঁধে? উত্তর : এ জায়গাটি লোহিত সাগর থেকে ১০ কিলোমিটার ভিতরে (رابغ) ‘রাবেগ’ শহরের কাছে। জুহফাতে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘রাবেগ’ নামক স্থান থেকে এখন লোকেরা ইহরাম পরে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এখন এটি একটি বড় শহর। জম্মুম উপত্যকার পথ ধরে মক্কা শহর থেকে এ স্থানটি ১৮৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম পরিধান করে তা হলঃ (ক) সিরিয়া, (খ) লেবানন, (গ) জর্দান, (ঘ) ফিলিস্তীন, (ঙ) মিশর, (চ) সূদান, (ছ) মরক্কো, (জ) আফ্রীকার দেশসমূহ (ঝ) সৌদী আরবের উত্তরাঞ্চলীয় কিছু এলাকা এবং (ঞ) মদীনার পথ ধরে যারা আসে না তারাও এখান থেকে ইহরাম বাঁধে। প্রশ্ন : তৃতীয় মীকাত (قرن المنازل) ‘কারনুল মানাযিল’ কোথায়? এবং এটা কোন এলাকার লোকদের মীকাত? উত্তর : কারনুল মানাযিল (قَرْنُ الْمَنَازِل) স্থানটি এখন (السيل الكبير) ‘‘সাইলুল কাবীর’’ নামে প্রসিদ্ধ। সরকারী বেসরকারী অফিস আদালতসহ এটি এখন একটা বড় গ্রাম। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। যেসব এলাকা ও দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হলঃ (ক) রিয়াদ, দাম্মাম ও তায়েফ (খ) কাতার (গ) কুয়েত (ঘ) আরব আমীরাত (ঙ) বাহরাইন (চ) ওমান (ছ) ইরাক, (জ) ইরানসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে। প্রশ্ন : কারনুল মানাযিলের অন্তর্ভুক্ত (وادي محرم) ‘‘ওয়াদী মুহরিম’’ নামে ২য় আরেকটি স্থান থেকে লোকেরা ইহরাম বাঁধে। এটি কোথায় এবং কেমন? উত্তর : এটা তায়েফ-মক্কা রোডে ‘হাদা’ এলাকা হয়ে মক্কা শরীফ গমনের পথে মক্কা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে সর্বাধুনিক ও বৃহদাকার মসজিদ, অজু-গোসল ও গাড়ী পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত সুবিধাদি রয়েছে। এটা নতুন কোন মীকাত নয়, এটি কারনুল মানাযিলেরই অংশ বিশেষ। প্রশ্ন : চতুর্থ মীকাত ‘‘ইয়ালামলাম’’ (يلملم) যেখানে বাংলাদেশ থেকে গমনকারী লোকেরা ইহরাম বাঁধে- এটির অবস্থান কোথায় এবং কেমন? উত্তর : ‘ইয়ালামলাম’ শব্দটি একটি উপত্যাকার নাম বলে জানা যায়। এ জায়গাটি মক্কা শরীফ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এলাকাটি السعدية ‘সাদীয়া’ নামেও পরিচিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হলঃ (ক) ইয়ামেন, (খ) বাংলাদেশ, (গ) ভারতবর্ষ, (ঘ) চীন, (ঙ) ইন্দোনেশিয়া, (চ) মালয়েশিয়া, (ছ) দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বের দেশসমূহ। প্রশ্ন : পঞ্চম মীকাতটি কোথায় এবং কি অবস্থায় আছে? উত্তর : পঞ্চম মীকাতটির নাম (ذات عرق) ‘যাতুইরক’। এটা মক্কা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট না থাকায় এটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। এটা ছিল ইরাকবাসীদের মীকাত। তারা এখন তৃতীয় মীকাত ‘সাইলুল কাবীর’ ব্যবহার করে। প্রশ্ন : যেসব এলাকার লোক এসবের কোন একটি মীকাতের ডান বা বাম পাশ দিয়ে যাবে, তারা কোথা থেকে ইহরাম বাঁধবে? উত্তর : নিকটস্থ প্রথম মীকাতের পাশ দিয়ে যখন যাবে তখনই ইহরাম বাধবে। প্রশ্ন : বর্ণিত ৫টি মীকাতের সীমানার ভিতরে যারা বসবাস করে যেমন জেদ্দা, বাহরা, তায়েফ, শরাইয় ও মক্কার মধ্যবর্তী এলাকার বাসিন্দাগণ বা চাকুরীরত বিদেশীরা কোথা থেকে ইহরাম বাঁধবে? উত্তর : হজের জন্য তারা তাদের নিজেদের ঘর থেকেই ইহরাম বাধবে। তাদেরকে মীকাতে যেতে হবে না। প্রশ্ন : মীকাতের ভিতরে ও বাহিরে উভয় জায়গায় যাদের বাড়ী আছে তারা কোথা থেকে ইহরাম বাধবে? উত্তর : যে কোন একটা স্থান থেকেই ইহরাম বাঁধা যাবে। এ বিষয়ে তারা স্বাধীন। প্রশ্ন : মক্কাবাসীগণ কোথা থেকে ইহরাম বাঁধবে? উত্তর : হজের ইহরাম হলে নিজ নিজ ঘর থেকে, আর উমরার ইহরাম হলে মসজিদে তানয়ীমে যাবে অথবা হারামের হুদুদের (সীমানার) বাইরে যে কোন স্থানে গিয়ে বাঁধবে। মক্কায় চাকরীরত বিদেশীরাও তাই করবে। প্রশ্ন : ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করার হুকুম কি? উত্তর : এটা হারাম। তবে শুধুমাত্র চাকুরী, ব্যবসা, চিকিৎসা, পড়াশুনা, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে বেড়ানো বা অন্যকোন কারণে মক্কা শরীফ প্রবেশ করলে ইহরাম বাঁধা জরুরী নয়। কিন্তু ইহরাম পরে উমরা করে নিলে ভাল হয়। দলীলঃ فَهُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ (বুখারী ১৫২৬, মুসলিম ১১৮১) প্রশ্ন : ইহরামের কাপড় পরিধান ছাড়া জেনে বা অজ্ঞতাবশতঃ, সজ্ঞানে, ভুলে বা ঘুমন্ত অবস্থায় মীকাতের সীমানায় ঢুকে পড়লে কি করতে হবে? উত্তর : তাকে অবশ্যই আবার মীকাতে ফিরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে, নতুবা একটি দম দিতে হবে অর্থাৎ একটি ছাগল, বকরী বা দুম্বা জবাই করে মক্কায় গরীবদের মধ্যে এর গোশত বিলি করে দিতে হবে। নিজে খেতে পারবে না। প্রশ্ন : মীকাত পার হওয়ার আগে কী কী কাজ করতে হয়? উত্তর : মীকাতে নিম্ন বর্ণিত কাজ করার বিধান রয়েছে : (১) নখ ও চুল কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া মুস্তাহাব। (২) মুস্তাহাব হলো গোসল করে নেয়া। (৩) সুগন্ধি মাখাও মুস্তাহাব। তবে মেয়েরা সুগন্ধি মাখবে না। (৪) ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ ইহরামের কাপড় পরে উমরা বা হজ্জের নিয়ত করা। এটি ওয়াজিব। (৫) মেয়েদের হায়েয অবস্থায়ও মীকাত পার হওয়ার আগে গোসল করে ইহরাম পরা সুন্নাত। অতঃপর হজ্জ বা উমরার নিয়ত করা। (৬) মুস্তাহাব হলো ফরয সালাতের পর ইহরাম বাঁধা। (৭) দু’রাকআত সালাত (তাহিয়্যাতুল অজু) শেষ হলে নিয়ত করবেন। (৮) অতঃপর তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবে। এটি নীচে দেয়া হলঃ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ - لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ # إِنَّ الْحَمْدَ - وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ - لاَ شَرِيكَ لَكَ অর্থঃ হাজির হয়েছি হে আল্লাহ! তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি হাজির হয়েছি। আমি হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি তোমার কোন শরীক নাই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামত তোমারই এবং রাজত্বও। তোমার কোন শরীক নাই। লেখক : অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম সম্পাদনা : ড. মাওলানা মুহাম্মাদ শামসুল হক সিদ্দিক