
ছবি সংগৃহীত
জেনে নিনঃ ডিজিটাল ওয়ালেট সম্পর্কে ১০টি প্রয়োজনীয় তথ্য
আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৪, ১০:৩৭
একুশ শতকে আমাদের প্রযুক্তি এতোটাই এগিয়েছে যে পশ্চিমা বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে এখন পকেটে মানিব্যাগটির কথা না ভাবলেও চলে। কারণ সেখানে স্মার্টফোনের ডিজিটাল ওয়ালেটেই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমান অর্থ। কিন্তু আমরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকার কারণে ডিজিটাল ওয়ালেট সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনেকটাই ঝাপসা। সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এ প্রকাশ করা হয়েছে ডিজিটাল ওয়ালেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দশটি তথ্য। আজকের আয়োজনে, প্রিয় টেক পাঠকদের জন্য তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলঃ-
১. তিনটি পাওয়ার হাউজঃ
একটি ছোট গ্রুপ অনলাইন ডিজিটাল লেনদেন এ অনেকটাই এগিয়ে আছে। এ গ্রুপটির মধ্যে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা হল ওয়েব জায়ান্ট গুগল, অ্যামাজন, এবং পেপাল। তাদের প্রথম চাওয়া ডিজিটাল বিশ্বের আওতা বাড়ানো। আর এ প্রসঙ্গে গুগল এর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। গুগল এর ওয়ালেট সেবা ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোনে অর্থ সংরক্ষণ করতে দেয় এবং ব্যবহারকারীরা অনলাইনে তা খরচ করতে পারেন। আর নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন প্রযুক্তির সাহায্যে এটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনকে একটি কন্টাক্টলেস কার্ডে পরিণত করেছে। যেসব দোকানে এ পদ্ধতিটি চালু রয়েছে, সেখানে ব্যবহারকারীরা চাইলেই পণ্য কিনে স্মার্টফোনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন।
২. গুগল এর ওয়ালেট কার্ডঃ
কিন্তু যেসব দোকান স্মার্টফোনের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করে না সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা কি করবেন? এক্ষেত্রেও গুগল চালু করেছে এক অভিনব পদ্ধতি। গুগল এমন একটি কার্ড প্রচলন করেছে যার মাধ্যমেও ব্যবহারকারীরা গুগল ওয়ালেটের অর্থ করচ করতে পারবেন। এমনকি, মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে লেন্দেন করা সম্ভব এমন যেকোন জায়গায় কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে।
৩. কয়েন কার্ডঃ
কয়েন কার্ডের লক্ষ্যই হচ্ছে গ্রীষ্মকালের মধ্যে ১০০ ডলারের কয়েন কার্ড ছাড়ার। এটি এমন একটি কার্ড যার মধ্যে অন্যান্য সব কার্ডের সুবিধা থাকবে। এটি ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের পিছনের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপটি স্ক্যান করে নেবে, এরপর কয়েন কার্ডটির পিছনেও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অনুরূপ স্ট্রিপ তৈরি হবে। এতে করে ব্যবহারকারীরা একটি বাটন ক্লিক করার মাধ্যমেই কয়েন কার্ড দিয়ে ডেবিট অথবা ক্রেডিট যে কোন কার্ডের অর্থ খরচ করতে পারবেন।
৪. জ্যাক ডরসি’র স্কয়ারঃ
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির নতুন প্রতিষ্ঠান স্কয়ার নতুন ক্ষুদ্র ব্যবসাকে দাঁড়াতে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে তাদের একটি আনুষঙ্গিক ডিভাইস দেয় যা মোবাইল এর হেডফোন জ্যাকে সংযুক্ত করে ব্যবসায়ীরা কার্ড সোয়াইপ করতে এবং অর্থ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু ডরসির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সব কার্ড সরিয়ে দেওয়া। যেসব ব্যবসায়ী স্কোয়ারের এ কার্ড পদ্ধতিতে অর্থ নিচ্ছেন তারা ক্রেতার ফোন থেকে সরাসরি স্কোয়ার অ্যাপ এর মাধ্যমেও অর্থ নিতে পারবেন।
৫. কেবল আমেরিকাঃ
গুগলের ওয়ালেট কার্ড, কয়েন কিংবা স্কোয়ার সুবিধা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ব্যবহারযোগ্য। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে এখন চিপ অ্যান্ড পিন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যা যথেষ্টই নিরাপদ। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কয়েন কার্ডের মত কার্ড চিপ আন্ড পিন, প্রযুক্তির সাথে টেক্কা দিয়ে থাকতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
৬. দি আই’জেটলঃ (iZettle)
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কিছু প্রতিষ্ঠান চিপ অ্যান্ড পিন প্রযুক্তিতে লেনদেন করে থাকে। যেমনঃ নগরটির আই’জেটল, দোকানগুলোকে আইফোন বা আইপ্যাডের মাধ্যমে লেনদেন করতে দেয়। কিন্তু জটিল প্রযুক্তি হওয়ায় এতে খরচও হয় প্রচুর। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে পেপাল এবং স্কোয়ারের রিডার ফ্রি, সেখানে সুইডেনের আইজেটলের চিপ অ্যান্ড পিন রিডার বাবদ খরচ হয়ে যায় প্রায় একশ’ পাউন্ড।
৭. এনএফসি(NFC) পেমেন্টসঃ
মোবাইলফোনের মাধ্যমে কন্টাক্টলেস লেনদেন পদ্ধতি রাজ্যে ২০১১ সাল থেকে প্রচলিত থাকলেও বিষয়টি ঠিক জনপ্রিয়তা পায়নি। আর তাই কন্টাক্টলেস লেনদেন করা যায় এমন ফোন যুক্তরাজ্যে খুজে পাওয়াটাই বেশ দুস্কর। আর তাই যেসব ডিজিটাল ওয়ালেট যুক্তরাজ্যে প্রচলিত আছে তা সরাসরি ব্যাংকের সাথে যুক্ত।
৮. কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্যোগঃ
পশ্চিমা বিশ্বে বেশিরভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব, হস্তান্তরযোগ্য নয় এমন ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ রয়েছে। তবে ২০১৪ সালে এ রকম টুকরো টুকরো ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ এর কিছুটা অংশের হলেও ইতি ঘটতে যাচ্ছে কারণ ভোডাফোন, ইই এবং ও২ সম্মিলিতভাবে ‘উইভ’ নামে একটি মোবাইল ওয়ালেট সেবা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে ক্রেডিট কার্ডের মত ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করার বিষয়টি প্রচলিত হতে এখনও অনেকটা পথ বাকি।
৯. দি বিট কয়েনঃ
বিটকয়েন ভার্চুয়াল কয়েন হলেও তা আসল অর্থ দিয়ে কেনা যায়, এর আর্থিক মূল্যমান রয়েছে এবং এটি হস্তান্তরযোগ্য ও জনপ্রিয়। অর্থ দিয়ে বিট কয়েন না কিনে কম্পিউটারে জটিল অংক সমাধানের মাধ্যমেও বিট কয়েন আয় করা সম্ভব। অনেক জায়গায় অর্থের পরিবর্তে আবার বিট কয়েনও গ্রহণ করা হয়। আর তাই দৈনিক গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, বিট কয়েনের এই ডিজিটাল আচরণ এটিকে অনেকটা আন্তর্জাতিক মুদ্রার মর্যাদায় পৌছে দিয়েছে।
১০. অপেক্ষা করছে বড় চমকঃ
অনেক টেক বোদ্ধাই সন্দেহ করছেন অ্যাপলেরও এ সংক্রান্ত কোন পরিকল্পনা রয়েছে। তারা একের পর এক বিশ্বকে নিত্যনতুন সব প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে টাচ আইডি, ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার থেকে শুরু করে, ছোট্ট পরিসরে যোগাযোগের জন্য তৈরি করা আইবিকন টেকনোলজি এবং আরও অনেক। তাই যদি টেক জায়ান্টের এরকম কোন পরিকল্পনা থাকে তবে তা নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত এক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।