ছবি সংগৃহীত

ছাদেই করুন শখের বাগান

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৩, ০৫:০৯
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৩, ০৫:০৯

'ল্যান্ডস্কেপ' কথাটার সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। সাধারণত ল্যান্ডস্কেপ বলতে আমরা বুঝি প্রাকৃতিক কোনো দৃশ্যের ছবি বা পেইন্টিং। ল্যান্ডস্কেপ বা ভূদৃশ্য বলতে আসলে বোঝায় পৃথিবীর ওপরের যেকোনোর কিছুর দৃশ্যকে। সেটা প্রাকৃতিকও হতে পারে আবার মানুষের তৈরিও হতে পারে। ল্যান্ডস্কেপ শব্দটার সাথে আমাদের পরিচয় চিত্রকলা বা আলোকচিত্রের মাধ্যমে হলেও শব্দটা স্থাপত্যবিদ্যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনো স্থাপত্য তৈরির আগে ল্যান্ডস্কেপ বা ভূদৃশ্যের কথা মাথায় রেখে তবেই তার ডিজাইন করা হয়। স্থাপত্যকলার ল্যান্ডস্কেপিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গার্ডেনিং বা বাগান। এই বাগান যেকোনো জায়গার বাগান হতে পারে। হতে পারে সেটা কোনো পার্কের, বাড়ির লনে বা ছাদে। মোটকথা, বাগান হলো সুন্দর দৃশ্য তৈরির করার একটা চমত্‍কার মাধ্যম। বাগান করা অনেকেরই শখের বিষয়। বাড়ির পেছনের এক টুকরো জায়গা বা বাড়ির সামনের আঙ্গিনায়, বারান্দার ছোট পরিসরে অথবা খোলা ছাদে- সবখানেই বাগান করা সম্ভব। এর জন্য দরকার আপনার একান্ত ইচ্ছা এবং গাছের নিয়মিত পরিচর্যার জন্য একটুখানি সময়। বাগান করার আগে এ কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন, একেকটি গাছ মানেই একেকটি প্রাণ! যখন বাগান করবেন তখন কিছু প্রাণের দায়-দায়িত্ব থাকবে আপনার হাতে। তাই তাদের দেখভাল ও আদরযত্ন ঠিকঠাক মতো করতে না পারলে সেই দায় কিন্তু আপনার ওপরেই বর্তাবে! নাগরিক জীবনের বহুতল বাড়িতে বাগান করার জন্য আঙ্গিনা বা লনের কথা চিন্তাও করা যায় না। তখন হাতের পাঁচ হিসেবে নির্ভরের জায়গা থাকে ছোট ব্যালকনিটি অথবা ছাদ। ভাড়া বাড়িতে এই ছাদটাও সব সময় পাওয়া যায় না। ছাদের সুবিধা পেলে সেখানে করে ফেলতে পারেন আপনার প্রিয় বাগানটি। বৃক্ষহীন এবং সবুজহীন শহুরে পরিবেশে এই বাগানটাই আপনার প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠবে। ছাদে নানা ধরনের বাগান করা যেতে পারে। হতে পারে সেটা ফলের, ফুলের, সবজির অথবা শুধুই পাতাবাহারের। যেহেতু ছাদে প্রচুর রোদ থাকে তাই কড়া রোদ সহ্য করে টিকে থাকতে পারবে এমন গাছই ছাদের বাগানের জন্য নির্বাচন করুন। যেহেতু ব্যস্ততায় ভরা নাগরিক জীবন, তাই কম পরিচর্যাতেই ভালো থাকবে এমন গাছ ছাদের বাগানে লাগান। আম, পেয়ারা, লিচু, পেঁপে, বরই লেবু ইত্যাদি ফলের গাছে প্রচুর রোদের প্রয়োজন হয়। ক্যাকটাস এবং ক্যাকটাসজাতীয় গাছের যত্ন কম লাগে এবং এসব গাছ মরু অঞ্চলের বলে কড়া রোদ সহ্য করতে পারে। তাই ছাদের বাগানে লাগাতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস। সব ধরনের ফুলের গাছেই পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদের প্রয়োজন হয়। তাই ছাদের বাগানে প্রায় সব ধরনের ফুলের গাছ রাখতে পারেন। যেমন - গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, কসমস, বেলি, রজনীগন্ধা, সন্ধ্যামালতী, কনকচাঁপা, গুজমানিয়া, ব্রাউনিয়া, জুঁই, জবা, ডেইজি, জারবারা, জিনিয়া, নাইটকুইন ইত্যাদি। পুদিনা, বিলাতি ধনিয়া, ঘৃতকুমারীর মতো ঔষধী গাছও শোভা বাড়াতে পারে আপনার শখের বাগানের। নানা ধরনের পাতাবাহার, পাথরকুচি ও অর্কিডও লাগাতে পারেন ছাদে। ছাদ থেকে লতানো গাছ বাড়ির গা বেয়ে নেমে এলে ভীষণ সুন্দর দেখায়। ছাদ থেকে নামিয়ে দেয়ার জন্য লতানো গাছ হিসেবে লাগাতে পারেন অপরাজিতা ফুল। বাগানবিলাস এবং মাধবীলতাও পুরো বাড়িকে ফুলে ফুলে ভরিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলে। ভাইভজাতীয় গাছও ভালো লাগে এক্ষেত্রে। ছাদে বাগান করার জন্য উপযুক্ত গাছের পাশাপাশি যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় তা হলো মাটি। ছাদে মাটি ফেলে বেড় তৈরি করে খুব সহজেই গাছ লাগানো যায়, তবে এতে ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ছাদে গাছ লাগাতে চাইলে তা টবেই লাগানো ভালো। ফলের গাছের জন্য বিশেষভাবে তৈরি সিমেন্টের টব ব্যবহার করতে পারেন। অন্যান্য গাছের জন্য সাধারণ মাটির টবই ব্যবহার করতে পারেন। বাড়তি পানি বের হবার জন্য ছিদ্র রয়েছে এমন টবে গাছ লাগান। ছাদের বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে তাতে কোনো লতানো গাছ তুলে দিন। অথবা বাঁশ বা কাঠের ফ্রেম তৈরি করে তাতে শিকায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন গাছের টব। ক্যাকটাস এবং লতানোগাছ এতে বেশি ভালো দেখাবে। গাছ লাগানোর জন্য মাটির টবের পাশাপাশি বড় শামুক, নারকেলের মালা, কাঠের গুঁড়ি, কাচের জার, বাঁশ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এতে বাগানে একটি শৈল্পিক ভাব ফুটে উঠবে। গাছে নিয়মিত পানি দিন। যে ধরনের গাছে যতটুকু পানি দেয়া দরকার ততটুকুই দিন। ক্যাকটাসজাতীয় গাছে কয়েকদিন পর পর পানি দিন। মাঝে মাঝে পানির সাথে ইউরিয়া মিশিয়ে গাছে প্রয়োগ করুন। তবে জৈব সার হলো গাছের জন্য আদর্শ। গাছের ডালপালা নিয়মিত বর্ষাকালে ছেঁটে দিন। ডাল ছাঁটার জন্য বিশেষ ধরনের কাঁচি ব্যবহার করুন। গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত আলগা করে দিন এবং আগাছা তুলে ফেলে দিন। গাছের গোড়ায় ময়লা বা অতিরিক্ত পানি জমতে দেবেন না। মাঝে মাঝে গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করুন। মরা পাতা গাছ থেকে তুলে ফেলে দিন। গাছের পাতা বা ডালে যেন মাকড়শা ও পিঁপড়া বাসা বাঁধতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। গাছে পানি দেবার জন্য ঝাঝরি ব্যবহার করুন। গাছ আমাদের ইতিবাচক শক্তি প্রদান করে। গাছের যত্ন করে এবং সজীবতায় ভরা একটি বাগান দেখে যে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় তা অতুলনীয়। তাই শখের বশে বাগান করা হলেও তা আমাদের জীবনের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসে।